বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখার অভিযোগ নিয়ে বিবাদ বেধেছিল রোগীদের পরিজন ও জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে। সেই সময়ে জরুরি বিভাগে আটকে রেখে এক অ্যাম্বুল্যান্স চালককে মারধরের অভিযোগে মামলা দায়ের হল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তিন জুনিয়র ডাক্তারের বিরুদ্ধে। গত ২০ জুলাই ওই অ্যাম্বুল্যান্স চালকের বাবা শেখ আনার আদালতে অভিযোগ করেন। আদালত পুলিশকে ওই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেয়। ওই ঘটনায় প্রায় কুড়ি জন জুনিয়র ডাক্তার ও হাউসস্টাফ জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ।
গত বুধবার দুপুরে জামালপুরের আঝাপুরের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাড়ি নয়ানজুলিতে উল্টে গেলে জখম হন তিন জন। তাঁদের উদ্ধার করে স্থানীয় মানুষজন বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠান। সেই সময়েই পেটের যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন পূর্বস্থলীর সমুদ্রগড়ের এক বাসিন্দা। এই চার জনকেই বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। শেখ আনার অভিযোগ করেন, অ্যাম্বুল্যান্সে রোগী নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন তাঁর ছেলে আশিক শেখ। তখনই গোলমাল শুরু হয়। রড, লাঠি নিয়ে কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তার দৌড়দৌড়ি করছিলেন। শেখ আনার আদালতে অভিযোগ করেন, রোগী ভর্তি করানোর জন্য জরুরি বিভাগের কাউন্টারে দাঁড়িয়ে ছিলেন আশিক। তাঁকে মারধর করা হয়। প্রতিবাদ করলে জরুরি বিভাগের ভিতরে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়। তাঁর স্ত্রী রসিনা বিবি খবর পেয়ে হাসপাতালে গেলে তাঁর উদ্দেশ্যে অশালীন অঙ্গভঙ্গি ও শ্লীলতাহানি করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা, অভিযোগ শেখ আনারের। |
ওই ঘটনার পরে জুনিয়র ডাক্তারের পুলিশ ডেকে তাঁদের উপরে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। জুনিয়র ডাক্তারদের উপরে হামলার অভিযোগে শেখ আশিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি এখন জেল হাজতে রয়েছেন। শেখ আনারের দাবি, মারের চোটে তাঁর ছেলের পাঁজর, মেরুদণ্ড, হাতের নানা জায়গায় রক্ত জমে রয়েছে। তিনি নড়তে পারছেন না।
ছেলে গ্রেফতার হওয়ার পরে গত শনিবার শেখ আনার বর্ধমানের সিজেএম আদালতের এজলাসে জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে তাঁরক ছেলেকে খুনের চেষ্টা ও স্ত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেন। আদালত পুলিশকে ওই অভিযোগ এফআইআর হিসেবে গণ্য করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। বর্ধমান থানা সূত্রে খবর, অভিযোগে যে তিন জুনিয়র ডাক্তারের নাম রয়েছে তাঁরা হলেন সৌরভ সরকার, মধুসূদন শর্মা ও নিবারণ রায়।
বছরখানেক আগে রোগীর পরিবারের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের গোলমালের ছবি তুলতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন চিত্র সাংবাদিকেরা। সেই ঘটনায় অভিযুক্ত জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। এ বারের ঘটনায় অবশ্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বর্ধমান থানা জানায়, অভিযুক্ত তিন জন যাতে পুলিশের কাছে অবিলম্বে আত্মসমর্পন করেন, সে জন্য মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে আবেদন করা হবে। তার পরেও তাঁরা আত্মসমর্পণ না করলে দরকার হলে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলে গিয়ে তিন জনকে গ্রেফতার করা হবে বলে পুলিশ জানায়।
মেডিক্যাল কলেজের সহ-অধ্যক্ষ তথা হাসপাতালের সুপার অসিতবরণ সামন্ত বলেন, “পুলিশের কাজ পুলিশ করবে। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার থাকতে পারে না।”
|