বাইক-বাহিনী নিষিদ্ধ করা নিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিবের ব্যাখ্যাতেও সন্তুষ্ট হল না কলকাতা হাইকোর্ট। শেষ সুযোগ হিসেবে আগামিকাল বুধবার তাঁদের ফের রিপোর্ট পেশ করতে বলেছেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে এবং সব পক্ষের বক্তব্য শুনে তিনি ওই দিনই চূড়ান্ত নির্দেশ দেবেন বলে এ দিন বিচারপতি জানিয়ে দেন।
বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের দুই প্রশাসনিক কর্তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কেন রাজ্য সরকার বাইক-বাহিনী নিষিদ্ধ করেনি। এ দিন মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিব আলাদা ভাবে হলফনামা জমা দেন। কমিশন এবং হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও কেন রাজ্য বাইক-বাহিনী বন্ধ করতে অক্ষম, তার জবাব দেওয়া হয় সেখানে। হলফনামায় সই করতে দু’জনেই এ দিন সকালে হাইকোর্টে এসেছিলেন।
শুনানির সময়ে ক্ষুব্ধ বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওই দুই হলফনামায় ‘কেন’-র কোনও ব্যাখ্যাই নেই। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই হলফনামায় তো আমার মূল প্রশ্নেরই উত্তর নেই। শেষ বারের মতো সুযোগ দিচ্ছি বুধবার ফের ওঁদের রিপোর্ট জমা দিতে বলুন। জানতে চাই, কেন বাইক-বাহিনী নিষিদ্ধ করার নির্দেশ রাজ্য প্রশাসন কার্যকর করতে পারল না।”
অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায় আদালতকে বলেন, “৬ জুলাই মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবের বৈঠকে বাইক-বাহিনী নিষিদ্ধ করা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এর পরে ৭ জুলাই এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে, তা জেলাশাসকদের কাছে পাঠানো হলেও মহাকরণে মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবকে পাঠানো হয়নি। এ সবের জন্যই সমন্বয়ের অভাব দেখা দিচ্ছে।”
অ্যাডভোকেট জেনারেলের যুক্তি আদালতকে খুশি করতে পারেনি। বিচারপতি প্রথমে বলেন, “এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এ ধরনের সমন্বয়ের অভাব থাকা বাঞ্ছনীয় নয়।” এর পরেই তাঁর মন্তব্য, “কে কখন কী নির্দেশ দিয়েছে, কাকে সেই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে, তা আমি শুনতে চাই না। আমি চাই বাইক-বাহিনী বন্ধ এবং অবাধ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন এ পর্যন্ত যা নির্দেশ দিয়েছে, তা অবিলম্বে কার্যকর করুক রাজ্য সরকার। এটাই আমার শেষ কথা।”
কমিশনের আইনজীবী লক্ষ্মীচাঁদ বিয়ানি আদালতে বলেন, “রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কমিশন একটি চিঠি পেয়েছে। কিন্তু সেই চিঠিতেও বাইক-বাহিনী বন্ধে রাজ্য সরকার কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তা বলা হয়নি। অথচ বাইক-বাহিনী সর্বত্রই চলছে।”
ক্ষুব্ধ বিচারপতি অ্যাডভোকেট জেনারেলকে বলেন, “আমার এবং নির্বাচন কমিশনের সব নির্দেশ আপনারা (রাজ্য সরকার) কী ভাবে পালন করেছেন, তা নির্দিষ্ট করে আদালতকে জানান। বুধবারই ওই রিপোর্ট জমা দিতে হবে আপনাদের। জানাতে হবে কমিশনকেও।”
সওয়াল জবাবের শেষ দিকে আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, “আপনি অবাধ নির্বাচন করার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এ দিন জামুরিয়ায় পুলিশের সামনেই বোমা মেরে এক সিপিএম সমর্থককে খুন করা হয়েছে। মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন না।” বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এ ব্যাপারে মন্তব্য করেননি।
শাসকদলের শীর্ষ নেতারা এ দিনও কিন্তু বাইক-বাহিনী ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি দেখাতে কসুর করেননি। মহাকরণে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “গ্রামেগঞ্জে তো বাইক ছাড়া গতি নেই। বাইক-বাহিনী না নামালে আমরা কি তবে পদাতিক-বাহিনী নামাব? নাকি খচ্চর-বাহিনী নামাব?”
অন্য দিকে, ভাঙড় থানার বাঁকড়ি প্রাইমারি স্কুলের মাঠে এক নির্বাচনী প্রচারে রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাইক-বাহিনী কী? ওটা তো আমরাই নাম দিয়েছিলাম। জঙ্গলমহলে যখন কাঁধে অস্ত্র নিয়ে বাহিনী বাইকে করে এলাকায় টহল দিত, তখন তো এই নামটা দিয়েছিলাম।” একই সঙ্গে প্রশ্ন তোলেন তিনি, “সরকার যখন বাইকের লাইসেন্স দিয়েছিল, তখন তো বলেনি যে একসঙ্গে চারটে বাইকে করে যাওয়া যাবে না। তা হলে এখন এই প্রশ্ন উঠছে কেন? যদি বাইকের বদলে দামি চার চাকা গাড়ি নিয়ে সন্ত্রাস বা ওদের পার্টি অফিস ভাঙচুর করা হতো, তা হলে কী তাতে দোষ হতো না?”
|