গৃহকর্ত্রীকে খুন করে হাতানো হবে টাকা-গয়না। এমনই পরিকল্পনা ছিল। গত ১৭ জুলাই যাদবপুরের সেন্ট্রাল রোডের ফ্ল্যাটে খুন হওয়া প্রৌঢ়া শম্পা ঘোষের পরিচারিকা শিবানী মান্না জেরায় এ কথাই কবুল করেছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের। তার বক্তব্যের সূত্র ধরে সোমবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার তালদি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিন অভিযুক্তকে। তাদের মধ্যে রয়েছে শম্পাদেবীর গাড়ির চালক তাপস মাইতিও (২৪)। ধৃতদের ৫ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত দেওয়া হয়েছে। যদিও লুঠ হওয়া টাকা-গয়না এখনও উদ্ধার করা যায়নি।
পুলিশ জেনেছে, ধৃত উত্তম জানার (২৬) সঙ্গে শিবানীর সম্পর্ক ছিল। বার কয়েক আত্মীয় পরিচয় দিয়ে উত্তমকে শম্পাদেবীর ফ্ল্যাটে নিয়ে যায় সে। কিন্তু শম্পাদেবী বিষয়টি জেনে যান। তাই তাঁর উপরে রাগ ছিল শিবানীর। সম্প্রতি শম্পাদেবীর মেয়ে রাজরূপা তাঁকে টাকা পাঠিয়েছিলেন। পুলিশের ধারণা, সেই টাকা হাতাতেই শিবানী এই পরিকল্পনা করে। তবে শুধু লুঠ নয়, শম্পাদেবীকে খুন করাও তার উদ্দেশ্য ছিল। তাই উত্তমের মাধ্যমে বাদল দলুই (২৫)-সহ বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের খুনের পরিকল্পনায় সামিল করে শিবানী।
পুলিশ জানায়, ওই রাতে ডাক্তারের কাছে যাবে বলে বেরিয়ে শিবানী বাকিদের ফ্ল্যাটে নিয়ে আসে। কিছুক্ষণ ফ্ল্যাটেই লুকিয়ে থাকে তারা। পরে সুযোগ বুঝে শম্পাদেবীর উপরে চড়াও হয়। প্রৌঢ়া বাধা দিলে শ্বাসরোধ করে তাঁকে খুন করে দেহটি ফ্ল্যাটের শৌচাগারে রেখে আসে তারা।
পুলিশ জানায়, খুন করার পরে চাবি দিয়ে আলমারি খুলে ৩৫ হাজার টাকা ও কিছু গয়না হাতায় শিবানী। ফ্ল্যাটে বসেই টাকার একাংশ দেয় বাকিদের। তার পরে পরিকল্পনামাফিক একটি কামিজ দিয়ে শিবানীর হাত পিছমোড়া করে বেঁধে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যায় বাকিরা। ভোর হতেই হাত-বাঁধা অবস্থায় শিবানী ফ্ল্যাটের আবাসিকদের ঘুম ভাঙিয়ে ডাকাতির গল্প শোনায়। আবাসিকেরা ফ্ল্যাটে ঢুকে দেখেন, শম্পাদেবী শৌচাগারের মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছেন।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, উত্তম মিনের ব্যবসা করে। শিবানীর সঙ্গে তার ট্রেনে আলাপ। বাকি অভিযুক্তেরা সকলেই শিবানীর গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশ জানায়, শম্পাদেবীর গাড়ির চালক অভিযুক্ত তাপস যাদবপুরের বাসিন্দা। খুনে মূল অভিযুক্ত শিবানীকে শুক্রবার গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জেরা করে জানা যায়, গোটা পরিকল্পনা তারই। ঘটনাস্থলে না থাকলেও পরিকল্পনার সবই তাপস জানত। তাই তাপসকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। বিকাশ ও ঝণ্টু নামে দু’জন ফেরার। এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “আনুমানিক ৫০ হাজার টাকার মতো লুঠ হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। ঘটনাটির তদন্ত করা হচ্ছে।”
|