রাত পোহালেই ঐতিহ্যের সাক্ষী হতে চলেছে বিষ্ণুপুর। শহর মাতবে ঐতিহ্যবাহী উল্টোরথে। তার আগে আজ বুধবার বিকেল থেকেই রথতলায় শুরু হয়ে যাচ্ছে বকুলকুঞ্জ। ঢল নামবে বিগ্রহ দর্শনে। আর সন্ধ্যা থেকে রাতভর চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এক সময়ের মল্ল রাজধানী শুধুমাত্র একদিনের জন্য ভাগাভাগি হয়ে যাবে আট ও এগারো পাড়ায়। খেলা বা রাজনীতি নিয়ে নয়, উল্টোরথ উপলক্ষেই ভাগাভাগি হবে। এমনটাই প্রতি বছর হয়ে আসছে। সেই কোন সুদূর কাল থেকে। শোভাযাত্রা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলবে দুই তরফের। রাজপথে নামবে দুই রথ। এক দিকে আটটি পাড়া নিয়ে গঠিত কৃষ্ণগঞ্জ রথ উৎসব কমিটি, অন্য দিকে এগারোটি পাড়া নিয়ে গঠিত মাধবগঞ্জ রথযাত্রা উৎসব কমিটি। মঙ্গলবার দু’টি রথতলাতেই গিয়ে দেখা গেল তার জোর প্রস্তুতি। চটকদার আলোকসজ্জা, রকমারি বাদ্যযন্ত্রেসব হাজির।
তিন শতাব্দী প্রাচীন এই উল্টোরথে নিয়মও উল্টো। জগন্নাথ, বলরাম বা সুভদ্রা নয়, প্রায় ৩০ ফুট উঁচু কৃষ্ণগঞ্জের রথে চড়েন এলাকার আরাধ্য দেবতা শ্রীশ্রী রাধালাল জীউ। মাধবগঞ্জের রথে তাঁদের আরাধ্য দেবতা শ্রীশ্রী রাধামদনগোপাল জীউ। দুই রথের দুই প্রতীক। কৃষ্ণগঞ্জের গরুড়, মাধবগঞ্জের এঁড়ে গরু। |
মঙ্গলবার থেকেই উল্টোরথে সেজেছে শহর। ছবি: শুভ্র মিত্র |
একটা সময় উল্টোরথের এক মাস আগে থেকে শহরের দেওয়াল ছেয়ে যেত গরুড় আর এঁড়ে গরুর ব্যঙ্গচিত্রে। এখন মাটির কাজে আর কার্টুনে চলে দুই চরিত্রের লড়াই।
তবে এখন ইতিহাসের সঙ্গে মিশে গিয়েছে বর্তমান। দুই রথ কমিটিই এ বার শোভাযাত্রায় কলকাতা থেকে তাসা নিয়ে আসছে। কৃষ্ণগঞ্জে থাকছে চন্দননগরের আলো। বুধবার বকুলকুঞ্জে দুই আসরেই আয়োজন করা হয়েছে বাংলা ব্যান্ডের গানের ব্যবস্থা। গান থাকবেন স্থানীয় শিল্পীরাও। তবে শোভাযাত্রার জন্যই এখনও যাবতীয় আকর্ষণ রয়েছে। মাধবগঞ্জ রথযাত্রা কমিটির সম্পাদক মণি সরকার দাবি করেন, “আমাদের শোভাযাত্রায় ২৫টির বেশি চৌদল থাকছে। কলকাতার তাসা-সহ নানা ধরনের বাজনাও থাকবে। বাজেট আড়াই লক্ষের বেশি।” কম যান না কৃষ্ণগঞ্জ রথ উৎসব কমিটির সভাপতি রবিলোচন দে। দাবি করেন, “আমাদের বাজেট ৩ লক্ষ টাকা। এ বার শোভাযাত্রায় থাকছে ৩০টি সুসজ্জিত চৌদল। পিছনে কলকাতার ৪টি তাসা, ৪০টি ঢাক ও ৩টি কীর্তনের দল।”
বিষ্ণুপুর পুরসভার পুরপ্রধান তথা রাজ্যের শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যবাহী উল্টোরথে প্রচুর জনসমাবেশ হয়। সে জন্য আমরা রাস্তা পরিষ্কার করা, জল ও পথবাতির বিশেষ ব্যবস্থা করেছি। পুলিশ প্রশাসন শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছে।” |