সারি সারি কফিন। কোনওটার পাশে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাবা-মা। কারও ক্ষেত্রে কাঁদারও কেউ নেই। পুরো পরিবারটাই এক সঙ্গে শেষ হয়ে গিয়েছে। রবিবার গভীর রাতে দক্ষিণ ইতালির নেপলসের কাছে অ্যাভেলিনোর ঘটনা। সেখানে যাত্রী বোঝাই বাস খাদে পড়ে যাওয়ায় অন্তত ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে বেশ কয়েকটি শিশু রয়েছে। স্পেনের ট্রেন দুর্ঘটনার মতো এ ক্ষেত্রেও চালকের বিরুদ্ধেই বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, মৃতদের মধ্যে বাসের চালকও রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, নেপলস থেকে ছাড়ার সময়ে বাসটি ঠিকঠাকই চলছিল। অ্যাভেলিনোর কাছে এ১১৬ অটোস্ট্রাডা নামে একটি হাইওয়ে রয়েছে। সেখানে ট্র্যাফিকের ভিড় থাকার জন্য সাইনবোর্ডে ধীরে গাড়ি চালানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছিল। সিগনাল না থাকায় গাড়ি থেমেছিল। কিন্তু হঠাৎই বাসটি গতিবেগ বাড়িয়ে দেয়। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলোকে ধাক্কা দিয়ে রেলিং ভেঙে একেবারে ১০০ ফুট নীচের খাদে পড়ে যায় বাসটি। |
কফিনবন্দি দেহের সামনে ভেঙে পড়ছেন শোকার্ত পরিজনেরা। ছবি: এএফপি। |
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, সপ্তাহান্তে ছুটি কাটাতে ওই বাসে করে বেড়াতে গিয়েছিলেন জনা পঞ্চাশেক পর্যটক। তাঁদের বেশির ভাগই নেপলসের বাসিন্দা। এ দিন সম্ভবত তাঁরা ক্যাথলিকদের তীর্থস্থান পাদ্রে পিও থেকে আসছিলেন। ঘটনার পর অন্ধকারে উদ্ধারকাজ শুরু হতেই দেরি হয়ে যায়। দমকলকর্মী এমিলিও মাতারাজ্জো বললেন, “যে জায়গায় বাসটা পড়েছিল সেখানে ঘন জঙ্গল। অন্ধকারে কিছু দেখতে পারছিলাম না। শুধু শুনতে পাচ্ছিলাম বাসের ভেতর থেকে বাচ্চাদের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। আর বাইরে থেকে সন্তানদের খোঁজে নাম ধরে ডেকে যাচ্ছেন বাবা-মা। পরে আলোর ব্যবস্থা করা হলে দেখলাম একেবারে দলা পাকিয়ে গিয়েছে বাসটা।” উদ্ধারকর্মীরা পরে বাসের ভিতর থেকে ৩৮ জনের দেহ উদ্ধার করেন। তাঁদের দেহ উদ্ধার করার পরেই ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। ১১ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, স্বাভাবিকের থেকে অনেক দ্রুত গতিতে বাসটি চলছিল। অনেকে আবার জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার আগে বাসের টায়ার ফাটার মতো শব্দ শোনা গিয়েছিল। ১০ বছরের আরিয়ানার সেপ্টেম্বরে স্কুল খুলছে। তার আগে তাই ঠাকুমার সঙ্গে ছুটি কাটাতে ওই অভিশপ্ত বাসে করে বেরিয়েছিল। দলা পাকানো বাসের তলা থেকে জীবন্ত উদ্ধার করা হয়েছে আরিয়ানাকে। মাথায়-হাতে-পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সে বলল, “ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ জোরে একটা ঝাঁকুনি। অন্ধকারে কিচ্ছু বুঝতে পারলাম না। জানি না ঠাকুমা এখন কোথায়।” দুর্ঘটনার পর থেকে আরিয়ানার ঠাকুমার কোনও খোঁজ নেই।
অন্য দিকে খাদে পড়ার আগে ভিনসেঞ্জো ডি অ্যানিলিওর গাড়িতে ধাক্কা মারে বাসটি। দুর্ঘটনার পরে এখনও ঘোর কাটেনি তাঁর। অ্যানিলিওর কথায়, “হঠাৎ দেখলাম মাথার উপর দিয়ে একটা ফিয়াট গাড়ি উড়ে সামনে এসে পড়ল। কিছু বোঝার আগেই আমার গাড়িটাতে জোর ধাক্কা। আমার কাকিমার হাত ভেঙেছে। কিন্তু আমার কিছু হয়নি।” চালক ব্রেক ফেল করেছিল বলেই মনে করছেন অ্যানিলিও। বেশ কয়েকটা গাড়িতে ধাক্কা মেরেছিল বাসটি। তাতে কেউ আহত হয়েছেন কি না এখনও জানা যায়নি। তদন্ত শুরু হয়েছে। |