শহরের বিভিন্ন রাস্তায় জঞ্জালের স্তূপ। নাকেমুখে কাপড় চাপা দিয়ে কোনও রকমে ওই রাস্তায় চলাফেরা করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। কোথাও স্কুল, কলেজ অফিসের সময় রাস্তা আটকে আবর্জনার ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে। বিধান মার্কেটের মতো বাজার লাগোয়া রাস্তাতেও আবর্জনার স্তূপ জমে থাকে দিনভর। শহরে ঢোকার মুখেই মহানন্দা নদীখাতে খাটালের সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়েছে। বস্তুত, শিলিগুড়ির পরিবেশ পড়ে রয়েছে সেই তিমিরেই।
বারবার অভিযোগ তোলা হলেও শহরে প্রবেশের মুখে সেই খাটাল সরানো হয়নি। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে থার্মোকল-জঞ্জালের সমস্যা। অথচ পুরসভার তরফে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন তা নিয়ে উদাসীনতার অভিযোগও উঠেছে। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে অবশ্য পরিবেশ সচেতনতায় প্রচারে নেমেছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ। প্রচার মিছিল-সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অথচ শহরের পরিবেশ রক্ষার প্রশ্নে খাটাল সারাতে কর্তৃপক্ষ কেন উদ্যোগী নন সেই প্রশ্ন তোলেন সচেতন বাসিন্দারা। |
এই খাটাল থেকেই দূষণ ছড়াচ্ছে বলে ক্ষোভ বাসিন্দাদের।—নিজস্ব চিত্র। |
মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “খাটাল শিলিগুড়ি শহরের বড় সমস্যা। পুরসভার একার পক্ষে তা সরানো সম্ভব নয়। তবে আমরা সচেষ্ট। প্রশাসনের তরফেও এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তরফে মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যান হচ্ছে। ওই প্রকল্পে খাটাল সরানোর বিষয়টিও দেখা দরকার।” মেয়র জানান, প্রশাসনের তরফে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে পুরসভা এ ব্যাপারে সমস্ত সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া মহানন্দা নদী খাতের একটা বড় অংশে ওই খাটাল গড়ে উঠেছে। তাতে পরিবেশ দূষণ ঘটলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির ভোট ব্যাঙ্কের কথা ভেবে খাটাল উচ্ছেদের প্রশ্নে কেউই সক্রিয় নন। দীর্ঘদিন ধরে বামেরা পুরবোর্ডে থাকার সময় খাটাল সরাতে উদ্যোগী হননি। ক্ষমতা বদলের পর কংগ্রেস পুর বোর্ড গড়লে পরিবেশ বিভাগের দায়িত্ব পান সুজয় ঘটক। সে সময় তিনি আলাপ আলোচনা শুরু করলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এর পর কংগ্রেস-তৃণমূলোর যৌথ পুর বোর্ডে পরিবেশ বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা। তাঁর চেষ্টাও আলাপ আলোচনাস্তরেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। বর্তমানে পরিবেশ বিভাগের মেয়র পারিষদ কাজল চন্দ। তিনি এখনও এ ব্যাপারে কিছু করে উঠতে পারেননি।
নদী খাতে খাটাল থেকে ছড়াচ্ছে দূষণ। নদীতে গরু মোষ স্নান করানো হচ্ছে। পরিবেশপ্রেমী সংস্থা হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার্স অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “শহরের মাঝখানে এভাবে খাটাল থাকা উচিত নয়। প্রশাসনের তরফে কড়া পদক্ষেপ করা উচিত।” খাটাল সরাতে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি সহমত না হওয়াতেই সমস্যা রয়ে গিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
খাটালের পাশাপাশি থার্মোকলের জঞ্জাল সমস্যা বাড়িয়েছে শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারে। ভিন রাজ্য থার্মোকলের বাক্সে মাছ আমদানি হয়। মাছ নামানোর পর বাক্সগুলি ফেলে দেওয়া হয়। তা থেকেই থার্মোকলের স্তূপ জমে ওঠে বলে অভিযোগ। পরিবেশ বিভাগের মেয়র পারিষদ জানান, থার্মোকলের সমস্যা মেটাতে কী করা যায় তা ভাবা হচ্ছে। |