সম্পাদকীয় ২...
অবারণীয়
সে আর আচম্বিতে আসিবে না। ‘টেলিগ্রাম’ হাঁক দিয়া নীরব পল্লিকে সচকিত করিয়া তুলিবেন না পোস্টম্যান। গৃহস্থকে আর ভয়ে ভয়ে খুলিতে হইবে না সেই বার্তা। পড়িতে হইবে না ‘মাদার ইজ ইল. কাম শার্প.’। ভারতে সরকারি টেলিগ্রাম ব্যবস্থা রবিবার সরকারি ভাবেই বিদায় লইল। সে আর ফিরিবে না। আর ফিরিবার প্রয়োজনও নাই। যোগাযোগ ব্যবস্থায় নূতনতর প্রযুক্তির বিস্তার যেখানে পৌঁছাইয়াছে, তাহাতে টেলিগ্রাম আরও আগেই উঠিয়া যাইবার কথা ছিল। এই পরিষেবাটির ব্যবহার অনেক আগেই প্রায় উঠিয়া গিয়াছে। অপ্রয়োজনীয় বলিয়া এই লাভহীন পদ্ধতি অবশেষে বন্ধ করা হইল। বস্তুত, ভারতীয় ডাক বিভাগের ভূমিকা কী হইবে, তাহা নূতন করিয়া ভাবিবার সময় আসিয়াছে। ডাক বিভাগের পুরাতন রীতি পদ্ধতি ও উপাদানগুলি আগামী দিনে জাদুঘরের বিষয় হইবে সন্দেহ নাই। যদি এই বিভাগকে সামগ্রিক ভাবে টেলিগ্রামের অনুসারী হইতে না হয়, তবে সম্পূর্ণ নূতন ভাবনা প্রয়োজন। ডাকঘরের পরিকাঠামোটি দেশব্যাপী বিস্তৃত, তাহাকে বাণিজ্যিক কিংবা সামাজিক অথবা দ্বিবিধ প্রয়োজনে কাজে লাগানো সম্ভব, কিন্তু সে জন্য যথার্থ সুপরিকল্পনা জরুরি।
টেলিগ্রামের শেষ দিনে অনেকে তারবার্তা পাঠাইয়াছেন। প্রদীপ নিবিবার আগে জ্বলিয়া ওঠে। স্মৃতির প্রদীপও তাহার ব্যতিক্রম নয়। স্মৃতি দুর্মর। স্মৃতি অনেকেরই বাঁচিবার রসদ। এমনকী, নস্টালজিয়া বা অতীতচারণকে ব্যাধি না বলিয়া সতেজ থাকিবার উপায় বলিয়াও ভাবা যাইতে পারে, অধুনা মনোবিজ্ঞান তাহার পক্ষে কিছু যুক্তিও সরবরাহ করিয়াছে। তবে তাহা ভিন্ন প্রশ্ন। সত্য ইহাই যে, প্রযুক্তির অভূতপূর্ব বিবর্তনে মানবজীবনের নিত্য ব্যবহৃত বহু উপকরণ, নিত্যচর্চিত বহু অভ্যাস অতি দ্রুত স্মৃতিতে পরিণত হইতেছে। কলিকাতার জনপ্রিয় সংগীত-বিপণি ঝাঁপ ফেলিবার সাম্প্রতিক ঘটনা তাহার অভ্রান্ত প্রমাণ। কয়েক বৎসরের মধ্যেই এক প্রযুক্তি বাতিল হইয়া অন্য আসিতেছে। এই প্রক্রিয়া অবারণীয় এবং অমোঘ। ইহার বিরুদ্ধে আন্দোলন বা প্রতিরোধ নিষ্ফল, ক্ষোভ অর্থহীন। পুরাতনকে ধরিয়া রাখিবার প্রয়াস না করিয়া নূতনের সঙ্গে মানাইয়া লইবার প্রয়োজন বড় হইয়া উঠিতেছে। সুতরাং, কালের অনিবার্য নিয়মেই, ‘টেলিগ্রাম এক্সপায়ার্ড’।
তবে টেলিগ্রামের বদলে নূতন যে প্রযুক্তি আসিয়াছে, তাহা আর এক দিক হইতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আগে টেলিগ্রামের মাধ্যমে সংবাদ প্রেরণ করিতে চাহিলে মধ্যস্থ লাগিত। ডাকঘরে গিয়া তারবার্তা লিখিয়া এক জনকে দিতে হইত, তিনিই পাঠাইতেন। যিনি যাঁহাকে আনন্দবার্তা বা শোকবার্তা পাঠাইতে আগ্রহী, তিনি কিন্তু সরাসরি তাঁহাকে পাঠাইতে পারিতেন না। মাঝে এক-দুই জন উপস্থিত। এখন মোবাইলে বা ই-মেলে সরাসরি বার্তা পাঠানো সম্ভব। মধ্যবর্তীরা সেখানে অপ্রয়োজনীয়। প্রিয়জনকে ব্যক্তিগত ভাবে সরাসরি খবর পাঠাইতে পারিলে মানুষের মনের ভার অনেক লাঘব হয়। এই ব্যক্তিগত স্পর্শ টেলিগ্রাম প্রযুক্তিতে ছিল না। সাম্প্রতিক কালের দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থায় তাহা আছে। কাজেই নূতন পদ্ধতি কেবল দ্রুতই নহে, ব্যক্তিগতও বটে। মানুষের পক্ষে ইহা আশীর্বাদস্বরূপ। দূরাগত পুত্রকন্যা পিতা-মাতার কণ্ঠস্বর সরাসরি শুনিতে পাইতেছেন, এমনকী চাহিলে ওয়েব-ক্যামে ছবিও দেখিতে পাইতেছেন। সুতরাং, বিদায় টেলিগ্রাম। নব্যপ্রযুক্তি কেবল হরণ করে নাই, অনেক কিছু প্রদানও করিয়াছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.