|
|
|
|
মোদী-বিরোধিতা বাড়ছে দলেও |
ভিসা ঠেকাতে ওবামাকে চিঠি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও পটনা |
নরেন্দ্র মোদীর নাম সামনে আসতেই ঘরে-বাইরে তাঁর বিরোধিতার সুর চড়তে শুরু করল।
এক দিকে এ দেশের বিভিন্ন দলের ৬৫ জন সাংসদ যেখানে মোদীকে মার্কিন ভিসা না দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে দাবি জানালেন, ঠিক সেই সময় বিজেপি নেতা শত্রুঘ্ন সিন্হা পরোক্ষে মোদীর বিরোধিতা করে লালকৃষ্ণ আডবাণীর নামেই জোরালো সওয়াল করলেন। আর মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানও তাঁর রাজ্যে ভোটের আগে যাত্রায় ব্রাত্য করলেন মোদীকে। সঙ্ঘ নেতৃত্ব যখন মোদীর ছবিকেই সামনে রেখে দলকে এগোনোর পরামর্শ দিয়েছেন, শিবরাজ কিন্তু গোটা যাত্রাপথে কোথাও ব্যবহার করলেন না মোদীর ছবি।
আর এই ধারাবাহিক ঘটনাগুলি ঘটছে গত সপ্তাহে আডবাণী, রাজনাথ সিংহ বাদে দলের সব শীর্ষ নেতাকেই মোদীর নেতৃত্বাধীন কমিটির অধীনে রাখা এবং আমেরিকায় গিয়ে রাজনাথের মুখ থেকে মোদীর জয়ধ্বনির পর।
রাজ্যসভার নির্দল সাংসদ মহম্মদ আদিব গত বছরই সংসদের অধিবেশন চলাকালীন মোদীকে মার্কিন ভিসা দেওয়ার বিরোধিতা করে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে একটি চিঠি লেখেন। সেই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন মোট ৬৫ জন সাংসদ। তার মধ্যে কংগ্রেস, জেডিইউ, ডিএমকে-র সাংসদের পাশাপাশি তৃণমূলের সুলতান আহমেদও রয়েছেন। মহম্মদ আদিবের দাবি, সীতারাম ইয়েচুরির মতো বাম নেতাও তাতে সই করেছেন। এই চিঠিটি পুরনো হলেও রাজনাথ সিংহ আমেরিকায় গিয়ে যে ভাবে ফের মোদীর ভিসা মঞ্জুরের দাবি করেছেন, তার পর গত রবিবার সেই চিঠিটি আবার পাঠানো হয়েছে ওয়াশিংটনে।
মোদী-বিরোধিতায় ইন্ধন জুগিয়েছে অর্মত্য সেনের সাম্প্রতিক মন্তব্যও। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে আমি আরও ধর্মনিরপেক্ষ কাউকে চাইব। এর প্রধান কারণ হল, সংখ্যালঘুদের একটা অংশের মধ্যে উদ্বেগ ও ভয় তৈরি করেন এমন কাউকে আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই না।” এতে ফেসবুকের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কে কিছু উগ্র বিজেপি সমর্থক অমর্ত্যর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার শুরু করলেও দলের প্রথম সারির নেতারা কিন্তু এ নিয়ে মুখ খোলেননি। কীর্তি আজাদ শুধু বলেছেন, “অমর্ত্য সেন এক জন প্রতিভাবান বক্তি। নিজের কাজেই মন দেওয়া উচিত তাঁর। গোটা দেশ মোদীকে চাইছে, আর শুধু তিনিই বিরোধিতা করছেন!” তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সম্প্রতি জানিয়েছেন, তিনি মোদীকে সমর্থন করেন না। তাঁর দলের সাংসদ সুলতান আহমেদের বক্তব্য, “মোদী হিন্দুত্বের ব্র্যান্ড। তিনি নিজেকে জাতীয়তাবাদী হিসেবে প্রচার করছেন। তা হলে কী মোহনদাস গাঁধী, সুভাষচন্দ্র বোস, মৌলানা আজাদের মতো নেতারা জাতীয়তাবাদী নন? আসলে আমাদের দেশে কোনও কট্টরবাদী মনোভাবই টিকতে পারে না।”
মোদীকে সাম্প্রদায়িক অ্যাখ্যা দিয়ে নিত্যদিন গাল পাড়ছেন কংগ্রেসের নেতারাও। বিজেপি-ও এর জবাবে গলা ফাটিয়ে বলছে, কংগ্রেস অহেতুক ভোটের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক রং দেওয়ার চেষ্টা করছে। মোদীর ভিসা মঞ্জুর ঠেকানোর চেষ্টা প্রিভিলেজের বিষয়। সাংবিধানিক কাঠামোতে কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে এ ভাবে ভিসা নামঞ্জুর করা যায় না।
কিন্তু বিজেপি-র বিপত্তি আরও বাড়ছে, যখন ঘরের মধ্য থেকেই মোদী-বিরোধিতার সুর তীব্র হচ্ছে। সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত বিজেপি-তে এখন ঐক্যের ছবিটি দেখানোরই পরামর্শ দিয়েছেন। সেই মোতাবেক আডবাণী ও মোদী এখন সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকেও পাশাপাশি বসছেন। কিন্তু গত কাল ভাগবতের সঙ্গে নাস্তার পরে আজ আডবাণী-ঘনিষ্ঠ নেতা শত্রুঘ্ন সিন্হা মোদী বিরোধিতাতেই সরব হলেন। ঠিক যে সুরে নীতীশ কুমার মোদীর বিরোধিতা করে এনডিএ ছেড়েছিলেন, পটনা সাহিবের সাংসদ শত্রুঘ্ন আজ সেই পথেই হাঁটলেন। বললেন, “প্রধানমন্ত্রীকে সকলকে নিয়ে চলতে হবে। বিজেপি-র কেউ প্রধানমন্ত্রী হলে তাঁর লালকৃষ্ণ আডবাণীর আশীর্বাদ প্রয়োজন।” নীতীশ কুমারও আগে বলেছিলেন, “বিজেপি-তে লালকৃষ্ণ আডবাণী শ্রদ্ধেয় নেতা।” এর সঙ্গে তিনি বিজেপির কয়েক জন নেতার নাম করে জানান, তাঁদের সহযোগিতা ছাড়া তাঁর চলা সম্ভব হবে না। সকলকে নিয়ে চলতে হবে।” তাঁর কথায়, “যশোবন্ত সিন্হা, মুরলীমনোহর জোশী, সুষমা স্বরাজ এবং অরুণ জেটলির মতো নেতাদের নিয়ে তাঁকে চলতে হবে।”
সারা দিন সংবদামাধ্যমের কাছে দফায় দফায় শত্রুঘ্ন যে ভাবে আডবাণীর পক্ষে জোরালো সওয়াল করে সুকৌশলে মোদীর বিরোধিতা করেছেন, সেটি কোনও অবস্থাতেই ভাল চোখে নিচ্ছেন না দলের মোদী-পন্থী নেতারা। কিন্তু শত্রুঘ্ন সরাসরি বিরোধ না করায় তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার পথেও হাঁটতে পারছেন না তাঁরা। তবে তিনি যাতে মুখ বন্ধ রাখেন, তার জন্য প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি তাঁকে দেওয়া হয়েছে মুখপাত্রের মাধ্যমে। দলের মুখপাত্র শাহনওয়াজ হোসেন বলেন, “শত্রুঘ্ন সিন্হা যা বলেছেন, তা আমরা শুনেছি। সভাপতি রাজনাথ সিংহ বিদেশ সফর থেকে ফিরলে এই বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।” তবে বিজেপি নেতারা মনে করছেন, মোদীর নতুন কমিটিতে শত্রুঘ্নকে বাদ দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করছেন তিনি। বিতর্ক তুলে নজর কাড়তে চাইছেন। তেমনই মোদীর অধীনে কমিটিতে শিবরাজকে রাখা হলে সেটিও তাঁর ভালো লাগার কথা নয়। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দম নেই দলের। এক নেতার কথায়, “মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন লড়ছেন শিবরাজ। তিনি মোদীর ছবি না রাখলে কিছু বলার নেই। কারণ, মোদীর মুখ লোকসভার জন্য বরাদ্দ।”
|
পুরনো খবর: মোদীই মুখ, রাজনাথ বোঝাচ্ছেন বিদেশেও |
|
|
|
|
|