যার থাবা থেকে মানসম্ভ্রম বাঁচাতে তিনি দিল্লি-হাওড়া জনতা এক্সপ্রেসের জানলা দিয়ে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, সেই দুষ্কৃতীর চেহারার বিবরণ দিলেন তরুণী। তাঁর কথা শুনে দুষ্কৃতীর ছবি আঁকিয়েছে রেল পুলিশ। মঙ্গলবার কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে রেল পুলিশের এক মহিলা অফিসার ওই তরুণীর সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেন। তরুণীর বয়ানও রেকর্ড করা হয়। ওই ঘটনার তদন্তে সিআইডি-র সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে বলে জানান রেল পুলিশের কর্তারা।
রেল পুলিশের এডিজি অমর সরকার এ দিন বিকেলে হাওড়ার রেল পুলিশের সুপারের (এসআরপি) অফিসে যান। সেখানে এসআরপি মিলনকান্ত দাস, প্ল্যাটফর্ম ইনস্পেক্টর এবং হাওড়া থেকে আসানসোল পর্যন্ত সব জিআরপি থানার ওসি-দের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। পুলিশি সূত্রের খবর, ওই সব থানা এলাকায় রেল সংক্রান্ত অপরাধের বিভিন্ন ঘটনায় যে-সব দুষ্কৃতীর নাম আছে, তাদের ছবি-সহ তালিকা তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট ওসি-দের নির্দেশ দিয়েছেন অমরবাবু। এ দিন যে-ছবি আঁকা হয়েছে, তার সঙ্গে তালিকাটি মিলিয়ে দেখা হবে।
রেল পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন জিজ্ঞাসাবাদে ওই তরুণী জানিয়েছেন, যে-যুবকটি তাঁর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করছিল, তার পরনে ছিল লুঙ্গি ও জামা। সে হিন্দিতে কথা বললেও তাতে ভুল ছিল, উচ্চারণ ঠিক ছিল না। তাই তরুণীর মনে হয়েছে, হিন্দি ওই যুবকের মাতৃভাষা নয়। রেল পুলিশের মহিলা অফিসারকে ওই তরুণী জানান, ব্যান্ডেলের কয়েকটা স্টেশন পরে ট্রেনে উঠেই ওই যুবক জানলা বন্ধ করতে শুরু করে। তরুণী প্রতিবাদ করায় সে তাঁর উল্টো দিকের আসনে এসে বসে। তরুণীকে জিজ্ঞাসা করে, ‘কোথায় যাবে?’ তরুণী উত্তর না-দিয়ে ফোনে বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করতেই যুবকটি রেগে গিয়ে আক্রমণ করে তাঁকে। তাঁর মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে।
আসানসোলের বাসিন্দা ওই তরুণী কর্মক্ষেত্র কলকাতায় ফেরার জন্য রবিবার দিল্লি-হাওড়া জনতা এক্সপ্রেসের মহিলা কামরায় উঠেছিলেন। বিকেলে নির্জন কামরায় দুষ্কৃতী হামলা করায় বেলুড় স্টেশনের কাছে জানলা দিয়ে ঝাঁপ দেন তিনি। এখনও দুষ্কৃতীকে ধরা গেল না কেন?
এডিজি (রেল পুলিশ) অমরবাবু বলেন, “তেমন কোনও সূত্র মেলেনি। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে সিআইডি-র সহযোগিতা চেয়েছি। হাওড়া সিটি পুলিশও তদন্ত করছে।”
কয়েকটি বিষয়ে ধন্দে রয়েছেন তদন্তকারীরা। তার মধ্যে আছে: • ব্যান্ডেলের পরে কোন স্টেশন থেকে ওই দুষ্কৃতী ট্রেনে উঠেছিল? • ট্রেনের গরাদহীন আপৎকালীন জানলা দিয়ে দেহের অনেকটা বার করে তরুণী যখন ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছিলেন, ওই যুবক তখন কী করছিল? • তরুণী ঝাঁপ দেওয়ার পরে দুষ্কৃতী কি বেলুড়েই নেমে পড়েছিল, নাকি অন্য কোনও স্টেশনে নেমেছিল? উত্তর খুঁজছে পুলিশ।
কেমন আছেন তরুণী?
কলকাতার যে-বেসরকারি হাসপাতালে ওই তরুণী ভর্তি আছেন, সেখানকার সিইও প্রদীপ টন্ডন বলেন, “মেয়েটি সুস্থ। স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়া করছেন। কথাবার্তাও বলছেন। আশা করি, বৃহস্পতিবার ওঁকে ছুটি দেওয়া যাবে।” ওই তরুণীর দাদা বলেন, “বোন মানসিক শক্তি ফিরে পাচ্ছে। কিছুটা হলেও ওর এবং আমাদের ভয় রয়েছে। কেননা অপরাধী তো এখনও ধরা পড়েনি। বোনকে তো ওই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে হবে। তবে এর জন্য বোন চাকরি ছাড়বে না।”
|