|
|
|
|
অপুর ডায়েরি
ইন্ডাস্ট্রি বব ডাকে না। ডাক নামটাই ছোটবেলা থেকেই ফেমাস অপু।
আর ছোটবেলা থেকে তাঁর ডায়েরি কখনও এমন গিজগিজ করেনি। দেখায়নি আগামী
এক বছরের তুমুল ব্যস্ততা। শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়-এর সঙ্গে গল্ফ গ্রিনের রাস্তায় ইন্দ্রনীল রায় |
পুজোর চার দিন অফ। যদিও এর মধ্যেই প্যান্ডেল উদ্বোধনের ফোন আসা শুরু হয়ে গিয়েছে।
মাসের দ্বিতীয় রবিবার টালিগঞ্জে ছুটি থাকে বলে, নো শ্যুটিং। কিন্তু প্রোমোশনের কাজ থেমে থাকছে না।
আর পরের মাসে ১৫ অগস্ট ছুটি।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের ডেট ডায়েরিতে অফ-ডে ক’টা, এই নিয়ে টালিগঞ্জে চর্চা প্রথম অ্যাসেজ টেস্টের ডিআরএস চর্চাকেও হার মানাবে।
ফিল্মের শ্যুটিং, অ্যাডভার্টাইজমেন্ট, প্রোমোশন, এক মাসে দু’টো ছবির রিলিজ, শহর জুড়ে হোর্ডিং, বড় প্রোডিউসরের সঙ্গে মিটিং ইন্ডাস্ট্রিতে ডাকনামে খ্যাত অপুর পৃথিবীই বদলে গিয়েছে।
বদলে গিয়েছে তাঁর ডায়েরিটাও। |
|
মার্চ পর্যন্ত বুকড
গল্ফ গ্রিনের ফ্ল্যাটে তখন ‘বিগ বস’ দেখার তোড়জোড় করছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। স্ত্রী মহুয়ার কাছে হোমওয়ার্ক ঝালিয়ে নিচ্ছেন কন্যা।
“সব তো আমাকেই দেখতে হয়, ওর সময় কোথায় বলুন। তার উপর ফোন ক্যারি করে না বলে কাজের ফোন আমাকে তুলতে হয়। হিজ লাইফ হ্যাজ চেঞ্জড,” নিজের স্যামসং এস থ্রি ফোনে আইফা-র ছবি দেখাতে দেখাতে বলছিলেন মহুয়া।
তিনি ভুল বলেননি।
অপুর ব্যস্ততা এতটাই যে পরের বছর মার্চ পর্যন্ত তিনি ‘বুকড’। প্রযোজকরা তাঁর ডেট পেতে পারিশ্রমিক বাড়াতেও পিছ-পা হচ্ছেন না।
“কিন্তু কোনও প্রযোজক বেশি টাকা দিচ্ছে বলে তাকে ডেট দিয়ে দেব, এই শিক্ষা আমি পাইনি আমার বড়দের কাছ থেকে। মুখের কথায় যাকে আগে ডেট দিয়েছি, সে-ই প্রেফারেন্স পাবে,” সাফ বলছেন শাশ্বত।
তিনটে হিন্দি ছবি ছেড়ে দিলাম
অপুর এই ব্যস্ততা নিয়ে একই সঙ্গে খুশি এবং বিরক্ত তাঁর স্ত্রী।
“আরে, অপু এত ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে যে, আমাদের বিয়ের রেজিস্ট্রির ডেট ছিল ২৯ জুন। সেটাই ভুলে গিয়েছিল,” হাসতে হাসতে বলছিলেন মহুয়া।
এমনকী ১২ জুলাই, তাঁর জন্মদিনে কোনও রকমে সময় বার করে রেস্তোরাঁয় খেতে নিয়ে গিয়েছেন পরিবারকে।
“আমি কী করব বলুন। ডেট নিয়ে এতটাই সমস্যা হচ্ছে যে আমি তিনটে হিন্দি ছবি অবধি ছেড়ে দিলাম,” ড্রয়িং রুমে বাবা শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের ছবির নীচে বসে বলছিলেন পুত্র।
গত মাসটা এমনিতেই তাঁর কাছে ছিল ‘মান্থ অব আ লাইফটাইম’। এক মাসে দু’টো ছবি রিলিজ, দু’টোতেই লিড রোল।
“‘C/O স্যার’ তো আজও রমরমিয়ে চলছে। ‘মেঘে ঢাকা তারা’তে অনেক প্রশংসা পেলাম। কাজের চাপটা আরও বেড়ে গিয়েছে এই দু’টি ছবির পর,” বলছিলেন ‘নীলকণ্ঠ’।
ফিরতে হবে কিন্তু গুলাম মহম্মদ শাহ রোডে
‘কহানি’র পর তাঁর যে জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল তার রেশ দশ দিন আগেও টের পেয়েছেন।
“ম্যাকাওতে আইফা অ্যাওয়ার্ডসে গিয়ে তো চমকে গিয়েছি। বিজনেস ক্লাস টিকিট, নামতেই ব্ল্যাক মার্সেডিজ। আমি তো বুঝতেই পারছিলাম না কী হচ্ছে। আশেপাশে শাহরুখ খান, অনুপম খের। খালি নিজেকে বলছিলাম, “অপু, শেকড়টা ভুলিস না। ফিরতে হবে কিন্তু প্রিন্স গুলাম মহম্মদ শাহ রোডেই,” বলছিলেন ‘স্যার’ জয়ব্রত রায়।
আইফা অ্যাওয়ার্ডসে তাঁর অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন অনুপম খের। “নিজে থেকে এগিয়ে এসে আমাকে কনগ্র্যাচুলেট করলেন। বললেন মুম্বইতে আরও বেশি কাজ করতে। ও রকম মাপের একজন অভিনেতার কাছ থেকে এত সম্মান পাব, জীবনেও ভাবিনি। ইন ফ্যাক্ট, যা সম্মান পেলাম তা আমি কেন, আমার বাবাও কোনও দিন পেয়েছেন কি না আমার সন্দেহ আছে,” বলছিলেন সবার প্রিয় ‘হাত কাটা কার্তিক’। |
শাশ্বত-র ব্যস্ততা |
পুজোর ছুটিতে বেড়াতে যেতেও পারছি না
তাঁর যে চূড়ান্ত ব্যস্ততা, সেটা অবশ্য এনজয়ই করছেন শাশ্বত। “ভালই লাগছে জানেন। এ রকম সময়টাই তো সবাই চায়,” নিজের ডেট ডায়েরি দেখতে দেখতে বলছিলেন।
এবং সত্যিই তাঁর ডেট ডায়েরিতে পরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডেট প্রায় নেই বললেই চলে। অনিমেষ রায়ের পরের ছবি, রাজ চক্রবর্তীর ‘প্রলয়’-এর প্রোমোশন, অগস্ট মাসে রানা-সুদেষ্ণার ছবি ‘হারকিউলিস’, সেপ্টেম্বরে চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি ‘নির্বাসিত...!’, অক্টোবরে অমিত সেনের ছবি, বছর শেষে অরিন্দম শীলের ছবি, ‘এ বার শবর’। এ শ্যুটিংগুলোর পাশাপাশি রয়েছে এই ছবিগুলোর ডাবিং এবং প্রোমোশন।
“আরে আমার ডেটের এমন অবস্থা, পুজোর পর মেয়ে-বৌয়ের সঙ্গে হায়দরাবাদে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল, সেটাও যেতে পারছি না।” বলছিলেন শাশ্বত।
কিন্তু এত ব্যস্ততা থাকলে আপনার ফিমেল ফ্যান ফলোয়িংয়ের কী হবে? “নিজের মেয়ের ক্ষেত্রে সময় বার করতে পারছি না যেখানে, ফিমেল ফ্যানদের ক্ষেত্রে সময় বার করব কী করে বলুন? তবে ওরা তো আমার অনেক দিনের ফ্যান, ঠিক বুঝবে আমার অবস্থাটা,” স্ত্রী মহুয়ার পাশে বসেই হাসতে হাসতে বলেন তিনি।
আর বিশেষ যে মহিলারা রয়েছেন? তাঁদের কী হবে? আউটডোর ছাড়া কি তাঁদের সঙ্গে আর দেখা হবে না?
“ধুর, যা ব্যস্ততা, তাঁদেরও হা-হুতাশ করতে হবে। আমাকেও,” বলছিলেন অপু।
এমনিতেই ফোন ব্যবহার করেন না শাশ্বত। কিন্তু তাঁর কাছের লোকেরা জানাচ্ছেন, সেখানেও নাকি এক নতুন ‘অ্যাঙ্গল’ যোগ হয়েছে।
তাঁর ফিমেলে ফ্যান ফলোয়িং এতটাই বেড়েছে যে, তাঁর স্ত্রীও নাকি আজকাল তাঁকে ফোন ব্যবহার করা থেকে ডিসকারেজ করছেন? “করছি তো,” হেসে বললেন মহুয়া।
আর শাশ্বত কী বলছেন?
“ভাল হয়েছে বাবা, কনট্যাক্ট লিস্ট, এসএমএস কী দেখতে, কী দেখবে। এই বেশ ভাল আছি,” আড্ডা মারতে মারতে বলছিলেন শাশ্বত।
চুয়াল্লিশ টাকা, বাবু
এত ব্যস্ততার কথা যখন বলছেন, ঠিক তখনই তাঁর পাঁচ তলার ফ্ল্যাটের ডোর বেল বাজল। দরজা খুলতে উঠলেন শাশ্বত। ইস্ত্রিওয়ালা।
ইস্ত্রিওয়ালার কাছ থেকে জামাকাপড় হাতে নিয়ে শাশ্বতসুলভ ভঙ্গিতেই জিজ্ঞেস করলেন, “কিতনা হুয়া?”
“চুয়াল্লিশ টাকা বাবু,”
নিজেই ভিতরের ঘরে ইস্ত্রিওয়ালার জন্য টাকা আনতে গেলেন।
টাকা মেটাতে মেটাতে ইয়ার্কির ছলেই বললেন, “আপনি বলছেন ডেট ডায়েরি ফুল, ফিমেল ফলোয়িংয়ের মেসেজ, শুনতে চাইছেন ম্যাকাওয়ের গল্প, কিন্তু দেখছেন, ইস্ত্রিওয়ালার টাকা মেটানো থেকে সকালে মেয়েকে স্কুলের জন্য ওঠানো, সবই করি আজও।”
বেশ বুঝলাম, এই মুহূর্তে টালিগঞ্জের অন্যতম ব্যস্ত অভিনেতা কিন্তু মানুষ হিসেবে একেবারে পাল্টাননি।
যত দিন ইস্ত্রিওয়ালার ওই ৪৪ টাকা নিজেই মেটাবেন, শাশ্বত থাকবেন শাশ্বতই।
ডেট ডায়েরি যতই ভর্তি থাকুক না কেন।
পোস্ট স্ক্রিপ্ট: ওহ বলাই হয়নি! আজকে যাঁর ডেট নিয়ে এত মারামারি তিনি কিন্তু একটা ডেট কোনও দিন ভুলতেই পারবেন না। ৯ মার্চ, ২০১২। কী হয়েছিল সে দিন? কী আবার, ‘বব বিশ্বাস’য়ের আবির্ভাব হয়েছিল যে!
|
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল |
|
|
|
|
|