নেতাদের সুপারিশ না মানাই কাল, দাবি
অনিয়মের অভিযোগে ছাত্র ভর্তি বন্ধ গরফার বিএড কলেজে
নিয়ম না মেনে ছাত্রভর্তির অভিযোগ ওঠায় একটি বিএড কলেজে ভর্তি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, নিয়ম মেনেই ভর্তির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু শাসক দলের কয়েক জন প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রী কলেজে ভর্তির জন্য কিছু প্রার্থীর নাম সুপারিশ করেন। কর্তৃপক্ষের দাবি, সেই সুপারিশ মানা হয়নি বলেই তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে ছাত্রভর্তিতে জটিলতা তৈরি করা হয়েছে। ১ জুলাই থেকেই বিভিন্ন বিএড কলেজে ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে।
গরফার জগদীশচন্দ্র বসু শিক্ষক শিক্ষণ মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় ২০০৫ সালে। ‘সেল্ফ ফিনান্সিং’ কলেজটিতে বিএডে আসন ১০০। এর মধ্যে ৯৫টি আসনে কলকাতার এবং পাঁচটি আসনে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ভর্তি করার কথা। আগামী বছর থেকে স্কুলে শিক্ষকতার জন্য বিএড বাধ্যতামূলক হওয়ায় এখন এই পাঠ্যক্রমের চাহিদা যথেষ্ট। এতে ভর্তি হওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে স্নাতকোত্তরে খুব ভাল নম্বর না পেলে বিএড পড়ার সুযোগ পাওয়া কঠিন। কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি নির্মল চৌধুরী জানান, আবেদনকারী প্রার্থীদের মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাতালিকা তৈরি হয়। এ বছরও সে ভাবেই মেধাতালিকা তৈরি হয়েছে।
কলেজ সূত্রের খবর, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের জন্য সংরক্ষিত পাঁচটি আসনের জন্য শাসক দলের অন্তত চার জন নেতা-মন্ত্রীর কাছ থেকে সুপারিশ এসেছে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার একাধিক নাম পাঠিয়েছেন। কিন্তু নিয়ম মেনে মেধাতালিকা তৈরি করায় সুপারিশগুলি মানা সম্ভব হয়নি। এর পরেই তাঁরা ওই নেতাদের রোষে পড়েছেন বলে কর্তৃপক্ষের অভিযোগ।
কলেজ সূত্রের খবর, কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, স্থানীয় কাউন্সিলর তারকেশ্বর চক্রবর্তী এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ছাড়াও রাজ্যের আরও এক প্রভাবশালী মন্ত্রী ভর্তির জন্য নাম সুপারিশ করেছেন। শোভনবাবু এবং তারকেশ্বরবাবু সে অভিযোগ মেনেও নিয়েছেন। মেয়র বলেন, “একটা সুপারিশ পাঠিয়েছি বিধায়ক হিসেবে। কিন্তু প্রার্থীটিকে ভর্তি করতেই হবে, এমন কথা বলা হয়নি। নিয়ম মেনে ভর্তি করা সম্ভব কি না, তা দেখতে অনুরোধ করেছি।” মেয়রের সুরেই তারকেশ্বরবাবু বলেন, “আমি জনপ্রতিনিধি। অনুরোধ এলে সংশ্লিষ্ট জায়গায় পাঠিয়ে দিই। কিন্তু ভর্তি করা হবে কি না, সেটা কলেজই ঠিক করবে।”
ব্রাত্য বসু বার বার বলেন, কলেজে ছাত্রভর্তি হবে মেধাতালিকার ভিত্তিতে। তা হলে জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশ পাঠানোর সুযোগ কোথায়, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষামন্ত্রী নিজে অবশ্য কোনও প্রার্থীর নাম সুপারিশের কথা অস্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, “ধুর! কলেজটা চিনিই না, জানিই না!”
কলেজের অভিযোগ, সুপারিশ না মেনে মেধাতালিকা প্রস্তুত করায় তারকেশ্বরবাবুর পৃষ্ঠপোষকতায় একদল প্রার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ভর্তি প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ জানান। তারকেশ্বরবাবু এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। উল্টে তিনি বেআইনি ভাবে টাকা নেওয়ার জন্য সিপিএমের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা সম্পাদক, প্রাক্তন সাংসদ সুজন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। তারকেশ্বরবাবুর কথায়, “ওই কলেজে বেআইনি ভাবে টাকা নিয়ে ছাত্রভর্তি করা হয়। এ নিয়ে অভিযোগ জানাতে আমার কাছে এসেছিলেন এক দল প্রার্থী। আমি তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়কে জানানোর পরামর্শ দিই। অভিযোগকারীরা অতিরিক্ত টাকা চাওয়ার তথ্যপ্রমাণ-সহ উপাচার্যের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন।”
টাকা নেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে সুজনবাবু বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় অভিযোগ খতিয়ে দেখুক কিছু পাওয়া যায় কি না!” সুজনবাবু জানান, তিনি সাংসদ থাকাকালীন কলেজটা গড়ে ওঠে। সেই সময় কলেজের উপদেষ্টামণ্ডলীতে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল। বাদ দেওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করা হয়েছে। ওই নেতার কথায়, “আমি ওঁদের সাহায্যও করতে পারি না, পরামর্শও দিতে পারি না। উল্টে আমি কলেজটির সঙ্গে জড়িত ভেবে অনেকে নাম সুপারিশ করার আর্জি নিয়ে আসেন। যা আমি কখনওই করি না।” কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি নির্মল চৌধুরীও নিয়ম বহির্ভূত ভাবে টাকা নেওয়ার অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পর্যবেক্ষক দল এসেছিল। তাঁদের কাছে ভর্তি সংক্রান্ত সব তথ্য দেওয়া হয়েছে।” নেতা-মন্ত্রীদের সুপারিশের কথাও বিশ্ববিদ্যালয়কে জানান কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস জানান, ছাত্রভর্তি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েই কলেজে ভর্তি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। সব দিক খতিয়ে দেখতে একটি পর্যবেক্ষক দল গড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। তাঁর কথায়, “পর্যবেক্ষক দলের রিপোর্ট পেলে সিন্ডিকেটে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে। তত দিন কলেজটিতে ছাত্রভর্তি বন্ধ থাকবে।” উপাচার্যের দাবি, ক্লাস শুরু করতে এই প্রতিষ্ঠান পিছিয়ে পড়লেও তাতে খুব ক্ষতি হবে না।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.