বাসের সংখ্যা বাড়লেও বাসস্টান্ড জুড়ে গুমটি আর দোকানের ভিড়ে বাস ধরাটাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন দুর্গাপুরবাসী। তবে শহরের সিটিসেন্টার বাসস্ট্যান্ড ঘিরে এমন অভিযোগ নতুন নয়। বাসিন্দাদের দাবি, বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের বসার জায়গা নেই, ফুটপাথ দখল করে দোকান গড়ে উঠেছে। এমনকী একাধিক রুটের বাস একসঙ্গে ঢুকলে দাঁড়ানোরই জায়গা হয় না। তবে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) চেয়ারম্যান, বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, শহরের ডিভিসি মোড়ের কাছে অত্যাধুনিক বাসস্ট্যান্ড গড়ার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। |
বাসস্ট্যান্ডের ছাউনিতে দোকান। রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রীরা।—নিজস্ব চিত্র। |
এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর নোটিফায়েড এরিয়া থাকাকালীন এই সিটিসেন্টার বাসস্ট্যান্ডটি গড়ে উঠেছিল। তখন পরিবহণ ব্যবস্থা ছিল পুরোপুরি সরকারী। সারা দিনে কয়েকটি মাত্র বাস চলত। কিন্তু তারপরে শহর ক্রমশ বেড়েছে। পুরসভা হয়েছে দুর্গাপুর। গড়ে উঠেছে বহু ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানেজমেন্ট কলেজ, শিল্প-কারখানা। এরই সঙ্গে একাধিক শপিং মল, তারকা হোটেল, মাল্টিপ্লেক্স, বিভিন্ন বেসরকারি ও বহুজাতিক সংস্থার কার্যালয় গড়ে উঠেছে শহরে। ফলে কর্মসূত্রে বাইরে থেকে শহরে আসা লোকের সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাসের সংখ্যাও। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই ঝকঝকে দুর্গাপুরের সঙ্গে একেবারেই বেমানান এই বাসস্ট্যান্ড। তাই নতুন বাসস্ট্যান্ডের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। পরিবহন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সারাদিনই এই বাসস্ট্যান্ড থেকে অজস্র বাস ছাড়ে। প্রতি আধঘন্টা অন্তর কলকাতাগামী বাস ছাড়ে। প্রতিদিন শিলিগুড়ি, জামসেদপুর, টাটা, ভুবনেশ্বর, পুরীগামী বাস রয়েছে। এছাড়া বর্ধমান, বোলপুর, বহরমপুর, মালদহ, কোচবিহার, নবদ্বীপ, আসানসোল, বরাকর, চিত্তরঞ্জন দেওঘর, রাঁচি, কল্যাণী, হাবড়া, কৃষ্ণনগর-সহ বিভিন্ন রুটের বাস এই বাসস্ট্যান্ডে থামে। এর বাইরে কয়েকশো টাউন সার্ভিস বাস রয়েছে। কিন্তু বাসের সংখ্যা বাড়লেও বাসস্ট্যান্ডের পরিধি বাড়েনি। উল্টে কমে গিয়েছে বলে অভিযোগ নিত্যযাত্রীদের। তাঁরাই জানান, যাত্রীদের বসার জায়গা, ফুটপথ দখল করে গড়ে উঠেছে বহু গুমটি, সাইকেল স্ট্যান্ড। শহরবাসীর দাবির সঙ্গে একমত এডিডিএ’র চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমি নিজে কয়েকদিন ধরে সকাল-সন্ধ্যা দু’বেলা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে বসে থেকে সমস্যা চাক্ষুষ করেছি।” নিখিলবাবু আরও জানান, ওই বাসস্ট্যান্ড সম্প্রসারণের সুযোগ নেই। কারণ বাসস্ট্যান্ডের গা দিয়ে একটি রাস্ট্রায়ত্ব তেল সংস্থার ভূগর্ভস্থ পাইপ লাইন গিয়েছে। তাই নতুন বাসস্ট্যান্ড গড়া ছাড়া কোনও উপায় নেই।
এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা রাস্ট্রায়ত্ব ‘ভারত অপথ্যালমিক গ্লাস লিমিটেড’ (বিওজিএল) কারখানা সংলগ্ন প্রায় ৪০ একর জায়গা রয়েছে পর্ষদের। জায়গাটি লেনিন সরণি, কাঞ্জিলাল অ্যাভিনিউ, বিসি রায় অ্যাভিনিউ ও ২ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে ঘেরা। সেখানেই নতুন বাসস্ট্যান্ডটি গড়ে তোলা হবে। মূলত আন্তঃরাজ্য এবং দূরপাল্লার বাসের জন্য এই বাসস্ট্যান্ডটি গড়া হচ্ছে। ফলে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের সমস্ত সুবিধেই থাকবে বলে জানা গিয়েছে। বাস ও যাত্রীদের দাঁড়ানোর জায়গা, আধুনিক টিকিট কাউন্টার, যাত্রী প্রতীক্ষালয় গড়ার পাশাপাশি থাকবে যাত্রী এবং বাস কর্মীদের রাতে থাকার জায়গা, এটিএম, রেস্তোঁরা, ক্যাফে, বেসরকারি পরিবহন সংস্থাগুলির জন্য অফিসের ব্যবস্থা, ক্যুরিয়র সংস্থার অফিস খোলার জায়গা, দোকান-পাট এমনকি পেট্রোল পাম্পও। চেয়ারম্যান নিখিলবাবু জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশনের (জেএনএনইউআরএম) আওতায় প্রকল্পটি সম্পন্ন করা হবে। প্রকল্পের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে জুন মাসে টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। |