|
|
|
|
নিখোঁজদের এখনই মৃত ঘোষণা নয় |
দুর্যোগের এক মাস, ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদন |
ঠিক এক মাস। গত ১৬ জুন উত্তরাখণ্ডের ভয়াবহ দুর্যোগের ঘটনায় শুধু সরকারি মতেই নিখোঁজের সংখ্যা ৫ হাজার ৭৪৮। মৃত ন’শো ছাড়িয়ে গিয়েছে।
গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণা ঘোষণা করেছিলেন, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে নিখোঁজদের হদিস না পাওয়া গেলে তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করা হবে। কিন্তু আজ তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এখনও আশা ছাড়ছি না। নিখোঁজদের খোঁজে তল্লাশি জারি থাকবে। তবে মৃত এবং নিখোঁজদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে সাহায্য দেওয়া হবে বলে যে ঘোষণা করা হয়েছিল তা বহাল থাকবে।” সেই সঙ্গে বহুগুণা এ-ও জানিয়েছেন, যদি নিখোঁজদের কেউ ফিরে আসেন তাঁর পরিবারকে সাহায্যের টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা এবং সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রাজীব শুক্লকে সঙ্গে নিয়ে বহুগুণা আজ একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, উদ্ধারকাজ, ত্রাণ এবং পুনর্গঠনে কোনও টাকার অভাব হবে না। |
|
সাংবাদিক বৈঠকে রাজীব শুক্ল ও বিজয় বহুগুণা। ছবি: পিটিআই |
মৃত ও নিখোঁজদের পরিবার পিছু যে পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে সাড়ে ৩ লক্ষ কেন্দ্রের তরফে দেওয়া হবে। বাকি দেড় লক্ষ টাকা মৃত বা নিখোঁজ ব্যক্তি যে রাজ্যের সংশ্লিষ্ট সেই রাজ্যের তরফে দেওয়া হবে।
ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফেও নিখোঁজদের তালিকা ৪ জুন উত্তরাখণ্ড সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। মহাকরণ সূত্রের খবর, প্রথম তালিকা পাঠানোর পরে উত্তরাখণ্ড তা কিছুটা সংশোধন করে পাঠাতে বলে। সেই সংশোধিত তালিকাও গত সপ্তাহে পাঠানো হয়েছে। মহাকরণের এক কর্তা বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ থেকে এখনও নিখোঁজ ৩৫ জন। তালিকায় তাঁদের বাড়ির ঠিকানা, নিখোঁজ ব্যক্তির মোবাইল নম্বর এবং পরিবারের কারও ফোন নম্বরও পাঠানো হয়েছে। নিখোঁজ ৩৫ জনের মধ্যে ২২ জনই গৌরীকুণ্ড থেকে কেদারনাথের মধ্যে নিখোঁজ।”
দেখা গিয়েছে, গত ১৬ জুনের ঘটনায় মৃতের অধিকাংশই তীর্থযাত্রী। ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে তাই রাজ্য সরকারের তরফে কিছু আগাম সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। আজই এক ঘোষণায় জানানো হয়েছে, এ বার থেকে কেদারনাথে যাত্রী সংখ্যা দু’হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হবে। এর জন্য প্রয়োজনে অন লাইন রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে পুণ্যার্থীদের সংখ্যা দু’হাজারের গণ্ডি পেরোলেই বুকিং বন্ধ করে দেওয়া যায়। গৌরীকুণ্ড থেকে কেদারনাথ পর্যন্ত রোপওয়ের ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা নিয়ে রাজ্য সরকার ভাবনাচিন্তা করছে বলেও জানানো হয়েছে।
কয়েক দিন আগেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে স্বীকার করে নেন, উত্তরাখণ্ডের বহু গ্রামের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। আজ মুখ্যমন্ত্রী বহুগুণাও স্বীকার করে নেন, খারাপ আবহাওয়ার জেরে উদ্ধারকর্মীরা এখনও অনেক দুর্গম এলাকায় পৌঁছতে পারেননি। প্রায় ৩০টি গ্রামের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। প্রবল বৃষ্টি আর কুয়াশার জেরে হেলিকপ্টার পরিষেবা মাঝেমধ্যেই বন্ধ থাকছে। কেদারনাথ মন্দির চত্বরে এখনও প্রায় ৫ ফুট গভীর কাদা, পাথর আর বাড়ির ধ্বংসস্তূপ। বহুগুণা আরও জানান, কপ্টার থেকে রামওয়ারা এলাকায় কয়েকটি মৃতদেহ দেখা গিয়েছে। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার জন্য মৃতদেহগুলি উদ্ধার করা যায়নি। দুর্গম এলাকায় চপার আর খচ্চরের সাহায্যে ত্রাণ পাঠানোর চেষ্টা চলছে।
এ দিকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং সরকারের তরফে পাঠানো ত্রাণ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপুর গ্রামে রেশনে পোকা ভর্তি চাল দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। শুধু তা-ই নয়, ত্রাণে যে পোশাক দেওয়া হয়েছে সেগুলির বেশিরভাগই ছেঁড়া বলে তাঁদের অভিযোগ। আজ সাংবাদিক দেখেই ঝাঁঝিয়ে ওঠেন বছর পঁচিশের শুক্ল। বলেন, “আমাদের এখন আমাদের কেরোসিন, চাল, টাকা দরকার। অথচ আমাদের দেওয়া হল ছেঁড়া জিনস।” |
পুরনো খবর: ওরা ফিরবে, অপেক্ষায় স্বজনরা |
|
|
|
|
|