শিকেয় উঠেছে পড়াশোনা
স্কুল-কলেজের ঘর নিয়ে স্ট্রং রুম, গণনাকেন্দ্রও
কটা সময় জঙ্গলমহলের স্কুলগুলোয় যৌথ বাহিনীর ক্যাম্প তৈরি নিয়ে শোরগোল পড়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরে। বাহিনী থাকার জেরে বহু স্কুলে দিনের পর দিন ব্যাহত হয়েছিল পঠনপাঠন। আর এ বার নির্বাচনের কর্মযজ্ঞে জেলার ২৯টি স্কুল ও কলেজে পড়াশোনা শিকেয় উঠেছে।
অধিকাংশ জায়গাতেই স্কুলে ভোটকেন্দ্র হয়েছিল। কিন্তু সে তো একদিনের ব্যাপার। সমস্যা হচ্ছে এই ২৯টি স্কুল-কলেজে নির্বাচনের ‘ডিস্ট্রিবিউশন কাম রিসেপশন সেন্টার’ (ডিসিআরসি) তৈরি করা হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে স্ট্রং রুম। সেখানেই রয়েছে ব্যালট বাক্স। আগামী ২৯ জুলাই ভোট গণনা পর্যন্ত এই সব স্কুল-কলেজ কড়া পুলিশি পাহারায় থাকবে। অর্থাৎ ১১ জুলাই ভোটের দিন থেকে ২৯ জুলাই গণনা পর্যন্ত এই সমস্যা চলবে। স্ট্রং রুম রয়েছে, এমন কিছু স্কুল এখনও খোলেনি। চলতি মাসের গোড়া থেকেই ছুটি চলছে। বাকি স্কুলগুলো খুললেও স্বাভাবিক পঠনপাঠন হচ্ছে না। কোথাও পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পঠনপাঠন বন্ধ। কোথাও আবার পঞ্চম, দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির পঠনপাঠন বন্ধ রয়েছে। বাকি ক্লাস কোনওমতে হচ্ছে।
যে সব স্কুলে স্ট্রং রুম রয়েছে, সেখানে কী পঠনপাঠন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে? পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সঙ্ঘমিত্র মাকুড় বলেন, “কখওনই না। এমন নির্দেশ দেওয়া হবে কেন? সব স্কুল খোলা থাকবে।” তাঁর কথায়, “স্কুলগুলোর কিছু রুমে ব্যালট বক্স রয়েছে। যেগুলো স্ট্রং রুম। সেই রুমগুলো ছেড়ে বাকি রুমে ক্লাস হবে। স্কুলগুলোয় এ ভাবে ক্লাস হচ্ছে বলেই তো জানি। একটু সমস্যা হয়তো হবে। তা মানিয়ে নিতে হবে।”
স্কুল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া না হলেও একাধিক স্কুলে পঠনপাঠন শিকেয় উঠেছে। যেমন ডেবরার বালিচক ভজহরি ইনস্টিটিউশন। এই স্কুল এখন বন্ধ। স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক রঞ্জিত পাল বলেন, “স্কুল খুললেও তো সমস্যা। ক্লাস হবে কোথায়? ভোটের জন্য ১৭টি ঘর নেওয়া হয়েছিল। এখন বলা হচ্ছে, ৫টি ঘর ছেড়ে দেওয়া হবে। বাকি ক্লাস হবে কোথায়? এ ভাবে তো স্কুল চালানো সম্ভব নয়।” তিনি এ-ও মানছেন, “স্কুল টানা বন্ধ থাকায় পড়াশোনার প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে।” নির্বাচনের পর যে সব স্কুল খোলা হয়েছে, সেখানেও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়। নামমাত্র ক্লাস হচ্ছে। যেমন লালগড় রামকৃষ্ণ বিদ্যালয় বা মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল (বালক)। লালগড়ের এই স্কুল ৮ জুলাই থেকে বন্ধ ছিল। খুলেছে মঙ্গলবার। তবে ৮টি ঘর এখন ব্যবহার করতে পারবেন না স্কুল-কর্তৃপক্ষ। তাই পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হয়েছে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস হচ্ছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শঙ্করচন্দ্র পাল বলেন, “একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে, সকলকেই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।” মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে (বালক) পঠনপাঠন শুরু হয়েছে সোমবার থেকে। পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এই স্কুলে এখন পঞ্চম, দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস হচ্ছে না। ছুটি দেওয়া হয়েছে। বাকি ক্লাসগুলো হচ্ছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিলীপ দাস বলেন, “সব ক্লাস চালু রাখার মতো পরিস্থিতি নেই। তা-ও দ্বাদশ শ্রেণির প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস হচ্ছে।”
একই পরিস্থিতি কলেজগুলোয়। প্রতি ব্লকে একটি করে ডিসিআরসি তৈরি হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৯টি ব্লক। এর মধ্যে ২৩টি ব্লকে স্কুলে এবং ৬টি ব্লকে কলেজে ডিসিআরসি তৈরি হয়েছে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী আজ, বুধবার থেকে কলেজে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর কথা। কিন্তু এই ৬টি কলেজে তা করা যাবে কিনা সংশয়।
কেশপুর কলেজ এবং গড়বেতা কলেজে ডিসিআরসি রয়েছে। কেশপুর কলেজের অধ্যক্ষ সুশান্ত দোলুই বলেন, “কলেজের অফিস ঘরই সে ভাবে খুলতে দিচ্ছে না। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা আপত্তি করছেন। ক’দিন আগে তৃতীয় বর্ষের ফলপ্রকাশ হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের মার্কশিট দেওয়া নিয়ে সে কী সমস্যা।” তাহলে? প্রথম বর্ষের ক্লাস এ মাসে শুরু হবে না? সুশান্তবাবুর বক্তব্য, “দেখি কী করা যায়। সমস্যার কথা সংশ্লিষ্ট সকলকেই জানিয়েছি।” একই সমস্যা গড়বেতায়। গড়বেতা কলেজের অধ্যক্ষ রঞ্জিত চৌধুরী বলেন, “বুধবার থেকে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। শুক্রবার থেকে ক্লাস শুরুর চেষ্টা হচ্ছে।”
একটা সময় জঙ্গলমহলের স্কুলগুলোয় যৌথ বাহিনীর ক্যাম্প ছিল দীর্ঘ দিন। তখন সবে মাওবাদী দমন অভিযান শুরু হয়েছে। ক্যাম্প হওয়ায় দীর্ঘ দিন স্কুলগুলিতে পঠনপাঠন ব্যাহত হয়। সমস্যায় পড়ে ছাত্রছাত্রীরা। সেই সময় যৌথ বাহিনীর বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ উঠেছিল। স্কুল ক্যাম্পাসের গাছ কেটে ফেলা, বেঞ্চকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা, নলকূপ অকেজো করে দেওয়া, এমনকী ছাত্রছাত্রীদের জন্য আনা কম্পিউটার নষ্ট করে দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে জওয়ানদের বিরুদ্ধে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.