ক্যানসারে আক্রান্ত পড়ুয়ার সাহায্যে রাস্তায় সহপাঠীরা
লেজ, নতুন বই, বন্ধু— সব কিছু এ ভাবে থমকে যাবে ভাবতে পারেনি রাহুল।
বাণিজ্য বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে তোড়জোড় শুরু হয়েছিল কলেজে ভর্তি হওয়ার। অনলাইনে ফর্ম পূরণও শুরু করেছিল ছেলেটি। কিন্তু হঠাত্‌ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। দরকার হয় অস্ত্রোপচারের। চিকিত্‌সা শুরু হতেই জানা যায়, ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে আসানসোলের ইসমাইল লাগোয়া ইন্দ্রপ্রস্থ এলাকার রাহুল ঠাকুর।
মাথায় বাজ পড়ে তার বাবা পেশায় ক্ষৌরকর্মী রাজরূপ ঠাকুরের। অল্প আয়ে কীভাবে ছেলের চিকিত্‌সা করাবেন আর কীভাবেই বা সংসার চালাবেন ভেবে পান না তিনি। আর তখনই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন রাহুলের গৃহশিক্ষক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে এগিয়ে আসেন অন্যান্য শিক্ষক ও ছাত্রেরাও। পাড়াঘরে ঘুরে ঘুরে রাহুলের চিকিত্‌সার টাকা জোগাড় করতে শুরু করেন তাঁরা।
অন্য স্কুলে গিয়ে সাহায্য সংগ্রহ করছেন রাহুলের শিক্ষকেরাও। ছবি: শৈলেন সরকার।
রাজরূপবাবু জানান, একেই এক দিক ঢাকতে সংসারের আরেক দিক আলগা হয়ে যায়। তার উপর ছেলের এই রোগ। কী করবেন বুঝতে না পেরে তিনি যোগাযোগ করেন ছেলের গৃহশিক্ষক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তাঁর উপরেই ভরসা করে ছেড়ে দেন সবটা। কিন্তু তারপরে আর ভাবতে হয়নি। অল্পদিনের মধ্যেই চিকিত্‌সা শুরু হয়ে যায় রাহুলের। আপাতত কলকাতার চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালে চিকিত্‌সা চলছে তার।
আসানসোলের ইস্টার্ন রেলওয়ে স্কুলের শিক্ষক সুব্রতবাবু জানান, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। সবটাই দিয়েছেন স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও কয়েকজন ঘনিষ্ঠ। তবে আরও প্রায় দেড় লক্ষ টাকার দরকার। সুব্রতবাবু বলেন, “এই টাকাটা জোগাড় করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই কয়েকজন ছাত্রকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে শিক্ষক ও ছাত্রদের কাছে সাহায্য চাইছি। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে সাহায্য নিচ্ছি। এক দুঃস্থ মেধাবী ছাত্রের জীবন বাঁচাতে মানুষের দরজায় ঘুরতে কোনও সঙ্কোচ করছি না।” অকাতরে সাহায্যও করছেন আশপাশের সবাই। রাহুল যে স্কুলের ছাত্র সেখানকার শিক্ষক না হলেও সুব্রতবাবুর উদ্যোম দেখেই এগিয়ে এসেছেন অন্যান্য শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীরা। তিনি জানালেন, স্কুলে যাওয়ার আগে সকালে দেড় ঘণ্টা আর স্কুল থেকে ফিরে দেড় ঘণ্টা সময় দিচ্ছেন এই কাজে। তাঁর এক সহকর্মী সঞ্জয় চৌধুরী বলেন, “মানুষের সাড়া পাচ্ছি। বিশেষ করে স্কুলের ছাত্ররা এগিয়ে আসায় আমরা আপ্লুত। বন্ধুই তো বন্ধুর পাশে দাঁড়ায়। ওরা অনেকের চোখ খুলে দিয়েছে।” সাহায্যে এগিয়ে এসেছে ছাত্ররাও। অষ্টম শ্রেণির বিক্রম রায় বলে, “ওই দাদাটাকে চিনি। ওকে ভালো করে তুলতে পারলে আমাদের ভাল লাগবে।” দরকার পড়লে আরও অনেক দূর পর্যন্ত হেঁটে অর্থ সংগ্রহ করবে বলেও জানিয়েছে ছাত্ররা। এই কাজে প্রত্যক্ষ জড়িয়ে না থাকলেও পরোক্ষে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সুব্রতবাবুর সহকর্মী বিশ্বনাথ মিত্র। তিনি বলেন, “সমাজটা যে পুরোপুরি স্বার্থপর হয়ে যায়নি ওরা তা প্রমাণ করছে।”
আর যাকে সুস্থ করে তুলতে এত কিছু আপাতত বিছানায় শুয়ে দিন কাটছে তার। সবসময় কাছে রয়েছেন মা উষাদেবী। সবার সাহায্যের কথা জেনে মুখ ফুটে কিছু বলে উঠতে পারে না রাহুল। শুধু কৃতজ্ঞতা ভরা চোখটা চিকচিক করে ওঠে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.