|
|
|
|
ভোটে ভেস্তেছে রথ, উল্টোরথে বাড়তি উৎসাহ
কিংশুক গুপ্ত • লালগড় |
ভোটের গেরোয় জমেনি রথের মেলা। উল্টোরথে তাই সুদে-আসলে পুষিয়ে নিতে চায় লালগড়।
রথযাত্রার পরদিন ১১ জুলাই পশ্চিম মেদিনীপুরে ভোট ছিল। প্রতি বছর যেখানে লালগড় রাজবাড়ির রথ দেখতে হাজার দশেক লোক হয়, এ বছর সেখানে ভোট-হাওয়ায় মেরেকেটে হাজার তিনেক জনসমাগম হয়েছিল। তবে, ভোটপর্ব মিটতেই প্রতিদিন সন্ধ্যায় ভিড় হচ্ছে। রথযাত্রার আয়োজক তথা লালগড় রাজবংশের উত্তরপুরুষ দর্পনারায়ণ সাহস রায় বলেন, “উল্টোরথের দিনে পনেরো-বিশ হাজার লোক হবে বলে আশা করছি।”
জনশ্রুতি, প্রায় তিনশো বছর আগে লালগড়ের তখন রাজা রসিকনারায়ণ সাহস রায়কে কষ্টি পাথরের তৈরি একটি কৃষ্ণের বিগ্রহ দান করেছিলেন এক সন্ন্যাসী। সেই বিগ্রহেরই নাম ‘রাধামোহন জিউ’। শুরুতে একাই ছিলেন রাধামোহন। জনশ্রুতি, পরে রাধামোহনের স্বপ্নাদেশে রাজার লোক-লস্করেরা লালগড়ের অদূরে বালি-দুমদুমির জঙ্গলের মাটি খুঁড়ে শ্রীমতীর অষ্টধাতুর বিগ্রহটিকে খুঁজে পেয়েছিল। |
লালগড়ের রথ। |
দর্পনারায়ণবাবু জানান, আগে ১৮ চাকা বিশিষ্ট দোতলা বিশাল কাঠের রথ ছিল। সেটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তেইশ বছর আগে আট চাকার লোহার রথ তৈরি করানো হয়। গত দু’দশক ধরে সেই রথেই চড়েন রাধামোহন ও শ্রীমতী।
এখন লালগড়ের বাবু পাড়ায় রয়েছে রাধামোহনের মন্দির। সারা বছর রাধামোহনের রথটি লালগড়ের রথ তলায় রাখা থাকে। রথযাত্রার দিন সাড়ম্বরে মন্দির থেকে রাধামোহন ও শ্রীমতীর বিগ্রহ নিয়ে আসা হয় রথ তলায়। রাধামোহন ও শ্রীমতীর সঙ্গে নিমকাঠে তৈরি জগন্নাথের একটি বিগ্রহ এবং অন্যান্য কয়েকটি বিগ্রহকেও রথে চাপানো হয়।
কেবলমাত্র এ দিনই রাধামোহন ও শ্রীমতীকে সোনার অলঙ্কারে সাজানো হয়। এ বারও তাই হয়েছে। রথযাত্রার দিন বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে, অমৃতযোগে এবার রথের রশি টানা শুরু হয়েছিল সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায়। স্থানীয় হাটচালায় মাসির বাড়িতে পৌঁছে যাত্রা শেষ হয়। এই ক’টা দিন মাসির বাড়িতেই নিত্যপুজো হচ্ছে রাধামোহনের। আর তাকে ঘিরেই ৯ দিন ধরে হয় মেলা।
লালগড়ের স্থানীয় লোক-সংস্কৃতি গবেষক পঙ্কজকুমার মণ্ডল বলেন, “আদতে রাজ পরিবারের উৎসব হলেও কয়েকশো বছর ধরেই লালগড়ের রথযাত্রা সর্বজনীন রূপ পেয়েছে।” |
মেলায় বসেছে হরেক দোকান। |
এ বার মেলায় প্রায় ৯০টি স্টল বসেছে। রয়েছে নাগরদোলা-সহ বিবিধ মনোরঞ্জনের আয়োজন। রথের মেলা উপলক্ষে লালগড়ে সাকার্সও এসেছে। তবে রথের দিন ও ভোটের দিন মেলায় লোকজন কম এলেও গত পাঁচ দিন ধরে বিকেল থেকে আশেপাশের গাঁ-গঞ্জের লোকজন ঝেঁটিয়ে আসছেন বলে উদ্যোক্তাদের দাবি।
মেলায় স্টল দেওয়া মনোহারি ও খেলনাসামগ্রীর বিক্রেতা খোকন ঘোড়াই, খাবার দোকানের মালিক দিলীপ নন্দীদের বক্তব্য, “এবার প্রথম দু’টো দিন বিক্রিবাটা তেমন হয়নি। তবে ভোটের পরদিন (১২ জুলাই) থেকে মেলায় লোকজন ভালই আসছেন। গভীর রাত পর্যন্ত উৎসাহী মানুষের ভিড় থাকছে। উল্টোরথের দিন ভিড়টা এবার লাগামছাড়া হবে বলেই মনে হচ্ছে।” লালগড়ের ধরমপুর গ্রামের মিতা সিংহ, আমডাঙার রঞ্জিত মাহাতোদের বক্তব্য, “ভোটের জন্য রথযাত্রার শুরুটা জমেনি। উল্টোরথের মেলা জমবেই।” |
ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
|
|
|
|
|