জোর লড়াই জেলা পরিষদে
নিশ্চিন্ত তৃণমূল, আশা ছাড়ছে না সিপিএমও
গ্রাম পঞ্চায়েতে এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে বিপর্যস্ত হবে মেনে নিলেও জেলা পরিষদ দখল নিয়ে আশা ছাড়ছে না সিপিএম। দলের অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির মতো জেলা পরিষদের ফল ততটা খারাপ হবে না। বরং হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তৃণমূল জেলা পরিষদের ক্ষমতা দখল করলেও হাতে গোনা কয়েকটি আসন বেশি পাবে। সিপিএম জেলা নেতৃত্বের মতে, জেলা পরিষদের ৬৭টি আসনের মধ্যে অন্তত ২২-২৩ টি আসনে জয় নিশ্চিত। আর ৮-৯টি আসনে জোর টক্কর হবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর ইতিমধ্যে দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা নিজেদের দায়িত্বে থাকা এলাকার প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করেন। তা নিয়ে দীর্ঘ সময় আলোচনা হয়।
জেলা পরিষদ তাহলে তৃণমূলের হাতেই যাচ্ছে? মঙ্গলবার সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের জবাব, “কেন? আমরা ৩৫-৩৬টা আসন পাব না কে বলব? হিসেব কষা হয়ে গিয়েছে? আমাদের এখনই হারিয়ে দেওয়ার কী আছে! আর তো কটা’দিন। দেখা যাক না কী হয়!” আপনাদের দলের পর্যালোচনাই তো বলছে ২২-২৩টির বেশি আসন পাবেন না? দীপকবাবু বলেন, “প্রাথমিক একটা পর্যালোচনা হয়েছে। তবে, তা চূড়ান্ত হয়।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অবশ্য মানছেন, জেলার অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা এ বার হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাঁর কথায়, “বহু বুথে ছাপ্পা ভোট হয়েছে। জোর-জুলুম হয়েছে। মানুষকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। কী ভাবে নির্বাচন হয়েছে, সকলেই দেখেছেন। নতুন করে কিছু বলার নেই।”
অন্য দিকে, বেশিরভাগ গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি তো বটেই জেলা পরিষদেও নিশ্চিত জয় দেখছে তৃণমূল। দলের অন্দরে আলোচনায় উঠে এসেছে ৬৭টির মধ্যে অন্তত ৪৭-৪৮ টি আসনে জয় নিশ্চিত। আরও ৫-৬টি আসনে জোর টক্কর হবে। যদিও এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে নারাজ তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়। শুধু বলছেন, “আমাদের জেলা পঞ্চায়েতের ফলাফলে প্রথম সারিতেই থাকবে। ফল খুব ভাল হবে।” বিরোধী সিপিএমের তোলা সন্ত্রাসের অভিযোগও উড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি। দীনেনবাবুর মতে, “সব মিথ্যে অভিযোগ। সর্বত্র শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। রাত পর্যন্ত মানুষ ভোট দিয়েছেন। ছাপ্পা ভোটই যদি হবে, তাহলে রাত পর্যন্ত ভোট হবে কেন?” পরক্ষণেই তাঁর সংযোজন, “বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটেছে। তবে, আমরা তা সমর্থন করি না।”
সিপিএম মনে করছে, জেলা পরিষদে সব থেকে ভাল ফল হবে জঙ্গলমহলে। বিনপুর-২ ব্লকে একটি, জামবনিতে একটি, সাঁকরাইলে একটি, গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের ২টি, ঝাড়গ্রামের একটি, নয়াগ্রামের একটি এবং শালবনির একটি আসনে জিতবেন দলীয় প্রার্থী। বিনপুর-১ ব্লকের একটি, সাঁকরাইলের একটি, ঝাড়গ্রামের একটি, বিনপুর-২ ব্লকের একটি আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। জঙ্গলমহলের বাকি ব্লকগুলো অর্থাৎ গড়বেতা-২ (গোয়ালতোড়), মেদিনীপুর সদর, গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকে বাম প্রার্থীদের খাতা খোলা অসম্ভব। দলের প্রাথমিক পর্যালোচনা অনুযায়ী, ডেবরার ২টি, খড়্গপুর-১ ব্লকের ২টি, খড়্গপুর-২ ব্লকের ১টি, দাঁতন-১ ব্লকের ১টি, নারায়ণগড়ের ২টি, পিংলার ১টি, সবংয়ের ১টি, কেশিয়াড়ির ১টি আসনে দলীয় প্রার্থীর জয় নিশ্চিত। দাসপুর-২ ব্লকের ২টি, দাসপুর-১ ব্লকে ১টি, ঘাটালের ১টি আসনে দলীয় প্রার্থী জিতবেন। এছাড়া, কেশিয়াড়ির ১টি, চন্দ্রকোনা-১ ব্লকে ১টি, খড়্গপুর-২ ব্লকে ১টি, মোহনপুরের ১টি আসনে জোর লড়াই হবে। তবে একদা লালদুর্গ গড়বেতা ১ ও ২ ব্লক এবং কেশপুর যে শূন্য হাতেই ফেরাবে, তা মানছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
গেল বছর মে মাস। দলের পার্টি কংগ্রেস শেষ হয়েছে। জেলার নেতা-কর্মীদের নিয়ে মেদিনীপুরে এক আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। সে দিন তিনি কবুল করেছিলেন, “বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রতিটি জেলা থেকে যে রিপোর্ট এল, তা সঠিক ধরে নিয়ে উজবুক বনে গেলাম!” পঞ্চায়েত ভোটের রিপোর্টের পরিণামও তাই হবে না তো? জেলা সিপিএমের এক প্রবীণ নেতা যদিও বলছেন, “সে সম্ভাবনা কম। আমরা নিখুঁত পর্যালোচনা করছি। দেখেছি, তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি দখলের প্রবণতা যতটা বেশি ছিল, জেলা পরিষদ দখলের প্রবণতা ততটা ছিল না! ফলে, জেলা পরিষদে আমরা লড়াইয়ের জায়গায় আছি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.