সদ্য প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানকেই ভোট দিতে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সোমবার সকালে দুর্গাপুরের জেমুয়া পঞ্চায়েতের গত পাঁচ বছরের প্রধান সিপিএমের দেবী রুইদাসকে বুথের পথে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা আটকে দেয় বলে অভিযোগ। রাতে নির্বাচন কমিশনের কাছে ফ্যাক্স পাঠিয়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানান সিপিএম নেতৃত্ব।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেমুয়া পঞ্চায়েতের ৬ নম্বর আসনে কালীগঞ্জ প্রাথমিক স্কুলে ৮৩/২ নং বুথে ভোট দিতে যাচ্ছিলেন দেবী রুইদাস। ওই বুথের ভোটার তালিকায় তাঁর ক্রমিক নম্বর ছিল ১১৬। তিনি অভিযোগ করেন, রাস্তার মোড়ে প্রথমে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা, পরে বহিরাগত মোটরবাইক বাহিনী তাঁকে আটকায়। তারা জানিয়ে দেয়, ভোট দিতে দেওয়া হবে না। সদ্য প্রাক্তন প্রধানের কথায়, “শুধু আমাকে না, অন্য অনেককেও ওরা বলে, ‘আপনাদের ভোট দিতে যেতে হবে না। আমরা দিয়ে দেব।’ বুথে গিয়ে অভিযোগ জানানোর কোনও সুযোগ পাইনি।” তাঁর আরও অভিযোগ, “আমি ‘পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান’ বলে পরিচয় দিতে ফুঁসে ওঠে ওরা। বলে, ‘ও সব বলে লাভ নেই। যেই হও, ভোট তোমায় দিতে দেব না।’ ফিরে আসতে তাই বাধ্য হই।”
গত বার জেমুয়া পঞ্চায়েতের ৯টি আসনে সব ক’টিতেই জেতে সিপিএম। প্রধান হন দেবী রুইদাস। তিনি অভিযোগ করেন, ২০১১ সালে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে তাঁকে ঘেরাও করে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয় পঞ্চায়েতে। নিউ টাউনশিপ থানার পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করেছিল। এর পর থেকে দু’বছর তাঁকে পঞ্চায়েত অফিসে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, “এত দিন লাগাতার হুমকি সহ্য করতে হয়েছে। পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।” সোমবারের ঘটনার ব্যাপারে সিপিএমের জেমুয়া-বিধাননগর লোকাল কমিটির সম্পাদক পঙ্কজ রায়সরকার নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। তিনি জানান, কমিশনের কাছে পুনর্নির্বাচন দাবি করা হয়েছে।
দুর্গাপুর শহর লাগোয়া দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের জেমুয়া পঞ্চায়েতে ১১টি আসনের মধ্যে চারটিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। সিপিএমের অভিযোগ, ভোটের দিন কালিগঞ্জ, টেটিখোলা, শঙ্করপুরের ৮৪ থেকে ৮৮ নম্বর ও পরানগঞ্জের ৭৮ নম্বর বুথ দখল করে ছাপ্পা দিয়েছে তৃণমূল। পঙ্কজবাবুর অভিযোগ, রবিবার রাত থেকেই তাঁদের নির্বাচনী এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয় তৃণমূল। তা অগ্রাহ্য করে সোমবার তাঁরা বুথে গেলেও সেখান থেকে তাঁদের বের করে দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, “এর পরে কার্যত দখল হয়ে যায় বুথগুলি। একতরফা ভোট করে তৃণমূল। বাইরে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভোটারদের আটকেও দেওয়া হয়। এমনকী প্রাক্তন প্রধানকেও ভোট দিতে দেওয়া হয়নি।”
তৃণমূল অবশ্য ভোট দিতে বাধা বা ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। দলের দুর্গাপুর ৩ নম্বর ব্লক সভাপতি সুনীল চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “মানুষ পাশে নেই। ভোটের ফল কী হবে, তা সিপিএম জানে। তাই আগে থেকে মুখরক্ষার ব্যবস্থা করে রাখছে।” |