হাত পিছমোড়া করে বাঁধা। সেই অবস্থায় কাঁধ ও পিঠ দিয়ে তিনতলার ফ্ল্যাটের দরজায় কোনওক্রমে ধাক্কা মারছেন এক মহিলা। পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা অনন্যাদেবী দরজা খুলে ঘুম জড়ানো চোখে দেখলেন, ধাক্কাধাক্কি করছেন তাঁরই পড়শি শম্পা ঘোষের পরিচারিকা শিবানী মান্না। চিৎকার করে ওই পরিচারিকা বলছেন, “ঘরে অপরিচিত লোক ঢুকে পড়েছে।” বৃহস্পতিবার ভোর চারটের ঘটনা। যাদবপুর থানা এলাকার সেন্ট্রাল রোডে ওই বহুতলের বাসিন্দাদের এ ভাবেই ঘুম ভাঙে এ দিন। অনন্যাদেবীরাই ওই পরিচারিকার হাতের বাঁধন খুলে দেন। তাঁর কথা শুনে প্রতিবেশীরা শম্পাদেবীর ফ্লা্যটে ঢুকে দেখেন, শৌচাগারে অচৈতন্য অবস্থায় উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছেন তিনি। ঘরে আর কেউ নেই। প্রতিবেশীরা সঙ্গে সঙ্গে খবর দেন যাদবপুর থানায়। পুলিশ সেখানে পৌঁছে শম্পাদেবীকে (৫৬) নিয়ে যায় বাঙুর হাসপাতালে। সেখানে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় তাঁকে। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন লালবাজারের গোয়েন্দারাও। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, ডাকাতি করতে এসে শম্পাদেবীকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে দুষ্কৃতীরা।
তবে পুলিশের দাবি, যে পরিচারিকার কথার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে, তাঁর কথাতেও বহু অসঙ্গতি রয়েছে। তাই দফায় দফায় আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাঁকে। |
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “ওই পরিচারিকা সব সত্যি কথা বলছেন কি না, তা যাচাই করে দেখছি। বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” ওই পরিচারিকা এই ঘটনায় জড়িত কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বছর তিরিশের শিবানী জানিয়েছেন, বুধবার রাত সওয়া ১১টা নাগাদ ওই ফ্ল্যাটের কলিং বেল বেজেছিল। তিনি সেই সময়ে কাজে ব্যস্ত ছিলেন। শম্পাদেবীই দরজা খোলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিন দুষ্কৃতী ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়ে এবং শম্পাদেবীর মুখ চেপে ধরে তাঁকে শৌচাগারের ভিতরে নিয়ে যায়। পরে তারা শিবানীকে মারধর করে এবং কামিজ দিয়ে পিছমোড়া করে হাত বেঁধে দেয়। ওড়না দিয়ে তাঁর মুখও বেঁধে দেয় দুষ্কৃতীরা। তার পরে ফ্ল্যাটে লুঠপাট চালায়। পরদিন ভোরে ওই পরিচারিকা কোনও ভাবে ফ্ল্যাটের ভেজানো দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে চিৎকার করে পড়শিদের ডাকতে শুরু করেন। ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে পুলিশের অবশ্য অনুমান, শিবানীর বক্তব্য ঠিক নয়। ফ্ল্যাটে লুঠ করতে এসেছিল এক জনই।
পুলিশ জানায়, ৫৯এ সেন্ট্রাল রোডের ওই বাড়িটির দোতলার একটি ফ্ল্যাটে স্বামী সমীরণ ঘোষের সঙ্গে থাকতেন শম্পাদেবী। সমীরণবাবু কর্মসূত্রে ওড়িশা গিয়েছেন। গোসাবার বাসিন্দা ওই পরিচারিকা গত ছ’বছর ধরে শম্পাদেবীর বাড়িতে কাজ করেন। তাঁর স্বামী ১১ বছর আগে মারা গিয়েছেন। ১৩ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে তাঁর। পুলিশ জানায়, শম্পাদেবীর শরীরে কোনও ক্ষতচিহ্ন না থাকলেও ঠোঁটের কাছে রক্ত জমাট বেঁধে ছিল। লণ্ডভণ্ড হয়ে ছিল ঘরের আলমারির জিনিসপত্র। বাড়ি থেকে কোনও জিনিস খোয়া গিয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। দুষ্কৃতীরা আদৌ কিছু লুঠ করেছে কি না, সেটাও জানাতে পারেননি শিবানী।
বহুতলের একতলার বাসিন্দা সুতীর্থ মান্না এ দিন জানান, তিনি রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বহুতলের সদর দরজায় তালা দেন। কিন্তু এ দিন সকালে ওই তালা খোলা অবস্থায় দরজায় লাগানো ছিল। ফ্ল্যাটের আবাসিকেরা পুলিশকে জানান, তাঁরা কেউই তালা খোলেননি। সে ক্ষেত্রে তালাটি কে খুলল, তা-ও তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, এলাকায় রাতে দু’জন নিরাপত্তারক্ষী পাহারা দেন। ভোরে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরেও দেখা যায়, তাঁরা একটি বাড়ির দালানে ঘুমোচ্ছেন। ওই নিরাপত্তারক্ষীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। |