বাবা-মায়ের বকুনি খেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা ভিন্ রাজ্যের এক তরুণীকে উদ্ধার করলেন আর এক তরুণী। যিনি পেশায় রেলরক্ষী বাহিনীর কনস্টেবল। শুধু উদ্ধারই নয়, রাতে নিজের কাছে রাখা, খাওয়া-দাওয়ারও বন্দোবস্ত করলেন। শেষে বাড়ির লোকেদের ফোনে খবর দিয়ে ডেকে এনে পরের দিন ওই তরুণীকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থাও করলেন তিনিই।
রবিবার রাতে এই ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সাঁতরাগাছি স্টেশনে। রেল সূত্রে খবর, রবিবার সন্ধ্যায় ওই স্টেশনের চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে অন্য দুই সহকর্মীর সঙ্গে ডিউটি করছিলেন রেলরক্ষী বাহিনীর কনস্টেবল মৌমিতা আইচ। ৭টা ৪০ মিনিটে ডাউন আমদাবাদ এক্সপ্রেস স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরে বছর চব্বিশের ওই কনস্টেবল দেখেন, গোলাপি সালোয়ার পরা বছর কুড়ির এক তরুণী উদ্ভ্রান্তের মতো প্ল্যাটফর্মে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সন্দেহ হওয়ায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন মৌমিতা।
|
মৌমিতা আইচ |
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে কিছু বলতে না চাইলেও পরে জেরার মুখে ভেঙে পড়েন ওই তরুণী। স্বীকার করেন, তাঁর বাড়ি ওড়িশার রাজগাঁও এলাকার সুন্দরগড়ে। তিনি বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী। পড়াশোনা নিয়ে বাবা-মার বকুনি খেয়ে অভিমানে বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাওড়ামুখী আমদাবাদ এক্সপ্রেসে উঠে পড়েন। অনেককে নামতে দেখে তিনিও নেমে পড়েন সাঁতরাগাছিতে। ওই সময়েই তিনি মৌমিতার নজরে পড়ে যান।
সোমবার সাঁতরাগাছি স্টেশনে রেলরক্ষী বাহিনীর থানায় বসে মৌমিতা জানান, ধরা পড়ে গিয়ে ওই তরুণী তাঁর হাত ধরে কেঁদে ফেলেন। তাঁকে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাকুতি-মিনতিও করতে থাকেন। শেষে ওই তরুণীকে নিয়ে থানায় গিয়ে পদস্থ কর্তাদের ঘটনাটা জানান মৌমিতা। কিন্তু সমস্যা হয় রাতে থানায় মহিলাদের থাকার ব্যবস্থা না থাকায়। রেলরক্ষী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তাদের জানিয়ে তাই ওই তরুণীকে রেলরক্ষী বাহিনীর মেসে নিজের কাছে রাখেন মৌমিতা। তাঁর খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও করেন।
কিন্তু কেন এত ঝুঁকি নিলেন? ওই তরুণী তো পালিয়েও যেতে পারতেন? মৌমিতা বলেন, “ওঁর অসহায় অবস্থা দেখে খারাপ লাগছিল। মনে হয়েছিল, ওই তরুণী রাতে বিপদে পড়তে পারেন। তাই নিজের কাছে নিয়ে রেখেছিলাম।”
এ দিন সাঁতরাগাছি রেলরক্ষী বাহিনীর ভারপ্রাপ্ত অফিসার প্রমোদ কুমার বলেন, “ওই মহিলা কনস্টেবল যা করেছেন, তা আমরা সকলেই সমর্থন করেছি। কালকে রাতেই ওই তরুণীর কাছ থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে ওঁর বাড়িতে ফোন করে খবর পাঠাই। আজ দুপুরে ওঁর ভাই জাভেদ আখতার এসে ওঁকে নিয়ে যান।” |