শক্ত ঘাঁটিতেই ধরাশায়ী হল কংগ্রেস।
কাটোয়ায় কংগ্রেসের হাতছাড়া হল পাঁচটি পঞ্চায়েত। সালানপুরে হাত থেকে গেল সাতটি পঞ্চায়েত, এমনকী পঞ্চায়েত সমিতিও।
কাটোয়ায় কংগ্রেসের দখলে থাকা চারটি পঞ্চায়েত ছিনিয়ে নিয়েছে সিপিএম। কাটোয়া ১ পঞ্চায়েত সমিতিও আসন বাড়িয়ে নিজেদের দখলে রেখে দিল বামেরা। কাটোয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতিও ছিল তাদের হাতে। তবে এ বার তা ত্রিশঙ্কু হয়ে পড়েছে।
২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে কাটোয়া ১ ও ২ ব্লকে এলাকার ১৬টি পঞ্চায়েতের মধ্যে কংগ্রেস ৯টিতে ক্ষমতায় এসেছিল। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল পঞ্চায়েত সমিতিতেও। এ বার পঞ্চায়েত ভোটের ফল বেরোতে দেখা গেল, কাটোয়া ১ ব্লকে কোশিগ্রাম, গোয়াইতে ফের ক্ষমতায় এসেছে সিপিএম। গিধগ্রাম পঞ্চায়েত কংগ্রেসের থেকে গিয়েছে তৃণমূলের হাতে। সরগ্রাম পঞ্চায়েত সিপিএমের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। |
কাটোয়া ২ ব্লকে জগদানন্দপুর পঞ্চায়েত কংগ্রেস ধরে রেখেছে। ১৫ বছর পরে পলসোনা পঞ্চায়েত দখলে নিয়েছে সিপিএম। একই ভাবে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের দখলে থাকা শ্রীবাটিও ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। এই ব্লকের সিঙ্গিগ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল হারিয়েছে বামেদের।
অর্থাৎ, কাটোয়ার দু’টি ব্লকেই তৃণমূল তাদের শক্তি বাড়িয়েছে। কাটোয়া বিধানসভা এলাকাতেও তৃণমূল নতুন করে একটি পঞ্চায়েত দখল করেছে। আর সেখানে কংগ্রেস হারিয়েছে পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত। কাটোয়া ১ ব্লকের আলমপুর ও সুদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে জোট করেও সিপিএমের আসন সংখ্যা টপকাতে পারেনি কংগ্রেস-তৃণমূল।
প্রাথমিক ভাবে কংগ্রেস মেনে নিচ্ছে, তাদের ফল ভাল হয়নি। তাদের দাবি, কাটোয়া ১ ব্লকের কোশিগ্রামে
|
উচ্ছ্বাস। সোমবার বারবনিতে। |
পঞ্চায়েতে সিপিএম যে দশটি আসন জিতেছে, তার মধ্যে অন্তত ৮টি আসন তৃণমূলের ‘সৌজন্যে’ হারতে হয়েছে কংগ্রেসকে। কাটোয়া ২ ব্লকের পলসোনা, শ্রীবাটি পঞ্চায়েতে হারের পিছনেও কংগ্রেস ভোট কাটাকাটিকেই দায়ী করেছে। ওই দুই পঞ্চায়েতে তৃণমূল ভাল ভোট পেয়েছে। তবে গোয়াই পঞ্চায়েত ভোট কাটাকাটি ছাড়াই দখল করেছে সিপিএম।
সিপিএমের কাটোয়া জোনাল সদস্য কমল ঠাকুর বলেন, “গোয়াই ও কোশিগ্রাম ঐতিহ্যগত ভাবে বামেদের। ২০০৮ সালে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির সময়ে মানুষ ভুল বুঝে আমাদের পাশ থেকে সরে গিয়েছিলেন। এ বার ফের আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।” তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি (গ্রামীণ) কাঞ্চন মুখোপাধ্যায় এই ফলে খুশি। তিনি বলেন, “গত বারের চেয়ে আমাদের শক্তি অনেকটাই বেড়েছে। কংগ্রেস ছেড়ে মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছেন, তা ফলেই পরিষ্কার।” কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কেন এ রকম ফল হল খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
গত বার সালানপুরে ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছিল ৮টি। এ বার দখল করেছে মাত্র একটি পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েত সমিতিতে গত বার ১৯টির মধ্যে ১৪টি আসন পেয়েছিল তারা। এ বার ২৩টির মধ্যে চারটি পেয়েছে আসন। এই পঞ্চায়েত সমিতিতে এ বার ১১টি আসনে জিতেছে বামফ্রন্ট, আটটিতে তৃণমূল। |
ভাতারে জখম বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থী। |
কংগ্রেসের প্রদেশ সদস্য তথা সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সহ-সভাপতি শ্যামল মজুমদারের ব্যাখ্যা, “এ বার বাম বিরোধী ভোট দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। তাই আমরা সুবিধা করতে পারিনি।” সিপিএমের বারাবনি জোনাল সম্পাদক অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “সালানপুরের বেশ কিছু জায়গায় তুলনামূলক ভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। মানুষ আমাদের ভোট দিতে পেরেছেন।” তৃণমূলের ব্লক সভাপতি ধরম কর্মকার বলছেন, “মানুষ কংগ্রেসকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা এ বার এই ব্লকে প্রথম একক ভাবে লড়েছি এবং আটটি পঞ্চায়েত সমিতির আসন দখল করেছি। ভাল ফল করেছি পঞ্চায়েতেও।”
|