ট্রাফিক লোক আদালত বসিয়ে, ছাড় দিয়েও কিন্তু তেমন পরিমাণ বকেয়া জরিমানা আদায় করতে পারছে না লালবাজার। উল্টে একটি গাড়ির পর পর ট্রাফিক বিধি ভঙ্গ করা এবং বছরের পর বছর জরিমানা না-দেওয়াএই প্রবণতা বাড়ছে।
যেমন একটি বেসরকারি বাস। যান শাসন আইনকে বার বার, বছরের পর বছর তোয়াক্কা না-করে রাজপথে চলেছে বাসটি। ট্রাফিক পুলিশ মামলা রুজু করেছে, জরিমানা করেছে, বাসটি সে সব পাত্তাই দেয়নি। এই ভাবে মামলার পাহাড় জমতে জমতে ওই একটি মাত্র বাসের ঘাড়ে মামলার সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ৮৬৮টি।
শুধু এই একটি মাত্র বাস-ই নয় বা তার বিরুদ্ধে জমে থাকা ৮৬৮টি মামলাই নয়, ট্রাফিক বিধিভঙ্গ করার অভিযোগে কলকাতা পুলিশের রুজু করা প্রায় ১৫ লক্ষ মামলা শিয়ালদহ, আলিপুর ও ব্যাঙ্কশাল আদালতে নিষ্পত্তি না-হয়ে পড়ে রয়েছে। লালবাজারের একটি সূত্রের খবর, খুব বেশি দিন আগেকার নয়, ওই সব মামলার বয়স মোটামুটি তিন বছর। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ওই সব মামলা থেকে এক টাকাও যেখানে জরিমানা আদায় হচ্ছে না, সেখানে অনেকটা কলকাতা পুরসভার বকেয়া পুরকর আদায়ের জন্য ওয়েবার স্কিম-এর মতো ট্রাফিক পুলিশ ওই বিপুল পরিমাণ বকেয়া জরিমানার অঙ্কের কিছুটা আদায় করতে বসাচ্ছে ট্রাফিক লোক আদালত, যেখানে অনেক ক্ষেত্রে বকেয়া জরিমানা আদায় করতে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বছরে যে-পরিমাণ জরিমানা কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ আদায় করে, তার এক দশমাংশও কিন্তু এখনও পর্যন্ত লোক-আদালত বসিয়ে আদায় করা যাচ্ছে না। এ বছর দু’টি লোক আদালত থেকে ইতিমধ্যে লালবাজারের ভাঁড়ারে ৯২ লক্ষ টাকার কিছু বেশি বকেয়া জরিমানা আদায় হয়েছে। গত বছর পাঁচটি লোক আদালত বসিয়ে দেড় কোটি টাকার কিছু বেশি বকেয়া জরিমানা আদায় করা গিয়েছিল। লালবাজারের কর্তাদের আশা, এ বছর তাঁরা ট্রাফিক লোক আদালত থেকে গত বারের তুলনায় দ্বিগুণ অঙ্কের জরিমানা আদায় করতে পারবেন। তাতেও কিন্তু লোক আদালতে আদায় হওয়া জরিমানার অঙ্ক সন্তোষজনক নয় অধিকাংশ পুলিশকর্তার কাছে।
কারণ, গত বছর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ট্রাফিক পুলিশ জরিমানা আদায় করেছিল প্রায় ২৩ কোটি টাকা, ২০১১ সালে প্রায় ১৫ কোটি টাকা।
গত বছর শিয়ালদহ কোর্টে প্রথম ট্রাফিক লোক-আদালতটি শুরু হয় পাঁচটি ডিভিশন বেঞ্চ দিয়ে। পরে বেড়ে দশটি ও আরও বেড়ে বারোটি হয়।
লালবাজার প্রথমে ঠিক করে, প্রতি মাসে অন্তত তিনটি এমন লোক আদালত বসবে। কিন্তু বাস্তবে বছরে লোক আদালত বসছে মাত্র পাঁচটি। এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “প্রচারের অভাবে প্রথম লোক-আদালতে তেমন সাড়া মেলেনি। তবে, পরবর্তী কয়েকটি লোক-আদালত বসার পরে বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা দেখা দিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, পরবর্তী কালে এই আদালতে আরও বেশি মামলার নিষ্পত্তি হবে।”
গত বছর এপ্রিলে ট্রাফিক লোক আদালতের সূচনার সময়ে লালবাজারের কর্তাদের লক্ষ্য ছিল, আগামী দু’বছরের মধ্যে এই প্রক্রিয়ায় বকেয়া ২০ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা। কিন্তু লালবাজারের হিসেব বলছে, লক্ষ্যের ধারেকাছেও এখনও পৌঁছাতে পারা যায়নি। লালবাজারের এক শীর্ষকর্তার দাবি, “একটি লোক আদালত থেকে যাতে পরবর্তী লোক আদালতে বেশি পরিমাণ জরিমানা আদায় করা হয়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য থাকে।” সেই নিরিখে এ বছরের প্রবণতা কিন্তু এখনও পর্যন্ত আশাপ্রদ নয়। এ বছর এখনও পর্যন্ত মোট ৯২ লক্ষ টাকা জরিমানা লোক-আদালত বসিয়ে আদায় করা গেলেও ৩ মার্চ প্রথম লোক আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া মামলার সংখ্যার চেয়ে ২৭ এপ্রিল দ্বিতীয় লোক আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া মামলার সংখ্যা প্রায় দু’হাজার কম এবং একই ভাবে দ্বিতীয় লোক-আদালতে জরিমানাও প্রায় দু’লক্ষ টাকা কম আদায় হয়েছে।
|