কারও প্রতীক ট্রাক্টর। কেউ আবার লড়ছেন চেয়ার চিহ্নে। রিক্শা প্রতীকেও লড়ছেন কেউ কেউ। অথচ গত পঞ্চায়েত ভোটে ওঁরা সকলেই অবশ্য ঘাস ফুল প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন। কেউ প্রার্থী হতে না পারলেও সে যাত্রায় তৃণমূলকে জেতাতে উদয়াস্ত খেটেছিলেন। এবার ওঁরা সকলে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন দলের কাছে। কিন্তু, তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব টিকিট দেননি। ফলে, সকলেই হরেক প্রতীকে নির্দল হিসেবে লড়ছেন। দলীয় সূত্রের খবর, বহুবার অনুরোধ করেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিরস্ত করতে না পেরে ওই প্রার্থীদের বহিষ্কার করেছেন তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব। তৃণমূল সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে বহিষ্কৃতের সংখ্যা ৩০ জন। তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “দলের নির্দেশ মেনে প্রচারপত্র বিলি করে অনেকে ভোটের লড়াই থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন। যাঁরা ওই নির্দেশ না মেনে লড়াইয়ে রয়েছেন। তাঁদের ৩০ নেতাকর্মীকে দলবিরোধী কাজের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাকিদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। কোনভাবে দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙার ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না।”
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ার পরে দেখা যায়, কোচবিহারের দুই শতাধিক আসনে নির্দল হিসাবে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা দাঁড়িয়ে পড়েছেন। দলের নির্দেশ ও অনুরোধে সাড়া দিয়ে তাঁদের একাংশ বেশ কিছু এলাকায় প্রচারপত্র ছাপিয়ে প্রার্থী পদ থেকে সরে দাঁড়ান। কিন্তু দলের নির্দেশের তোয়াক্কা না করে ওই প্রার্থীদের অনেকেই জোরদার প্রচারে চালাচ্ছেন। কয়েকটি এলাকায় দলের প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে তাঁরা ফেলতে পারেন, এ আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তৃণমূল নেতাদের একাংশ।
এই অবস্থায় দু’সপ্তাহ আগে দলের তরফে বৈঠক ডাকা হয়। সেখানেই দলের নেতারা সিদ্ধান্ত নেন, প্রাথমিক ভাবে ৩০ জনকে বহিষ্কার করা হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ওই তালিকায় তুফানগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি দীপালি রায়, চিলাখানা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান মনোজ বর্মা, গুড়িয়াহাটি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজন গোস্বামীর নামও রয়েছে। দীপালি দেবী ও মনোজবাবু গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হওয়ার পরে যথাক্রমে সভাপতি ও প্রধানের দায়িত্ব পান। দলীয় কোন্দলের জেরে সময়সীমা পেরোনোর আগে অবশ্য তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়। প্রদেশ তৃণমূল সম্পাদক আবদুল জলিল আহমেদ বলেন, “কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা এলাকার ১০ জন, মোয়ামারি, সুটকাবাড়ি, ফলিমারি, মাথাভাঙা ও তুফানগঞ্জ মহকুমার ২০ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।” কোচবিহার জেলা পরিষদের ২৮ নম্বর আসনের প্রার্থী দীপালি রায় বলেন, “তৃণমূলকে বাঁচাতেই আমি ভোটে লড়ছি। ওই আসনে সিপিএমের প্রাক্তন সভাধিপতিকে জোড়া ফুল প্রতীকে প্রার্থী করা স্থানীয় কর্মীরা মেনে নিতে পারছেন না। তাই ট্রাক্টর প্রতীকে ভোটে লড়ছি। তবে বহিষ্কারের কোনও চিঠি পাইনি।” চিলাখানা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান মনোজ বর্মা এবার তুফানগঞ্জ ১ পঞ্চায়েত সমিতির ১২ নম্বর আসনের প্রার্থী। তাঁর কথায়, “বহিষ্কারের চিঠি পাইনি। মৌখিক ভাবেও আমাকে ওই ব্যাপারে কেউ কিছু জানাননি। ফলে বাইরে কে কি বললেন, তা নিয়ে ভাবছি না। দ্বিমুখী লড়াইয়ে চেয়ার চিহ্নের কাছে জোড়া ফুল হারছে।” গুড়িয়াহাটি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের হরিণচওড়ার বাসিন্দা বিজন গোস্বামী জানান, বুথ স্তরের বৈঠকে তাঁকে টিকিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তিনি বলেন, “এলাকার মানুষ চাইলেও দল টিকিট দেয়নি। শেষ অবধি এলাকাবাসীর দাবি মেনে রিক্শা চিহ্নে নির্দল প্রার্থী হয়েছি।” |