অর্থাভাবে হোঁচট খাচ্ছে হুগলি জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির ফেরি পরিষেবা। অবস্থা সামলাতে এখনই ভাড়া বৃদ্ধির দাবি করলেন সমিতি-কর্তৃপক্ষ। মহাকরণে পাঠানো চিঠিতে তাঁরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, এ ভাবে পরিষেবা দেওয়া যাবে না। গঙ্গার বিভিন্ন ঘাট থেকে সমিতি রোজ ৩৬টি ফেরি চালায়। যাতায়াত করেন দৈনিক প্রায় ৬৭ হাজার যাত্রী।
দফায় দফায় যে ভাবে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, সেই অনুপাতে ভাড়া না বাড়ায় বাস কমে গিয়েছে। মূলত এ কারণে ফেরির যাত্রী বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় দৈনিক পাঁচ হাজার বেশি লোক চড়ছেন। এই অবস্থায় ফেরি-পরিষেবা বন্ধ হলে সঙ্কটে পড়বেন বহু নিত্যযাত্রী। পরিস্থিতি জানিয়ে সমিতির তরফে গত তিন মাসে দু’টি চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাতে আর্থিক সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। সমিতির চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষ বলেন, “টেনেটুনে চালাচ্ছি। ক’দিন পারব জানি না।” ম্যানেজার চিন্তাহরণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ভাড়া বৃদ্ধি না হলে মাস দুই বাদে হয়তো পরিষেবা বন্ধ করে দিতে হবে।” |
সরকার অবশ্য এখনই ভাড়া বৃদ্ধিতে রাজি নয়। পরিবহণ-কর্তাদের বক্তব্য, “গত নভেম্বরে ফেরির প্রায় ২৫ শতাংশ ভাড়া বেড়েছে।” ভূতল পরিবহণ নিগমের দু’টি লঞ্চ তৈরি করে ও বিজ্ঞাপন খাতে সমিতি কয়েক লক্ষ টাকা আয় করেছে বলে পরিবহণ-কর্তারা দাবি করেন। পরিবহণ-সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দেখছি।” সমিতি-কর্তাদের বক্তব্য, “ফি মাসে বেতন ও মজুরি খাতে যথাক্রমে ২৮ লক্ষ এবং ১৩ লক্ষ টাকা লাগছে। ডিজেল লাগে দৈনিক গড়ে ৬৭ হাজার লিটার। লিটারপিছু দাম ৫৫ টাকা।” মাসে প্রতিটির ১৮,৫০০ টাকা হিসাবে ১৪টি লঞ্চ ভাড়া করতে হচ্ছে। চিন্তাহরণবাবু বলেন, “লোকসানের পাল্লা বাড়ছে। তা সত্ত্বেও পরিষেবা দিতে হচ্ছে।” এক কর্তার বক্তব্য, “গঙ্গাসাগর মেলার সময়ে যাত্রী পারাপার করে লাভ হয়েছিল ৪১ লক্ষ টাকা। বিজ্ঞাপন-বাবদ বছরে লাখ পঞ্চাশ আসে। কোনওক্রমে এতদিন চলেছে। আর চলছে না।”
সমস্যা ফেরির নিরাপত্তা নিয়েও। সমিতির ১২টি ফেরি রাজ্য সরকারের দেওয়া। চেয়ারম্যান বলেন, “প্রায় ৪০০ যাত্রী নিতে সক্ষম এক একটি ফেরির গড় আয়ু বছর কুড়ি। কিন্তু এগুলির বয়স ৩৩ বছর হয়েছে।” সমিতির প্রায় আড়াইশো যাত্রী নিতে সক্ষম নিজের ১৪টি ফেরিরও অনেক বয়স হয়েছে। বয়স হয়েছে সমিতির ২৪টি জেটিরও। চেয়ারম্যান বলেন, “বিপদ এড়াতে এ কারণে বাড়তি নজর দিতে হচ্ছে।”
কয়েক হাজার যাত্রী নিয়মিত হাওড়া থেকে আহিরিটোলা-বাগবাজার-শোভাবাজার রুটে যান। হাওড়া থেকে আরও তিনটি জনপ্রিয় রুট চাঁদপাল ঘাট, আর্মেনিয়ান ঘাট এবং ফেয়ারলি প্লেস। গাদিয়ারা-গেঁওখালি, গাদিয়ারা-নুরপুর, নাজিরগঞ্জ-মেটিয়াবুরুজ, বাউরিয়া-বজবজ, পোডলা-রাজাবাগান রুটেও প্রচুর যাত্রী ফেরিতে যাতায়াত করেন। |