টানা বৃষ্টিতে পোস্টার, ফেস্টুন, ফ্লেক্সের দফারফা হয়ে গিয়েছে অনেক জায়গাতেই। সব দলের প্রার্থীরা নেতাদের কাছে আরও পোস্টার, ফেস্টুন চাইছেন। সেই সঙ্গে বদলে ফেলছেন প্রচারের কৌশল। কেউ নৌকা খুঁজছেন। যাতে কোনও এলাকায় জল জমলে যাতায়াত করা যায়। অনেকেই ভাবছেন, তাতে একঢিলে দুই পাখি মারা যাবে। প্রচারও হবে আবার দুর্গতদের পাশেও দাঁড়ানো হবে। কেউ আবার ছাতা কিনে দিচ্ছেন প্রচারের নামা দলীয় কর্মীদের।
বর্ষার ভোটের সমস্যা নিয়ে কথা বললেন হেমকুমারী গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রার্থী এন্দাদুল হক প্রামাণিক। তাঁর কথায়, “সন্ধ্যাবেলায় একজনের বাড়িতে প্রচারে গিয়েছি। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল। প্রচার শেষ করে দিতে হল। এখন রোদ উঠেছে। তাই ফের জোরকদমে প্রচারের আশা করছি।” দলের হলদিবাড়ি ব্লকের সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ সিংহ জানান, নতুন করে পোস্টার, ফেস্টুন দেওয়া যাবে না। বাড়ি বাড়ি প্রচার হবে। সিপিএমের হলদিবাড়ি জোনাল কমিটির সম্পাদক রথীশ দাশগুপ্ত বলেন, “যে সমস্ত জায়গায় পোস্টার নষ্ট হয়েছে। সেখানে নতুন করে পোস্টার পাঠানো হবে।”
শুক্রবার পর্যন্ত ডুয়ার্সের ময়নাগুড়ি সহ নানা এলাকার চেহারা ছিল জল থইথই। অবিরাম বৃষ্টিতে জলমগ্ন হলেও গ্রামবাসীরা এবার অনেক আস্বস্ত। কারণ, কাউকে ডাকার আগেই হাজির হচ্ছেন নানা দলের নেতারা। ময়নাগুড়ির মাধবডাঙ্গা গ্রামে শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের আশপাশ নদীর চেহারা নিয়েছে হাঁটু জল দাড়িয়ে যায়। কামারপাড়া ও আনন্দনগরের বিস্তীর্ণ এলাকার লাতাগুড়ির কাছে ডাঙ্গাপাড়ায় জল ঢুকেছে। হাঁটু জল ভেভে বাড়ি বাড়ি ঘুরে কে কেমন পরিস্থিতিতে আছেন এটা জানার ফাঁকে ভোটার স্লিপ বিলির কাজ করছেন নানা দলের নেতা-কর্মীরা। সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য বিজয়বন্ধু মজুমদার বলেন, “খুব কষ্ট করে কাজ করতে হচ্ছে। দিনে জমিতে কাজ থাকে। তাই রাতে জলে ভিজে দলের কর্মীরা বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছেন। কোথায় কী পরিস্থিতি আছে খোঁজও নিতে হচ্ছে।” তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সহ সভাপতি সুভাষ বসু জানান, বৃষ্টির জন্য খুবই সমস্যা হয়েছে। শুধু তো ভোটের জন্য নয়, কে কোথায় কী অবস্থায় আছেন সেটাও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”
একই বক্তব্য সংযুক্ত কিষাণ সভার জেলা সম্পাদক বাচ্চামোহন রায়ের। তাঁর কথায়, “বুধবার বিকেল থেকে আকাশটা পরিষ্কার হয়েছে। গ্রামেগঞ্জে জমা জল তো নামেনি। তার মধ্যেই ভোটের কাজ চলছে।” ভোট চাইতে গিয়ে নেহাত কম কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে না। সুযোগ পেয়ে জলবন্দি এলাকার বাসিন্দারা নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। যেমন, ময়নাগুড়ি কামারপাড়ার বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলেছেন, জল বার হওয়ার জায়গা না করে কেন পাকা নালা করা হল? গ্রামের বাসিন্দারা মজে যাওয়া নদী কেন সংস্কারের ব্যবস্থা হয়নি তা জানতে চাইছেন। ওই সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিয়ে তবেই ভোট চাইতে হচ্ছে। ময়নাগুড়ি ব্লক কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ঘোষাল বলেন, “মানুষ অনেক কথাই বলছে আমরা যতটুকু সম্ভব বলছি।”
উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের নেতা-কর্মীরাও বৃষ্টি নিয়ে চিন্তিত। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দ বলেন, “বৃষ্টির জেরে রবিবার থেকেই বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে পদযাত্রা, বাড়ি বাড়ি প্রচার ও মিছিল করা সম্ভব হয়নি। তাই আমরা ঘরোয়া বৈঠক করে নির্বাচনী প্রচার সারছি।” জেলা বামফ্রন্টের সচিব অপূর্ব পাল জানান, তাঁরাও বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়ি বাড়ি প্রচারপত্র বিলি ও কর্মী সমর্থকদের বাড়িতে কর্মিসভা করার উপর জোর দিয়েছেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য বলেন, “বৃষ্টির জেরে দলের কর্মীর সমর্থকেরা রাস্তায় নেমে বাড়ি বাড়ি প্রচার চালাতে পারছেন না। তাই রায়গঞ্জের প্রতিটি এলাকায় দলের নেতা কর্মীদের বাড়িতে ছোট বৈঠক করে দুই বছরের রাজ্য সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে ধরে বাসিন্দাদের কাছে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।” |