শিল্পের উদ্বেগ-বার্তায় চাপে মনমোহন
র্থনীতির হাল না শোধরালে নতুন চাকরির ব্যবস্থা করা মুশকিল হয়ে পড়বে বলে এ বার খোদ প্রধানমন্ত্রীর সামনে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিরা। তাঁদের যুক্তি, নতুন চাকরি তো দূরের কথা, পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে কর্মী ছাঁটাইয়ের পথেও হবে বিভিন্ন সংস্থাকে।
লোকসভা নির্বাচনের আগে কী ভাবে নতুন বিনিয়োগ টেনে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা যায়, তা নিয়ে আজ ওই শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মনমোহন সিংহ। শেষ পর্যন্ত তাঁদের কথাই সত্যি হয়ে উঠলে ভোটের আগে সরকারের রক্তচাপ বাড়তে বাধ্য। কারণ ইউপিএ সরকার যতই গোটা বিশ্বের আর্থিক মন্দাকে দায়ী করুক না কেন, প্রধান বিরোধী দল কিন্তু মনমোহন সিংহের নীতিগত ব্যর্থতাকেই এর জন্য দায়ী করে মাঠে নেমে পড়েছে।
মুকেশ অম্বানী, নারায়ণমূর্তি, আজিম প্রেমজি, দীপক পারেখ, চন্দা কোছার, সুনীল মুঞ্জল, অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো প্রথম সারির শিল্পপতিরা আজ মনমোহনের সামনে কোন কোন বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করবেন, তা অবশ্য আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কর্তারা। এক তো কারখানায় উৎপাদনের গতি শ্লথ হয়েছে। তার উপরে ডলারের তুলনায় টাকার দাম পড়তে থাকায় সব সংস্থাকেই তার ফল ভুগতে হচ্ছে। গাড়ি থেকে শুরু করে বিমান, তেল থেকে সার সব ক্ষেত্রেই এর ধাক্কা লেগেছে। আমদানি করা কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের খরচ বেড়ে গিয়ে লাভের অঙ্ক কমছে। সেই সঙ্গে রয়েছে চালু খাতার বা বিদেশি মুদ্রার আয়-ব্যয়ের ঘাটতি। প্রধানমন্ত্রীর সামনে তাই আজ এই ঘাটতির উপরে লাগাম পড়ানোর দাবি উঠেছে। সুদের হার কমানোর দাবি নিয়ে সরকারের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, টাকার পতন রুখতে গিয়ে সুদের হার কমানো সমস্যা হচ্ছে। শিল্পমহলেরও বক্তব্য, সুদের হার কমালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। প্রথা ভেঙে আজ অবশ্য শিল্পমহলের সামনে বাঁধাধরা কোনও বক্তৃতা দেননি মনমোহন। বরং এইসব পরামর্শের উপর ভিত্তি করে আগামী তিন মাসে কী কী নীতিগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তার জন্য এক মাসের মধ্যে একটি রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী। সোমবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: এএফপি।
এ দিন সব থেকে উদ্বেগের কথা শুনিয়েছে ফিকি, সিআইআই এবং অ্যাসোচ্যামের মতো বণিকসভাগুলি। ফিকি-র সভানেত্রী তথা এইচএসবিসি ব্যাঙ্কের ভারতীয় প্রধান নয়না লাল কিদোয়াই মনে করছেন, নতুন লগ্নি এবং শিল্পে উৎপাদনের গতি কমে আসায় কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়বে। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুনে যে পরিমাণ নতুন বিনিয়োগ হয়েছে, তা গত বছরের এই সময়ের লগ্নির মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ। এ দিকে প্রতি বছর নতুন ১ কোটি নতুন কর্মী চাকরিতে যোগ দেয়। শিল্পের গতি শ্লথ হয়ে এলে এত নতুন চাকরি তৈরি হবে না। এই অবস্থায় কিদোয়াইয়ের মতো অনেকেরই বক্তব্য, ইতিমধ্যেই বহু সংস্থায় অস্থায়ী কর্মী ছাঁটাই চলছে। নতুন লগ্নি না হলে, পরিস্থিতি না শোধরালে স্থায়ী কর্মীদের উপরেও প্রভাব পড়বে।
কিন্তু কী ভাবে পরিস্থিতি শোধরাবে? আইটিসি সংস্থার প্রধান ওয়াই সি দেবেশ্বর ক’দিন আগেই মত দিয়েছেন, মূল্যবৃদ্ধি, রাজকোষ ঘাটতি এবং চালু খাতার লেনদেনের ঘাটতি এই তিনটিকেই লাগাম পড়ানোর দীর্ঘমেয়াদি উপায় খুঁজতে হবে। সিআইআই সভাপতি এস গোপালকৃষ্ণন দাবি করেছেন, আর্থিক বৃদ্ধির হারকে ৮ শতাংশে নিয়ে যেতে হলে সরকারকে নীতিগত স্তরেই আরও অনেক কিছু করতে হবে। তাঁর মতে, শুধু আমদানি কাটছাঁট করে বিদেশি মুদ্রার লেনদেনের ঘাটতি কমানো যাবে না। জাতীয় উৎপাদন নীতি দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানিয়ে গোপালকৃষ্ণন বলেন, “যে সব শিল্প ভারতের বাজারের চাহিদা পূরণ করে সেগুলি যাতে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিয়ে রফতানির বাজার ধরতে পারে, সেগুলিকে উৎসাহ দিতে হবে।” একই সঙ্গে ভর্তুকি কাটছাঁট করে রাজকোষে ঘাটতির অঙ্ক কমানোরও দাবি উঠেছে। অ্যাসোচ্যামের সভাপতি রাণা কপূর বলেন, “সরকার বলছে সোনার আমদানি অনেকটা কমানো গিয়েছে। কিন্তু ডিজেল ও রান্নার গ্যাসেও ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে দেওয়া প্রয়োজন।”
কিন্তু প্রশ্ন হল, ভোটের বছরে এই সব তেতো দাওয়াই আম-জনতার নাপসন্দ হলে তাতেও বিপাকে পড়বে কংগ্রেস। ফলে মনমোহন কার্যত এখন শাঁখের করাতে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.