অভ্যাসে ভোট দিতে ফেরা, বদল আসতে দেখেননি ওঁরা
রোজগারপাতি ছেড়ে মাস পয়লা থেকে হিঙ্গলগঞ্জের সাহেবখালির বাড়িতে পড়ে আছেন স্বপন মণ্ডল। রাজমিস্ত্রির কাজ করেন পুদুচেরিতে। বললেন, “গ্রামে কাজ কোথায়? আয়লার পরে তো অবস্থা আরও খারাপ। সেই সময় থেকেই ভিন্-রাজ্যে পড়ে আছি কাজের খোঁজে।”
গ্রামে ফিরলেন কেন? জবাব, “ভোট দিতে এসেছিলাম। ভোট পিছনোয় আর ফিরিনি। ভাবলাম, এসেছি যখন, ভোটটা দিয়ে যাই।” কীসের টানে ভোট দিতে ফেরেন? একগাল হেসে স্বপনবাবুর উত্তর, “বলতে পারেন অভ্যাস। বাপ-ঠাকুর্দার আমল থেকে এমনই তো চলছে।”
সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, হাসনাবাদের মতো এই সব এলাকায় বহু মানুষই কাজের খোঁজে ঘরছাড়া। তাঁদের অনেকেই ফিরেছেন স্রেফ ভোট দেবেন বলে। ২ জুলাই ভোটের দিন ঘোষণা হয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনায়। পরে ১৯ জুলাই দিন ঠিক হয়। সেই সুবাদে কয়েকটা দিন ছেলেপুলের সঙ্গে কাটালেন ঘরছাড়া মানুষগুলো।
আয়লাবিধ্বস্ত সুন্দরবনে বহু মানুষের অবস্থা এমনই। —নিজস্ব চিত্র।
তবে রাজনৈতিক দলের কাছে কারও বিশেষ প্রত্যাশা নেই। এলাকায় অর্থনীতি বলতে সামান্য চাষবাস। আর মেছোভেড়িতে মজুরি। মিন ধরেন কেউ কেউ। প্রাণ হাতে নিয়ে জঙ্গলে কাঁকড়াও ধরতে ঢোকেন। কিন্তু তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর দশা কাটে কই? বাঁধ মেরামতি, রাস্তা সারাইয়ের মতো কিছু কাজে ১০০ দিনের প্রকল্পে সামান্য টাকা মেলে। তা-ও অনিয়মিত। যোগেশগঞ্জের সর্দারপাড়ার বাসিন্দা খগেন মাহাতো বলেন, “আমরা কি সাধ করে দেশ-গাঁ ছেড়েছি? অনেক দুঃখে ছেড়ে গিয়েছি বাপ-দাদার ভিটে। না হলে তো না খেতে পেয়ে মরার দশা ছিল।” পঞ্চায়েত ভোটে যে-ই ক্ষমতায় আসুক, এলাকায় বিরাট উন্নয়নের আশা নেই কারও। তাঁদের বক্তব্য, “আমরা হলাম কোণঠাসা মানুষ। সুন্দরবনের এক কোণে পড়ে থাকি। আমাদের কথা কে ভাববে?”
বাস্তবিকই, কেউ ভাবেওনি এত দিনে সে সব কথা। শহর কলকাতার সঙ্গে ঠিকঠাক যোগাযোগ ব্যবস্থা সুন্দরবনের এই এলাকার মানুষের চিরকালীন দাবি। হাসনাবাদে কাটাখালি নদীর উপরে সেতু হলে দাবি অনেকটাই মিটত। কিন্তু সেতুর কাজ ২০০৬ সালে শুরু হলেও, বিশেষ এগোয়নি। সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় রেলপথ নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস ছিল প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। কিন্তু কোথায় কী! শিক্ষা-স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল তথৈবচ। আয়লার পরে ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি এমন সংখ্যাও কম নয়। সামশেরনগরে কুড়েখালি খালের বাঁধে বহু ঘরহারা ত্রিপল খাটিয়ে রাত কাটান এখনও। বার্ধক্যভাতা, বিধবাভাতা পাননি অনেকে। পঞ্চায়েত ভোটে অবশ্য জলের মতো টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানালেন স্থানীয় মানুষ। দরিদ্র এই এলাকায় প্রার্থীদের খরচের বহর দেখলে চোখ কপালে ওঠে।
ভোটের টানে ভিন্-রাজ্য থেকে কাজকর্ম ফেলে বরুণ সর্দার, বিমল গায়েন, অচিন্ত্য মাহাতোরা ফিরেছেন গ্রামে। এ ক’দিন রুজি-রোজগার বন্ধ। শোনা গেল, রাজনৈতিক দলগুলির তরফে ঢালাও ভুরিভোজ চলছে গ্রামে গ্রামে। নেতারা বলছেন, “ওঁরা এসেছেন আমাদের কথা ভেবেই। এটুকু সাহায্য না করলেই নয়।” সাহায্যের নামে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাও চলে। জানালেন গ্রামবাসীরাই। সামশেরনগরের জঙ্গল-লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা কমল মণ্ডল বলেন, “ক’দিন খিচুড়ি, ভাত-মাংস খাইয়ে ভোটটা কিনতে চায় ওরা। আর এই লোকগুলোরও বলিহারি। এত অল্পেতে খুশি হয়!” অনুন্নয়নের কথা নেতা-নেত্রীরা মানবেন কেন? সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সদস্য তথা হাসনাবাদে জেলা পরিষদের প্রার্থী মৃণাল চক্রবর্তীর দাবি, “কাজ যা হয়েছিল, তা বাম আমলেই। ২০০৮-এ পঞ্চায়েত ভোটের পরে তো বেশির ভাগ জায়গায় তৃণমূলই ক্ষমতায়। উন্নয়নের কাজ স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। অনেকে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে রোজগারের তাগিদে।”
পাল্টা বক্তব্যও আছে। রাজ্য পঞ্চায়েত সেলের নেতা তথা হাসনাবাদে জেলা পরিষদ আসনে তৃণমূল প্রার্থী নারায়ণ গোস্বামীর কথায়, “আগে অনেক বেশি লোক এলাকা ছেড়ে কাজের খোঁজে যেতেন। আমাদের আমলে তবু সেই প্রবণতা কিছুটা কমেছে। সুন্দরবনের উন্নয়ন কিছুই করেনি বামেরা। একফসলি জমিতে সেচ নেই। পানীয় জল নেই। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে কত আকর্ষণীয় হতে পারত এই এলাকা। সে সব কিছুই করেনি ওরা। আমরা সামান্য কিছু দিন ক্ষমতায় এসেছি। চেষ্টা করছি।”
সেই চেষ্টার ফসল অবশ্য সব ঘরে ওঠে না। বাড়ি-ঘর ছেড়ে কাজ খুঁজতে বেরিয়ে পড়েন আরও মানুষ।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.