মোদীর বোরখা-কটাক্ষে কংগ্রেসের তোপ
মেরুকরণে বিপদের আশঙ্কা দু’দলেই
মেরুকরণের রাজনীতি নিয়ে কংগ্রেস-বিজেপি দুই শিবিরই এখন ধন্ধে পড়ে গিয়েছে।
নরেন্দ্র মোদী গত কাল বলেছেন, “সঙ্কটে পড়লেই ধর্মনিরপেক্ষতার বোরখা পরে নেয় কংগ্রেস।” জবাবে কংগ্রেসের মুখপাত্র অজয় মাকেন আজ বললেন, “সাম্প্রদায়িকতার নগ্নতার চেয়ে ঢের ভাল ধর্মনিরপেক্ষতার বোরখা।” এই দুই শিবিরের বাইরে দাঁড়িয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার আবার প্রশ্ন তুলেছেন, রাজনীতির চাপানউতোরে কেন মুসলিম মহিলাদের পোশাক বোরখার প্রসঙ্গ টেনে আনা হচ্ছে?
সন্দেহ নেই সচেতন ভাবেই হোক বা অনিচ্ছায়, তিন পক্ষের এই কাজিয়ায় ভোট ব্যাঙ্কের মেরুকরণের সম্ভাবনা বাড়ছে। মোদীর দলের সঙ্গ ছেড়ে আসার পরে নীতীশ সেটা সচেতন ভাবেই চাইছেন। কিন্তু কংগ্রেস ও বিজেপি দুই শিবিরেই এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এই মেরুকরণে আখেরে কি কোন লাভ হবে লোকসভা ভোটে?
বিজেপি-তে যশবন্ত সিনহার মতো নেতারা মনে করছেন, মোদী যা-ই বলছেন তাতে ১১ বছর আগে গুজরাতে কী হয়েছিল, সে সবই আলোচনায় উঠে আসছে। ইউপিএ সরকারের ব্যর্থতার দিকগুলিকে চর্চার কেন্দ্রে নিয়ে আসা যাচ্ছে না। অন্য দিকে কংগ্রেস শিবিরে ভাবনা, মোদীকে তাঁর ভাষাতেই জবাব দেওয়া হচ্ছে ঠিকই, তবে আদৌ কি তাতে লাভ হচ্ছে দলের। এর মাধ্যমে মোদীরই মেরুকরণের ফাঁদে পা দিচ্ছে না তো দল? অতীতে এই মেরুকরণ যে মোদীর দলকেই সুবিধা করে দিয়েছে, সেটাও কংগ্রেস দেখেছে।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, কুকুর ছানা বিতর্কের পর মোদী গত কাল যে ভাবে বোরখা শব্দটি ব্যবহার করেছেন তার মধ্যে সুপরিকল্পিত নকশা দেখা যাচ্ছে। হিন্দু জনগোষ্ঠীকে বার্তা দিয়ে মোদী বোঝাতে চাইছেন যে কংগ্রেস মুসলিম তোষণ করছে। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের মাধ্যমে যে তিনি লোকসভা ভোটে ফায়দা তুলতে চাইছেন সেটাও পরিষ্কার। কংগ্রেসের শীর্ষ সারির একাধিক নেতা মনে করেন, দলীয় তরফে মোদীর জবাব দেওয়া হলেও, রাহুল গাঁধীকে এই বিতর্কে না জড়ানোই ভালো। বরং রাহুলের উচিত হবে ইতিবাচক রাজনীতির দিকে নজর দেওয়া। সামাজিক সুরক্ষা ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার উদ্দেশে সরকারের পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা বলা।
মেরুকরণের রাজনীতিতে বিপদের আঁচ পাচ্ছেন বিজেপি নেতাদের একাংশও। যশবন্ত সিনহা আজ কার্যত দলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, “মোদী যত কম কথা বলেন ততই ভাল। তাঁর কথা নিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে বিতর্ক তৈরির করার চেষ্টা হচ্ছে। ইউপিএ সরকারের অপশাসন ও দুর্নীতির প্রসঙ্গ চাপা পড়ে যাচ্ছে।”
দলের আরও কিছ নেতা যশবন্তের সঙ্গে সহমত। কারণ, মোদী কাল ইউপিএ সরকারের অপশাসনের কথাও বলেছিলেন। কংগ্রেস আজ তার জবাবও দিয়েছে। কিন্তু শেষমেষ মোদী ও তাঁর বোরখা সংক্রান্ত মন্তব্যই বিতর্কের কেন্দ্র হয়ে উঠছে। যেমন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী শশী তারুর আজ সাতসকালে টুইট করে বলেছেন যে, “অসহিষ্ণুতা ও ঘৃণার যে খাকি শর্টপ্যান্টের মধ্যে মোদী লুকোতে চাইছেন, তার চেয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার বোরখা ভাল।”
তবে কংগ্রেস-বিজেপির চলতি কাজিয়া থেকে একটি বিষয় বেশ স্পষ্ট। তা হল, মোদীকে এক ছটাক জমিও ছাড়তে নারাজ সনিয়া-রাহুল গাঁধীর দল। মোদী কাল ইউপিএ সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরই যে রকম তৎপরতার সঙ্গে কংগ্রেস আজ ধরে-ধরে তার জবাব দিয়েছে তথ্য-পরিসংখ্যান তুলে ধরে, সেটা নজরে পড়ার মতো। কংগ্রেসি রাজনীতিতে এমন ক্ষিপ্রতার দৃষ্টান্ত খুব বেশি নেই।
কংগ্রেস সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে দলের প্রধান মুখপাত্র অজয় মাকেন আজ বলেন, “মোদী বলছেন, অলিম্পিকে ভারতের আরও ভাল করা উচিত ছিল। কিন্তু আমার প্রশ্ন, গুজরাত থেকে এক জনও অলিম্পিকে যেতে পারল না কেন? ঝাড়খণ্ড ন্যাশনাল গেমসে ৪৪৪টি সোনার মেডেলের একটিও কেন পায়নি গুজরাত?” শিক্ষা নিয়েও মোদীর আক্রমণের জবাব দিতে গিয়ে পাল্টা তাঁকেই বিঁধেছে কংগ্রেস। মোদী কাল বলেছেন, চিন গড় জাতীয় উৎপাদনের ২০ শতাংশ শিক্ষায় খরচ করে। সে তুলনায় শিক্ষায় একেবারেই নগণ্য অর্থ বরাদ্দ করেছে ইউপিএ সরকার। জবাবে শশী তারুরের কটাক্ষ, মোদীর আরও পড়াশোনা করা উচিত। ২০ নয়, শিক্ষা খাতে চিন ৩.৯৩ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করেছে।
এর সঙ্গে গুজরাতের শিক্ষাচিত্রকেও আজ অস্ত্র করেন মাকেন। তিনি মনে করিয়ে দেন, গত আর্থিক বছরে শিক্ষা ক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দের হিসেবে দেশের মধ্যে ১৪ নম্বরে ছিল গুজরাত। রাজ্যের ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাড়া বাকি কলেজে পূর্ণ সময়ের অধ্যক্ষ পর্যন্ত নেই। এমনকী, স্কুলছুটের হার জাতীয় গড়ের থেকে বেশি। কংগ্রেসকে
জ্ঞান না দিয়ে আগে নিজের ঘর সামলানো উচিত বলে মন্তব্য করেন কংগ্রেস মুখপাত্র।
এনডিএ ছাড়ার পর থেকে বিজেপি, বিশেষ করে মোদীকে আক্রমণের কোনও সুযোগই হাতছাড়া করছেন না জেডিইউ-এর নীতীশ কুমারও। মোদীর নাম না করে তাঁর বোরখা সংক্রান্ত মন্তব্য নিয়ে নীতীশ আজ পটনায় তাঁর ‘জনতা দরবারে’ বলেন, “সব ধর্মের মানুষকে সম্মান জানাতে হবে। বোরখা মুসলিম মহিলাদের পোশাক। হিন্দু মহিলারাও মাথায় কাপড় দেন। কিন্তু এ নিয়ে কেউ কেউ বিরূপ মন্তব্য করছেন।” সেই সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, “এ সব ভাষা প্রয়োগ করলে ভোট বাড়বে না, লাভও হবে না।”
বিজেপি-কে তীব্র আক্রমণ করে নীতীশ বলেন, “দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে দেশে যখন কংগ্রেস-বিরোধিতার ঝড় উঠেছে, তখন বিজেপি অন্য প্রসঙ্গে কথা বলে বিরোধিতার আঁচ কমিয়ে দিচ্ছে। ওই দলের নেতারা যে সব অসাংবিধানিক শব্দ প্রয়োগ করছেন, তাতে স্পষ্ট হয়েছে যে বিজেপি-র সঙ্গ ছেড়ে আমরা ঠিক কাজই করেছি।” কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর দলের জোট নিয়ে জল্পনা উড়িয়ে নীতীশ এ দিন জানান, সে রকম কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে, খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে ইউপিএ সরকারের অর্ডিন্যান্সকে সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকারের অর্ডিন্যান্স পেশ করার অধিকার রয়েছে। তবে কেন্দ্রকে আমরা জানিয়েছিলাম, বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনা হলে ভাল হত।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.