আরামবাগ শহরের নিকাশি ব্যবস্থার হাল ফেরাতে পুরসভা ব্যর্থ। যদিও পুর কর্তৃপক্ষ কৌশলে সেই দায়িত্ব পূর্ত দফতরের ঘাড়ে চাপিয়েছে। চলতি মাসের শুরুতেই আরামবাগ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল কচ নিজেদের আর্থিক সঙ্কটের কথা জানিয়ে মহকুমাশাসকের কাছে আবেদন করেন। ওই আবেদনে জানানো হয়, লিঙ্ক রোড পূর্ত দফতরের অধীন। ফলে, নিকাশির কাজটা যেন পূর্ত দফতরই করে।
মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় বলেন, “রাস্তাটিতে বৃষ্টির জমা জল নিকাশির ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। বিষয়টি জেলাশাসককে জানিয়ে জানিয়ে পূর্ত দফতরকে বলা হয়েছে সেই জল নিকাশি নিশ্চিত করতে।” মহকুমা পূর্ত দফতরের সহকারী বাস্তুকার সন্দীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মহকুমাশাসকের চিঠি পেয়ে আমরা ইতিমধ্যেই স্কিম করে জেলায় পাঠিয়েছি। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি।”
যদিও কাজটি নিয়ে পূর্ত দফতরের কিছু অফিসার স্তরে অসন্তোষ আছে। তাঁদের অভিযোগ, পুর কর্তৃপক্ষ প্রায় ১৯৯০ সাল থেকে শহরের নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে মাস্টার-প্ল্যান করার কথা বলছে। প্রতি পুর নির্বাচনেই নিকাশি ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এখন তাঁদের কাজ আমাদের ঘাড়ে চাপল। অন্য দিকে, আরামবাগ পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান দীপক সরকার বলেন, “মাস্টারপ্ল্যান ধোঁকা ছিল না। তহবিলের অনটনই আমাদের বাধা। এই কাজ পূর্ত দফতর তাদের চাপানো হয়েছে ভাবছে কী করে? প্রথমত রাস্তাটা তাদের অধীন। তা ছাড়া, আমরাও তো ওই লিঙ্ক রোড তাদের হওয়া সত্ত্বেও সৌন্দর্যায়ন করেছি এবং করে চলেছি।” |
ক’দিন আগেই তালতলা বাজারের রাস্তায় জল-ছবি।—নিজস্ব চিত্র। |
নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে আরামবাগ পুরসভার দীর্ঘদিনের সমস্যা। প্রতি বর্ষাতেই মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রবল হয়। সেই সমস্যা কাটাতে পুরসভা মাটি কেটে নালা করে অস্থায়ী উদ্যোগ নেয় মাত্র। কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি। আরামবাগ শহর আধ ঘণ্টা টানা বৃষ্টি হলেই পুরসভার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়। নিকাশি ব্যবস্থার অভাবে সেই জল বের হতে প্রায় দুই থেকে পাঁচ দিন সময় লাগে। কয়েকটি ওয়ার্ডে খান পাঁচেক মোটরপাম্প চালিয়ে সেই জল বের করার চেষ্টা হলেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি। পরের দিন বৃষ্টি হলে ফের জলবন্দি হয়ে যান পুরবাসীরা। সারা বর্ষাকাল জুড়ে আরামবাগের ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে এই ভোগান্তি পোয়াতে হয় ১২টি ওয়ার্ডের মানুষকেই। আবার জমা জল দ্রুত বেরিয়ে না যাওয়ায় শহরের মূল রাস্তা লিঙ্ক রোড-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা প্রায়ই ভেঙে যায়। বৃষ্টির অধিকাংশ জল শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা লিঙ্ক রোডের দু’কিলোমিটার জুড়ে জমা হয়। পূর্ত দফতর এবং পুরসভার বাস্তুকারদের মতে, লিঙ্ক রোডের ওই জল নিকাশির ব্যবস্থা হলেই শহরের জমা জলের সিংহভাগ বেরিয়ে যাবে।
দুই দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, আরামবাগ শহরের জমা জল বের হওয়ার পথগুলি পরিকল্পনাহীন ভাবে নির্মিত। খালবিলগুলিতে মিলের ছাই ফেলা, পুকুর ভরাট ইত্যাদি কারণে সম্পূর্ণ বন্ধ। শহরের উত্তর ও পূর্ব দিয়ে গিয়েছে প্রায় বুজে যাওয়া কানা দ্বারকেশ্বর। আর পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে গিয়েছে দ্বারকেশ্বর নদী। কিন্তু শহরের জমা জল সেখানে পৌঁছে দেওয়ার মতো নিকাশি নালার জন্য জায়গা নেই।
পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল কচ বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম মাটির নীচ দিয়ে নিকাশি নালা করে শহরের জল এক দিকে কানা দ্বারকেশ্বর, অন্য দিকে দ্বারকেশ্বর নদীতে ফেলব। কিন্তু ১৯৯৫ সাল থেকে নিকাশির ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল পাওয়া যায়নি। প্রতি বছর কিছু মাটির কাজ করে জল নিকাশির অস্থায়ী ব্যবস্থাও করা হয়। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আরামবাগ শহরের ১, ২, ৩, ৫, ৬, ৭, ৯, ১১, ১২, ১৩, ১৪ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে একটু বেশি বৃষ্টি হলেই জল জমে যায়।” |