পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আসতেই রাজনৈতিক হানাহানি বেড়ে চলেছে।
মদের বোতল দিয়ে আঘাত করে এক তৃণমূল কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগে সিপিএমের পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএমের এক প্রার্থীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। শনিবার রাতে মালদহের মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম প্রার্থী উদয় মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ, গত শুক্রবার রাতে এলাকার তৃণমূল সমর্থক বাচ্চু ঘোষের ওপর সিপিএম হামলা চালায়। মদের বোতল দিয়ে মেরে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ধৃত সিপিএম প্রার্থী-সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন আহতের স্ত্রী। শনিবার রাতে তাঁদের প্রার্থীর বাড়ি তৃণমূল হামলা চালায় বলে সিপিএমের অভিযোগ। দলের প্রার্থীকে গ্রেফতারের খবর চাউর হতেই শনিবার রাতেই সিপিএমের কর্মী-সমর্থকরা মানিকচক থানায় বিক্ষোভ দেখান। পাল্টা অভিযোগে এক তৃণমূল কর্মীকেও পুলিশ গ্রেফতার করায় বিক্ষোভ তুলে নেয় সিপিএম।
রবিবার ধৃত সিপিএম প্রার্থী উদয় মণ্ডল এবং তৃণমূল সমর্থক বাবলু সাহাকে মালদহ জেলা আদালতে তোলা হলে তৃণমূল কর্মী জামিন পেলেও সিপিএম প্রার্থীকে ১৪ দিনের জেলা হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট দেবাশিস বিশ্বাস। জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “দু’পক্ষের দু’জন গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদের খোঁজা হচ্ছে।”
সিপিএমের মানিকচক শাখার সম্পাদক শ্যামল বসাক বলেছেন, “নিশ্চিত হার জেনে স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক তথা রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের নির্দেশে পুলিশ আমাদের দলের প্রার্থীকে গ্রেফতার করেছে। প্রতিবাদে আন্দোলন হবে।” আর তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “জখম তৃণমূল কর্মীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অথচ পুলিশ বিনা অপরাধে সিপিএমের চাপে আমাদের এক কর্মীকে গ্রেফতার করেছিল। আমি কাউকে ধরার জন্য নির্দেশ দিইনি।”
বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে ধূপগুড়িতে। বিজেপি নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শনিবার রাতে ওই ঘটনায় কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় ধূপগুড়ির বারোঘড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পাড়া এলাকায়। রাতে সেখানে পুলিশ বাহিনী পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিজেপি নেতা বিদায়ী গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সবিন রায়ের অভিযোগ, “২০-২৫ জন তৃণমূল সমর্থক মিছিল করে এসে নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে।” জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক গুড্ডু সিংহ বলেন, “প্রচারে জনসমর্থন পাচ্ছে না বলে, মিথ্যে অভিযোগ করে বিজেপি প্রচার করছে।” জমির দখলকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস, তৃণমূল ও সিপিএম সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠল রায়গঞ্জের মহিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষ্মনীয়া শঙ্করপুর এলাকা। রবিবার সকাল ১১টা নাগাদ সংঘর্ষে এক মহিলা-সহ তিন পক্ষের ১০ জন জখম হন। তাঁদের রায়গঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। জখমদের মধ্যে সাইদুর রহমান ও মহম্মদ কালিমুদ্দিন নামে দুই সিপিএম সমর্থকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের শরীরের নানা জায়গায় ধারাল অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। সংঘর্ষে জখম সিপিএমের রায়গঞ্জ উত্তর লোকাল কমিটির সদস্য দয়ানন্দ মাহাতো, দুই কংগ্রেস সমর্থক এবং পাঁচ তৃণমূল সমর্থকের শরীরের অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, “জমি নিয়েই তিন পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।”
পুলিশ জানায়, লক্ষ্মনীয়া শঙ্করপুর এলাকায় ৪০ শতক খাসজমি গত তিন দশক ধরে সিপিএম সমর্থকেরা নিজেদের দখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ। জমিতে যাতায়াতের রাস্তায় এলাকার কয়েকজন তৃণমূল সমর্থকের জমি রয়েছে। এ দিন জমি দখলকে কেন্দ্র করে তিন পক্ষে সংঘর্ষ হয়। জেলা তৃণমূল সভাপতি অমলবাবু আচার্য বলেন, “কংগ্রেস ও সিপিএম সমর্থকদের মদতে খাস জমির পাশের জমিতে বেআইনি নির্মাণ হয়। এ দিন আমাদের দলের সমর্থক প্রতিবাদ করায় কংগ্রেস ও সিপিএমের সমর্থকেরা হামলা চালায়।”
জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত বলেছেন, “আগে সিপিএম যা করত এই দিন তৃণমূল তাই করতে গিয়েছিল। কংগ্রেস কর্মীরা তা থামাতে গেলেও তাঁদেরও আক্রমণ করা হয়।” এ দিন হাসপাতালে জখম সমর্থকদের দেখতে গিয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদক বীরেশ্বর লাহিড়ি বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে পরিকল্পিকত হামলা চালানো হয়েছে।” |