|
|
|
|
জয় মা পনিটেল
চুলের এত রকম সাজ থাকতে শেষমেশ ঝুঁটি। তাতেই কিনা কেতা।
লিখছেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় |
পনিটেল।
খুব চেনা সাজ।
স্কুলজীবন থেকে কর্পোরেট দুনিয়া থেকে পার্টি লুক সবেতেই এখন এই হেয়ার স্টাইল। এক নিমেষে হয়ে যায় চুল বাঁধা। তাই মনে হয় বড় সাধারণ। কিন্তু সাধারণ নয়। সময়ের ফেরে আধুনিক জামাকাপড়ের সঙ্গে পনিটেল হয়ে উঠেছে নতুন।
একটু অতীতে ফিরলে মনে পড়বে, ‘কর্পোরেট’ ছবিতে নিশিগন্ধা দাশগুপ্ত চরিত্রে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন বিপাশা বসু। তাঁর উজ্জ্বল শ্যামলা মুখ ও বুদ্ধিদীপ্ত ঝকঝকে চোখ টানটান করে বাঁধা চুলে যেন আরও দৃপ্ত হয়ে উঠেছিল। ফ্যাশন র্যাম্পে বহু মডেলকেই পনিটেলে সাজান ডিজাইনাররা, তাঁদের ডিজাইনার ওয়্যারকে আরও বেশি উজ্জ্বল করে ফুটিয়ে তুলতে।
কর্ণ জোহরের পরের ছবি ‘গোরি তেরা প্যার মে’-তে কর্ণ গ্রামে কাজ করতে যাওয়া একজন এনজিও কর্মী হিসেবে করিনা কপূরের গ্ল্যামারহীন লুক চেয়েছিলেন। নায়িকার দীর্ঘ দিনের মেক আপ আর্টিস্ট ঋতেশ নায়েক করিনার চরিত্রটিকে সহজ অথচ দৃঢ় করতে করিনার চুলে পনিটেল করলেন। এই পনিটেল লুক নবাবি বেগমকে নিমেষে পাশের বাড়ির মেয়েতে বদলে দিল।
আইপিএল-এর সমস্ত মিটিংয়ে নিজের ব্যক্তিত্বকে উজ্জ্বল করে তুলতে শিল্পা শেঠিকেও চুল টেনে উঁচু করে পনি করতে দেখা গিয়েছিল। উড়ুক্কু খোলা চুলে সে ভাবে স্থিতি বা ব্যক্তিত্ব মেলে ধরা যায় না। সেটা মাথায় রেখেই কাজের জায়গায় শিল্পা নিজের চুলে পনি করেছিলেন। |
|
ভরা মুখ ঢাকতে ঝুঁটি চুল
চুলের গোছ বোঝাতে আজকাল পনি লুকটাই সেরা বলে মনে করছেন ক্যাটরিনা। পনিটেল তাঁর স্পোর্টি, ইরোটিক ইমেজকে ধরে রেখেছে। পিছিয়ে নেই ঐশ্বর্যাও। ইদানীং ফোটো শ্যুট থেকে অ্যাওয়ার্ড সেরিমনিতে ঐশ্বর্যার পুলড ব্যাক পনিই পেজ থ্রি থেকে বিনোদন সাইটের চর্চিত বিষয়।
দুষ্টুমি ভরা লুকের জন্য
পনি বেঁধে ‘বদতমিজি’ করা অনেক সহজ হয় বলে মনে করছেন দীপিকা। মাথার এক দিকের পনিটেলের চুল দীপিকাই তৈরি করে দিয়েছেন। এলোচুলের বাঁধা সাজে এই ঘাড়ের কাছে পড়ে থাকা ঝুঁটি, নটি লুকসের জন্যে আদর্শ। আর সে কারণেই তো তিনি পনিটেল নিয়ে এতটা উচ্ছ্বসিত।
অফিস থেকে রান্নাঘর
অফিসফেরত জমাটি আড্ডায় লম্বা চুল নিয়ে খুব বেশি কায়দা করার কোনও সময়ই থাকে না। “অফিসেই চুলটা ভাল করে ব্রাশ করে সুন্দর একটা রাবার ব্যান্ড নিয়ে বাঁধলেই দেখেছি একটা নিট লুক আসে। ব্যাস! আড্ডা জমজমাট,” জানালেন কর্পোরেট অফিসের এক্সিকিউটিভ স্নিগ্ধা ঘোষ।
হোমমেকারদেরও সমান পছন্দ এই পনিটেল সাজ। ‘‘স্কুলের জন্যে বাচ্চাকে রেডি করানো থেকে বরের টিফিন তৈরি সব কিছুর পাট চুকিয়ে ড্রাইভ করে মেয়ের মর্নিং স্কুলে ছুটতে হয় আমায়। চুল বাঁধব কখন? চুলটাকে কোনও মতে আঙুল দিয়েই সোজা করে রাবার ব্যান্ড দিয়ে পনি করে নিই। আমি যে চুল না আঁচড়েই এত ভালভাবে চুল বাঁধি আজ অবধি কেউ তা টেরই পায়নি। পনিটেলেই এটা সম্ভব,” বলেন দেবলীনা।
ঝুঁটি বাঁধছেন পুরুষরাও
মনে পড়ে ‘চিনি-কম’ ছবিতে পনিটেল বাঁধা অমিতাভ বচ্চনকে? কিংবা ‘ডন টু’-র শাহরুখকে? ঘাড়ের ছোট ঝুঁটি চরিত্রগুলোকেই আলাদা করে দিয়েছিল। সম্প্রতি ‘ঘনচক্কর’ ছবিতে ঝুঁটি বেঁধেছেন ইমরান হাসমি।
গানের জগতেও দেখা যায় ঝুঁটির বাহার। গায়ক সিধু বললেন, “আমাদের রক মিউজিক প্রথা ভাঙার কথাই বলে। তাই আমি যেমন ছেঁড়া জিনস পরি, তেমনই কানে দুল পরে লম্বা চুলে ঝুঁটি বাঁধি। ভিস্যুয়াল পারফরমেন্সের ক্ষেত্রে স্টেজে লাইট যতটা জরুরি, ততটাই জরুরি আমার লম্বা চুলের ঝুঁটির সাজ। দর্শকও সেটাই চান।” সেতারী পূর্বায়ন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, “এখন মেট্রোসেক্সুয়াল লুকসের কদর সব চেয়ে বেশি। তাই পনিটেল রাখি। নাইট ক্লাবে ইয়ংস্টারদের সুরে মাতাতে হলে আমি জানি আমার এই সাজ তাঁদের সঙ্গে মিশতে আমাকে খুব সাহায্য করবে।”
ডার্টি হেয়ারেই পনিটেলের সাজ সবচেয়ে ভাল খাপ খায়। তাই শ্যাম্পু করার সময় না পেলে চুলটাকে ভাল করে ব্রাশ করে ইলাস্টিক রিবন দিয়ে উঁচু করে যদি বেঁধে নেওয়া যায় তাহলে চমৎকার দেখাবে।
|
নানান রূপে পনিটেল
সোজা, লম্বা, কোঁকড়ানো, ঢেউ খেলানো চুলে, যে কোনও দৈর্ঘ্যে পনিটেল করা যায়। পনিটেল জনপ্রিয় হওয়ার এটাই বোধহয় সবচেয়ে বড় কারণ -জানালেন শুচিস্মিতা দাশগুপ্ত। ‘কহানি’ থেকে ‘C/O স্যার’-এর চরিত্রদের সাজপোশাক ছিল তাঁরই ভাবনায় তৈরি। “C/O স্যার-এ রাইমা একজন উকিলের চরিত্র করেছিলেন, সেই কারণেই ওঁর নিট লুকস্ আনতে ওকে পনিটেল বেঁধে দিয়েছিলাম। আবার কয়েকটি মেয়ের গল্প-এ পার্নোর মধ্যে ছটফটে তরুণীর মজা আনতে পনিটেল করা হয়েছিল।
এ বার আসা যাক পনিটেলের ধরন বা ধাঁচের কথায়।
ক্লাসিক পনিটেলস: মাথার ঠিক মাঝখানে রিবন বা রাবার ব্যান্ড দিয়ে সোজা চুলে পনিটেল করা হয়। ওয়েস্টার্ন আউটফিট থেকে জর্জেট বা শিফন শাড়ির সঙ্গে চুলের এই কায়দা খুব ভাল যায়।
লো পনিটেলস: ঘাড়ের নীচে চুল বাঁধার এই রেওয়াজ রেড কার্পেট বা সন্ধের সাজ হিসেবে জনপ্রিয়। ঘাড়ের নীচে পনি করার জন্যে চুলের ভলিউম পিঠের অংশে খুব চমৎকার ভাবে ছড়িয়ে যায়। ছোট চুলেও ভাল মানিয়ে যায়।
হাই পনিটেলস: হাই পনিটেলস করতে প্রয়োজন লম্বা চুল। অনেকে হাই পনি করবেন বলে চুল হাইলাইট করেন। রিয়েল এস্টেট কোম্পানির পি আর রেশমি রায় বলছেন তাঁর অ্যাপিয়ারেন্সের ওপর কোম্পানির লুক অ্যান্ড ফিলটা কিছুটা অনেকটাই নির্ভরশীল। “আমি আমার পনি খয়েরি রঙে হাইলাইট করেছি। এটা একটা পলিশ, পাওয়ারফুল, কুল লুকস্ নিয়ে এসেছে আমার অ্যাপিয়ারেন্সে,” বললেন তিনি। বাদ নেই বি টাউনের সোনম কপূরও। “স্কুলে যাওয়ার হেয়ার স্টাইলকে স্লিক, গ্ল্যামারাস্, সেক্সি লুক দেওয়ার জন্যে আমি হাই পনিটেলের ট্রেন্ডকে হাইলাইট করতে চাই,” বলেন তিনি।
কেশচর্চার কেতাবি দুনিয়ায় পনিটেল জিম থেকে বিচে, রেড কার্পেট থেকে বিয়েবাড়িতে ছড়িয়ে চলেছে তার বাহারি দ্যুতি। এই মায়াবী কেশের উপস্থিতিকে যেমন এড়িয়ে চলা যায় না, তেমনি ফুরিয়ে ফেলাও যায় না। আর তাই একে ‘পনিটেল বিপ্লব’ বলতেও ক্ষতি নেই!
|
ঝুঁটি + |
• অধিকাংশ মেয়েদেরই এখন চুলে লেয়ার কাটা। এই ক্ষেত্রে পনিটেল সব চেয়ে মানানসই
• পনিটেল মুখে পরিচ্ছন্ন ভাব আনে
• পেশাদার জায়গায় মার্জিত লুক আনতে পনিটেল সব চেয়ে ভাল
• পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্য, সব সাজেই পনিটেল যায়।
• এক্সপেরিমেন্ট করতে চাইলে ফুলহাতা শার্টের সঙ্গে একটু উঁচু করে শাড়ি পরে পনি করলে বয়স অনেক কমে যায়
• চুল এলোমেলো হয় না বলে পনিটেল আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়
• পনিটেল ভারিক্কি ভাব কাটিয়ে মুখে আনে তারুণ্য |
সৌজন্যে: স্টাইলিস্ট শুচিস্মিতা দাশগুপ্ত |
|
|
|
|
|
|