অধরা বাকি অভিযুক্তেরা
পিসির বাড়ি গিয়েই খুন রাজকুমার, দাবি স্বজনের
ভোটের সকালে পিসির বাড়ি বেড়াতে গিয়েই তাঁর দাদা খুন হন বলে দাবি করলেন জামুড়িয়ায় নিহত তৃণমূল কর্মী রাজকুমার কোড়ার বাড়ির লোকজন। গোলমালের মধ্যে বহিরাগত দেখে পিটিয়ে মারা হয় রাজকুমারকে, অভিযোগ তাঁর ভাই কার্তিক কোড়ার।
সোমবার ভোটের সকালে জামুড়িয়ার মধুডাঙায় জোড়া খুনের ঘটনায় আর কোনও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। দু’টি ঘটনায় মোট ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। সোমবারই দু’জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। বাকিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। মঙ্গলবার মধুডাঙা এলাকা ছিল সুনসান। রাস্তাঘাটে লোকজন বিশেষ দেখা যায়নি। যাত্রী না থাকায় জামুড়িয়া-চুরুলিয়া রুটে ট্রেকার চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
সোমবার সকালে ভোট দিতে যাওয়ার পথে বোমায় খুন হন সিপিএম প্রার্থী মানোয়ারা বিবির স্বামী শেখ হাসমত। তার কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পিটিয়ে-কুপিয়ে খুন করা হয় তৃণমূল কর্মী রাজকুমার কোড়াকে। যদিও হাসমত খুনে যে ১৪ জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়, তার মধ্যে রাজকুমারের নাম নেই। অভিযুক্তদের মধ্যে ১২ জন মধুডাঙারই বাসিন্দা। তাদের ধরতে পারেনি পুলিশ। বিশু বাউড়ি ও চন্দন বাউড়ি নামে যে দু’জন গ্রেফতার হয়েছে তারা জামুড়িয়া পুরসভা এলাকার বাসিন্দা। রাজকুমারের নাম হাসমত-খুনের এফআইআরে না থাকার কারণ প্রসঙ্গে সিপিএমের অজয় জোনাল সম্পাদক মনোজ দত্তের বক্তব্য, “অভিযোগ দায়েরের আগে রাজকুমারও খুন হয়ে গিয়েছেন। সেই ঘটনাও যথেষ্ট বেদনাদায়ক। মৃতের বিরুদ্ধে আর কী অভিযোগ করব?”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খুন দু’টি হয় মিনিট চল্লিশের মধ্যে। বোমার আঘাতে হাসমত লুটিয়ে পড়ার পরে তাঁকে নিয়ে এলাকার মানুষজন ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তিন কিলোমিটার দূরে কেলেজোড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে হাসমত মৃত বলে জানান চিকিত্‌সকেরা। এর পরেই এলাকায় বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। তৃমমূলের লোকজন এলাকা ছেড়ে পালাতে শুরু করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, রাজকুমারের হাত থেকে তাঁর মোটরবাইকের চাবি পড়ে গিয়েছিল। তাই তিনি আটকে পড়েন। তখনই তাঁকে মারধর শুরু হয়।
স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, হাসমত বোমা নিয়ে বুথে যাচ্ছিলেন। তৃণমূলের লোকজনের সঙ্গে বচসা থেকে ধাক্কাধাক্কি শুরু হলে তিনি পড়ে যান। তখনই পেটের কাছে বেঁধে রাখা বোমা ফেটে যায়। স্থানীয় তৃণমূল নেতা অলোক দাস পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, হাসমতের নেতৃত্বে বুথে ভোটের লাইন থেকে লোকজনকে ফেরত পাঠাচ্ছিলেন। তা নিয়ে ভোটারদের সঙ্গে বচসা বাধে। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি পূর্ণশশী রায়েরও অভিযোগ, “ওই পঞ্চায়েতে গত বার সিপিএম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল। এ বারও সন্ত্রাস করে জিততে চেয়েছিল। শেখ হাসমত বোমা নিয়ে যাচ্ছিল।”
সিপিএমের পাল্টা অভিযোগ, ভোটের আগে বহিরাগতদের এলাকায় নিয়ে এসেছিল তৃণমূল। রাজকুমার যেখানকার বাসিন্দা সেই জামুড়িয়া পুরসভার শিবপুর এপিসি গ্রাউন্ড এলাকা থেকে আট জন ছাড়াও নিঘা, শ্রীপুর ও বৈইজয়ন্তীপুর থেকে জনা ত্রিশ যুবক এসে জড়ো হয়েছিল। ভোটের সকালে তারাই এলাকায় দৌরাত্ম্য শুরু করে, দাবি সিপিএমের।
খুনের ঘটনার পরপর তৃণমূল নেতৃত্ব রাজকুমারকে প্রথমে দলের কর্মী বলে মানেননি। আসানসোল হাসপাতালে তাঁর দেহ ময়না-তদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হলে রাজকুমারের ভাই কার্তিক সেখানে উপস্থিত তৃণমূল নেতাদের জানান, তাঁর স্ত্রী পাণ্ডবেশ্বরে বহুলা পঞ্চায়েতের পরাশকোল গ্রামের তৃণমূল প্রার্থী। তাঁদের পরিবার তৃণমূল সমর্থক। তা সত্ত্বেও দাদাকে কেন দলীয় কর্মী বলে স্বীকার করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তোলেন কার্তিক। এর পরেই তৃণমূল নেতারা রাজকুমার দলের কর্মী বলে জানান। মৃতদেহে মাল্যদানও করেন তাঁরা।
রাজকুমারের প্রতিবেশীরা জানান, ইসিএলে চাকরির সমস্ত প্রক্রিয়া হয়ে গিয়েছিল রাজকুমারের। ভাই কার্তিকের দাবি, তাঁর দাদা সোমবার সকালে মোটরবাইক নিয়ে মধুডাঙায় পিসির বাড়ি যান। কিন্তু এলাকায় গোলমালের কথা জানিয়ে পিসি তাঁকে ফিরে যেতে বলেন। কিন্তু তাতে কান না দিয়ে কী ঘটেছে দেখতে যেতেই খুন হন রাজকুমার। কার্তিকের দাবি, “এলাকায় অপরিচিত হওয়ায় দাদাকে সন্দেহের বশে খুন করা হল। আমরা দোষীদের শাস্তি চাই।”
হাসমত খুনে অভিযুক্তদেরও কড়া শাস্তির দাবি করেছেন সিপিএম নেতা মনোজবাবু। তিনি জানান, নিহতের পরিবারকে সব রকম ভাবে সাহায্য করে পাশে থাকবে দল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.