সরকার যায় সরকার আসে। কিন্তু প্রকৃত আয়লা বিধ্বস্ত মানুষ কোনও সরকারের কাছ থেকেই বিভিন্ন জন কল্যাণমূলক প্রকল্পের সুবিধা পাননি। এমনই অভিমত কলকাতা হাইকোর্টের। ২০০৯ সালে আয়লার পর থেকেই আশ্রয়হীন। ঠাঁই নিয়েছেন পলিথিনের নীচে। এমনই ৩২টি পরিবার কলকাতা হাইকোর্টে একটু আশ্রয় দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। সেই প্রসঙ্গেই এই অভিমত হাইকোর্টের।
বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার এই মামলার রায় দিয়ে বলেন, এই সব মানুষদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য আগের সরকারের আমলে ‘আমার বাড়ি’ প্রকল্প নেওয়া হয়। বর্তমান সরকারের আমলে তা বদলে হয় গীতাঞ্জলি। সুন্দরবন পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম এই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে। কিন্তু ‘আমার বাড়ি’ থেকে ‘গীতাঞ্জলি’ হলেও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের কাছে এই সুবিধা পৌঁছয়নি।
রাজ্য সরকারের পাঠানো তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এই প্রকল্প রূপায়ণে ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। আয়লার প্রথম ধাক্কা সামলে নতুন করে বিধ্বস্ত মানুষদের আশ্রয় তৈরি করার কাজ শুরুর রিছুদিনের মধ্যেই ২০০৮ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। আয়লা বিধ্বস্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করে তারা। ২০১১ সালে রাজ্যে সরকার বদল হয়। কিন্তু আবেদনকারী পরিবারগুলি থেকে যায় পলিথিনের নীচেই। ‘আমার বাড়ি’ প্রকল্পে ঠিক হয়েছিল গৃহহীনদের বাড়ি করার জন্য দেওয়া হবে ১ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা। স্থানীয় ডেভলেপমেন্ট অফিসার এই গৃহহীনদের তালিকা তৈরি করে দেবেন জেলাশাসককে। জেলাশাসক ওই তালিকা খতিয়ে দেখে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। আগের সরকারের আমলে ওই তালিকা অনযায়ী ২৭৯৯ জন টাকা পান। বর্তমান সরকারের আমলে (২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে) বাড়ি করা হয় ১৩০০টি। দুই সরকার মিলিয়ে বাড়ি তৈরি করতে এখনও পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩ কোটি টাকা। পড়ে আছে ৯ কোটি টাকা। আর এই পড়ে থাকা টাকা নিয়েই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিচারপতি। টাকা পড়ে আছে। অথচ আশ্রয়হীন মানুষ সরকারের ওপর আর আস্থা রাখতে না পেরে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। দুই সরকারের কাছ থেকেই তাঁরা একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই পাননি।
ওই সব পরিবারের আবেদন শুনে বিচারপতি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকদের। পরিবারগুলি যাতে পলিথিনের ছাদ ছেড়ে একটি পাকা ছাদ পান তার ব্যবস্থা করতে বলা হয়। সুন্দরবন উন্নয়ন দফতর ২০১২ সালের ২৭ জানুয়ারি কোন কোন পরিবার গীতাঞ্জলি প্রকল্পে টাকা পাবে তার একটি নীতি তৈরি করেন। নীতির সঠিক রূপায়ণ হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে সচিবকে বলেছেন বিচারপতি। |