কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবেই সুর চড়া রেখে চলেছেন তিনি। এ বার তুলনামূলক ভাবে কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটিতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে সেই আক্রমণের মাত্রা আরও তীব্র করলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েতের প্রচারে গিয়ে মঙ্গলবার তাঁর দাবি, গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না-করলে তৃণমূল ২৯৪-এর মধ্যে ২৯৩টি আসনই জিততে পারত!
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে অগ্রগামী ফুটবল মাঠের জনসভায় মমতা এ দিন বলেছেন, “আমরা যদি জোট না করতাম, মানুষ আমাদের সঙ্গে যে ভাবে আছেন, তাতে আমরা ২৯৩টি আসনই পেতাম!” আপাতত তিনি যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের মুখাপেক্ষী নন, তা বোঝাতে কলকাতা পুরসভার বিগত ভোটের ফল উল্লেখ করেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর বক্তব্য, “আমরা দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারে থাকা সত্ত্বেও কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে জোট করিনি। ১৪১টি আসনের মধ্যে আমরা ১০০টি আসন দখল করেছি। এই কারণেই আমরা একাই একশো!”
বস্তুত, পঞ্চায়েত ভোটের পরে লোকসভা নির্বাচনকেই এখন পাখির চোখ ধরছেন মমতা। উদ্যোগী হয়েছেন অ-কংগ্রেস, অ-বিজেপি জোট গড়ার। সেই সূত্রেই এ রাজ্যে কংগ্রেসের অস্তিত্ব নস্যাৎ করার চেষ্টায় তাঁর এ দিনের মন্তব্য বলে তৃণমূলের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা। আবার কংগ্রেসের একাংশের বক্তব্য, গত বিধানসভা ভোটে পরিবর্তনের হাওয়া যে মমতাকে সামনে রেখেই উঠেছিল, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু জোট থাকায় তৃণমূল এবং কংগ্রেস, এক দলের প্রাপ্ত ভোটে অন্যের ভোট মিশে আছে। সেখানে জোট না-থাকলে কী যুক্তিতে তৃণমূল প্রায় সব আসন জিতত, তার ব্যাখ্যা পরিষ্কার নয় ওই অংশের কাছে। |
প্রকাশ্যে কংগ্রেস নেতারা মমতার এ দিনের মন্তব্য অসার দাবি করে পাল্টা হুঁশিয়ারিই দিয়েছেন। রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর কটাক্ষ, “২০১৪ সালের লোকসভা ভোটটা উনি (মমতা) জোট না করে একা লড়ে দেখুন। তাতেই উনি বুঝতে পারবেন, ওঁর কপালে কী জুটবে!” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যেরও মন্তব্য, “যে কথা মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, তাতে তো মনে হচ্ছে ২৯৪টা আসনের মধ্যে ২৯৫টা আসন ওরা (তৃণমূল) পেত! কংগ্রেসের সাহায্যে ভোটে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে প্রতিনিয়ত মত বদলের রাজনীতি করছেন। লোকসভা ভোটেই উনি বুঝে যাবেন, ওঁর আসল চেহারাটা কী!”
পঞ্চায়েত ভোটের চতুর্থ ও পঞ্চম দফায় যে সব জেলায় ভোট, সেখানে কংগ্রেসের সাংগঠনিক ক্ষমতা রাজ্যের বাকি অংশের চেয়ে তুলনায় বেশি। মুখ্যমন্ত্রীর তোপের প্রেক্ষিতে ভোটের বাকি দফায় তৃণমূলের সঙ্গে সংঘাত আরও বাড়তে পারে বলে কংগ্রেসের একাংশের আশঙ্কা। প্রদীপবাবু এ দিন অভিযোগ করেছেন, “একা লড়ার জনসমর্থন থাকলে পঞ্চায়ত ভোটে রিগিং আর পুলিশের সাহায্য নিয়ে জেতার চেষ্টা করতেন না মুখ্যমন্ত্রী!” বিরোধীদের সব অভিযোগ নস্যাৎ করে মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, “সিপিএম এখন ক্ষমতায় নেই। তা সত্ত্বেও যেখানে একটু ওদের পায়ের তলায় মাটি রয়েছে, সেখানে সন্ত্রাস করছে। নির্বাচনের সময় একটি ছেলেকে পিটিয়ে মেরেছে।” তাঁর দাবি, গত দুই দফার ভোট পর্যন্ত পঞ্চায়েতে কোনও সন্ত্রাসই হয়নি।
কেন্দ্রীয় সরকারের মূল্যবৃদ্ধির এ দিন ফের কড়া সমালোচনা করেছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, “কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় প্রতি দিনই পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়িয়ে চলেছে। জনস্বার্থ-বিরোধী কাজ করছে। সেই কারণেই আমরা ওই সরকার ছেড়ে চলে এসেছি।” জোট-ত্যাগের আরও ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তাঁর সংযোজন, “মানুষের কষ্ট বোঝে না ওরা। ঠান্ডা ঘরে বসে যা খুশি, তা-ই করে চলেছে! আমরা মানুষের কষ্ট বুঝি।”
|