|
|
|
|
কৌশলী সিদ্ধান্ত ভাগবতের |
প্রধানমন্ত্রী পদে তুলে ধরা হচ্ছে না মোদীকে |
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
লোকসভা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর নাম ঘোষণা করবে না বিজেপি।
লালকৃষ্ণ আডবাণীকে আগেই এ কথা জানিয়েছিলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। আজ মোদীর সঙ্গে বৈঠকে ভাগবত তাঁকেও এই বার্তা দিয়েছেন। যদিও মোদীকে যে প্রধানমন্ত্রীর পদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে না, সেই কথাটা প্রকাশ্যে জানাবে না সঙ্ঘ পরিবার। কৌশলগত কারণেই এ বিষয়টিতে আপাতত ধোঁয়াশা রাখা হচ্ছে।
কী সেই কৌশল?
গোয়ার দলীয় বৈঠকে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী প্রচার কমিটির প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনিই হবেন বিজেপি-র নির্বাচনী প্রচারের প্রধান মুখ। মোদীকে দিয়ে প্রতিটি রাজ্যে কমপক্ষে চার-পাঁচটি করে বড় জনসভা করার পরিকল্পনা রয়েছে। সঙ্ঘের কৌশল হল, মূলত উত্তরপ্রদেশে এবং বিহারে আসন বাড়ানোর জন্য আপাতত মোদীকে সর্বশক্তি দিয়ে ব্যবহার করা। সেটা করতে গিয়ে যদি দেখা যায় যে, দেশ জুড়ে মোদীর নেতৃত্বে হিন্দুত্বের বিষয়ে সহানুভূতির ঝড় উঠছে, যেমনটা হয়েছিল আডবাণীর রথযাত্রার সময়ে, তখন বিজেপি-র সংসদীয় বোর্ড নতুন করে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর বিষয়টি পর্যালোচনা করবে।
তবে শেষ পর্যন্ত যদি সেটা না-হয়, তা হলে সম্ভবত এ বারই প্রথম প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ছাড়াই ভোটে যাবে বিজেপি। অতীতে জনসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার পর উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনেও অটলবিহারী বাজপেয়ীকে ছায়া-মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের অনেক বেশি দাপট। তবু আডবাণীরা তখন বলেছিলেন, ছায়া-মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে রেখে ভোটে যাওয়াটা জরুরি। এমনকী বিজেপি সংগঠন-নির্ভর দল হলেও। ফলে কংগ্রেস সাধারণ ভাবে ভোটের পরে নেতা নির্বাচন করলেও বিজেপি কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই এক জন ব্যক্তিকে সামনে রেখে ভোটে যায়। এ বারই তার ব্যতিক্রম হতে চলেছে।
আডবাণী ভাগবতকে বলেছেন, তিনি এত দিন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। কিন্তু এখন যা রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে প্রার্থী ঘোষণা না-করাই বাঞ্ছনীয়। আডবাণী সঙ্ঘকে এ-ও জানিয়েছেন যে, মোদী যদি প্রধানমন্ত্রী হন, তাতে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। আজ দলের জনপ্রিয়তম মুখ যে মোদীই, সে কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। গুজরাতের সাফল্য এবং ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির জোরে মোদী সেটা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু সঙ্ঘ যদি এখন আরও এক ধাপ এগিয়ে মোদীর নাম প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে দেয়, তাতে দলের অসুবিধা হবে বলেই মনে করছেন আডবাণী।
কারণ? আডবাণী শিবিরের প্রথম যুক্তি, ’৯১ সালে রথযাত্রার সময়ে যে ধর্মীয় উন্মাদনা দেখা দিয়েছিল, আজ তা অনুপস্থিত। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর রামমন্দিরের বিষয়টিও মৃত। এই অবস্থায় কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব গোটা প্রচারটাকে মোদী-কেন্দ্রিক করে তীব্র রাজনৈতিক মেরুকরণের দিকে যেতে চাইছেন। যাতে মনমোহন সিংহ সরকারের দুর্নীতি, নীতিপঙ্গুত্ব, এবং মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয়কে আড়াল করার সুযোগ পাওয়া যায়।
দ্বিতীয়ত, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করার পর যদি সাম্প্রদায়িক অশান্তি বেড়ে যায়, তাতে বিজেপি-র লাভের থেকে লোকসান বেশি হবে। সংখ্যালঘুরা বিজেপি-র নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক নয়। কিন্তু ভারতের বিপুল হিন্দু জনসমাজের একটা বড় অংশই ধর্মীয় উন্মাদনার বিপক্ষে।
বিজেপি সূত্র বলছে, রাজনাথ সিংহ, সুষমা স্বরাজ, যশোবন্ত সিংহ এমনকী মুরলীমনোহর জোশীর মতো নেতারাও বুঝতে পারছেন, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মোদীর নাম ঘোষণা করে দেওয়ার মধ্যে একটা রাজনৈতিক জুয়া খেলা রয়েছে। তাই নাম ঘোষণা ছাড়া মোদীকে যতটা গুরুত্ব দেওয়া দরকার, ততটা বিজেপি দেবে।
মোদী শিবির অবশ্য এত সহজে রণে ভঙ্গ দিতে রাজি নয়। এটা ঠিক যে, মোদী নিজে আজ ভাগবতকে বলেছেন, সঙ্ঘের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে তাঁকে যে কাজ করতে বলা হবে, সেটা করতে তিনি রাজি। ঘটনাচক্রে আজ পুরীতে দলীয় নেতাদের সভায় মোদীর উপস্থিতিতেই তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী করার দাবি ওঠে। জবাবে মোদী বলেন, “ভোটের পর কে নেতা হবেন, সেটা এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখন বিজেপি-কে ক্ষমতায় ফেরানোই আমাদের লক্ষ্য।” কিন্তু তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতাদের মতে, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভাবে নাম ঘোষণা না-হলে দলীয় কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে। আর সেটা হলে মোদীকে সামনে রেখে লোকসভায় ২০০টি আসন পাওয়ার যে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে, তা ভেস্তে যাবে।
কিন্তু মোদী-বিরোধীদের মতে, ২০০ আসন যে পাওয়া যাবেই, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। আর তার পরেও সরকার গড়তে ৭২ সাংসদের সমর্থন দরকার হবে। সে জন্য এখন থেকেই দূত মারফত বার্তা পাঠানো হচ্ছে নীতীশ কুমারকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ভোট-পরবর্তী সেই সম্ভাব্য রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে মোদীর নাম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে দেওয়াটা মারাত্মক ভুল হবে।
এই টানাপোড়েনের মধ্যে আরএসএস-এর পরামর্শ: বর্ষার পর নির্বাচনী প্রচার ঠিকমতো শুরু হবে। পাঁচ মাস দেখে ডিসেম্বরে আবার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হোক। |
পুরনো খবর: নির্বাচনে নেতা মোদীই, ফের বার্তা দিল সঙ্ঘ |
|
|
|
|
|