বেপরোয়া শ্লীলতাহানির ধারাবাহিকতায় এ বার জায়গা করে নিল হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন হোটেল চত্বর। অভিযোগ, সোমবার রাতে সেখানে বাবার সামনেই শ্লীলতাহানির শিকার হলেন মুম্বই থেকে কলকাতার একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা এক ঘোষিকা এবং তাঁর হাওড়ার এক বান্ধবী। শুধু তা-ই নয়, প্রতিবাদ করায় দলবল নিয়ে ওই ঘোষিকার বাবা ও তাঁদের এক সঙ্গীর উপরে চড়াও হল ওই দুষ্কৃতী। তাঁদের মারধর করার পাশাপাশি নানা ভাবে হেনস্থা করল দুই তরুণীকেও। আরও অভিযোগ, প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে এই ঘটনা ঘটলেও পুলিশের টহলদারি জিপের দেখা মেলেনি। অভিযোগ পাওয়ার পরে অবশ্য এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
হাওড়া স্টেশনের কাছে সব্জি বাজারের উল্টো দিকে একটি হোটেলের সামনে ঘটনাটি ঘটে রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ। গত ১৩ তারিখ ওই এলাকার কাছেই জি আর রোড চত্বরের একটি পানশালার সামনে থেকে এক মহিলার হার ছিনতাই করে পালায় এক দুষ্কৃতী। এখনও ওই ঘটনার কিনারা হয়নি। এর মধ্যে ফের এই ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসীরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাবার সঙ্গে হাওড়া স্টেশনের কাছে একটি হোটেলে উঠেছিলেন ওই ঘোষিকা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন বালির বাসিন্দা এক বান্ধবী ও তাঁর সঙ্গী। পুলিশ জানায়, ওই রাতে হোটেল থেকে বেরিয়ে খাবার কিনতে যান চার জন। অভিযোগ, হরিমোহন বসু রোড দিয়ে যাওয়ার সময়ে এক মত্ত ব্যক্তি ওই দুই তরুণীর সামনে এসে অশ্লীল মন্তব্য করে এক জনের হাত ধরে টানাটানি শুরু করে। এতে উত্তেজিত হয়ে ওই তরুণী জুতো খুলে ওই দুষ্কৃতীর ডান কানে সপাটে আঘাত করেন। ওই দুষ্কৃতীর কান ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। পুলিশ জানায়, এর পরেই ওই দুষ্কৃতী চার-পাঁচ জন সঙ্গীকে ডেকে নিয়ে বাবার সামনেই মুম্বই থেকে আসা ওই তরুণী ও তাঁর বান্ধবীকে হেনস্থা ও বাকিদের মারধর শুরু করে। ওই তরুণী ও তাঁর সঙ্গীদের চিত্কারে এলাকার দোকানদার ও অন্য হোটেলের লোকেরা বেরিয়ে এলে দুষ্কৃতীরা রণে ভঙ্গ দেয়।
মঙ্গলবার বালির বাসিন্দা তরুণী বলেন, “আমরা খাবার কিনতে বেরিয়েছিলাম। এক জন মত্ত লোক এসে আমাদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করে। প্রতিবাদ করলে দলবল নিয়ে এসে মারধর করে।”
ওই ঘটনার পরে রাতেই স্থানীয় গোলাবাড়ি থানায় শ্লীলতাহানি ও মারধরের অভিযোগ দায়ের করেন আক্রান্ত তরুণীদের এক জন। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ রাতেই রতন সাউ নামে এক ব্যক্তিকে সালকিয়ার একটি গোপন ‘ঠেক’ থেকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, মুম্বই থেকে আসা বাবা ও মেয়ে সকালেই ফেরার ট্রেনের টিকিট থাকায় চলে যান।
এলাকাবাসীদের অভিযোগ, এই ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। রাত বাড়লেই হাওড়া স্টেশনের কাছে হোটেল সংলগ্ন গোটা এলাকা দুষ্কৃতীদের দখলে চলে যায়। চলে প্রকাশ্যে মদ্যপান। রাস্তার পাশেরই বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হয় দেশি ও বিলিতি মদ, গাঁজা। জুয়া-সাট্টার ঠেক এবং বিভিন্ন হোটেলে দেহব্যবসা চলে বলেও অভিযোগ। এলাকার এক দোকানদারের অভিযোগ, “পুলিশের সঙ্গে মাসোহারার ব্যবস্থা থাকায় পুলিশ দেখেও চোখ বুজে থাকে। ফলে অভিযোগ করে ফল মেলে না।” হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (সদর) নিশাত পারভেজ বলেন, “অভিযোগ পেয়ে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছি। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। রাতে এলাকায় পুলিশি টহলদারি বাড়ানোর বিষয়টি দেখা হচ্ছে। তবে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ আমরা পাইনি।”
|