নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু আতঙ্ক কাটেনি দিল্লি-হাওড়া জনতা এক্সপ্রেস থেকে ঝাঁপ দেওয়া তরুণীর। তাই তাঁকে ঠিকঠাক জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারছেন না তদন্তকারীরা। ফলে ঘটনার এক দিন পরেও তদন্তে বিশেষ অগ্রগতি হয়নি বলেই জানিয়েছেন রেল পুলিশের কর্তারা। ট্রেনের মহিলা কামরায় যে-যুবক ওই তরুণীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছিল, ধরা পড়েনি সে-ও। পুলিশি সূত্রের খবর, দুষ্কৃতীকে ধরতে আজ, মঙ্গলবারেই ছবি আঁকানো হবে।
বেলুড় স্টেশনের কাছে দুষ্কৃতীর থাবা থেকে মান বাঁচাতে রবিবার বিকেলে জনতা এক্সপ্রেসের গরাদহীন জানলা দিয়ে ঝাঁপ দিয়েছিলেন ওই তরুণী। খবর পেয়েই যথাযথ তদন্তের জন্য রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়কে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরে, রাতেই রেল পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের কর্তা এবং অফিসারেরা ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলেন। সোমবার হাসপাতালে গিয়ে তরুণীর সঙ্গে ফের বিস্তারিত ভাবে কথা বলার চেষ্টা করেন তদন্তকারীরা। রেল পুলিশের ডিআইজি স্বপনকুমার মাইতি বলেন, “ওই তরুণী এখনও এতটাই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন যে, তাঁকে সবিস্তার জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি।” |
তরুণীর কাছ থেকে পুরো বিষয়টির খুঁটিনাটি জানতে না-পারলেও এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ স্বপনবাবু, হাওড়া রেল পুলিশের সুপার মিলনকান্ত দাস বেলুড় জিআরপি থানায় যান। ঝাঁপ দেওয়ার পরে ওই তরুণী এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের যেখানে পড়ে ছিলেন, সেই জায়গাটিও ঘুরে দেখেন তাঁরা। কথা বলেন দু’জন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে।
পরে মিলনবাবু জানান, রবিবার বিকেলে তরুণীকে ট্রেনের জানলা দিয়ে ঝাঁপ দিতে দেখেছিলেন রঞ্জিত রায় নামে পোলবার এক বাসিন্দা। তিনিই প্ল্যাটফর্ম থেকে কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে ওই তরুণীকে তুলে বেলুড় স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে জ্ঞান ফেরার পরে তরুণী জানিয়েছিলেন, তাঁর ব্যাগ আর মোবাইল ফোন ট্রেনেই রয়ে গিয়েছে। ওই কথা শুনে রঞ্জিতই বেলুড় থেকে একটি লোকাল ট্রেনে চেপে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, দিল্লি-জনতা এক্সপ্রেসের মহিলা কামরায় একটি পরিত্যক্ত ব্যাগকে ঘিরে জটলা তৈরি হয়েছে। পুলিশও ঘটনাস্থলে এসেছে। রঞ্জিতই পুলিশকে বেলুড়ের ঘটনার কথা জানান। মিলনবাবু বলেন, “রঞ্জিতবাবু খুবই ভাল কাজ করেছেন।”
রেল পুলিশ সূত্রের খবর, তরুণীর বয়ান নিয়ে লুঙ্গি ও শার্ট পরা দুষ্কৃতীর ছবি আঁকানোর কথা ভেবেছেন তদন্তকারীরা। মঙ্গলবারেই ওই ছবি আঁকানো হবে। সেই সঙ্গে তরুণীর সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা হবে, কোন স্টেশন থেকে ওই দুষ্কৃতী ট্রেনে উঠেছিল। তরুণীর মোবাইল ওই দুষ্কৃতীই নিয়ে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তদন্তকারীরা জানান, ওই মোবাইলের শেষ টাওয়ার লোকেশন মিলেছে বালি ও বেলুড়ের মাঝখানে। তার পরেই সিমকার্ড খুলে নিয়ে মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী তরুণীটিকে রবিবার রাতেই কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। তিনি এখনও আইটিইউ-এ রয়েছেন। রাতেই সিটি স্ক্যান এবং অন্যান্য পরীক্ষানিরীক্ষা করেন চিকিৎসকেরা। এ দিন বিকেলে ওই তরুণীর দাদা বলেন, “বোনের সমস্ত রিপোর্টই ভাল এসেছে।”
|