বংশীহারিতে ভাঙল বাঁধ
দুর্গতদের সংখ্যা বাড়ছে, ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ
ত্তরবঙ্গে দুই জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। উল্টো নতুন করে ভাঙছে নদী বাঁধ। বাড়ছে দুর্গতদের সংখ্যা। তার সঙ্গে শুরু হয়েছে ত্রাণ নিয়ে বিক্ষোভ। রবিবার সকালে দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারী ব্লকের গাঙ্গুরিয়া অঞ্চলের দেউরিয়া এলাকায় টাঙন নদীর প্রায় ২৫ ফুট বাঁধ জলের তোড়ে ভেঙে ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শান্তিপুর, বলরামভিটা, বাজারীপুর, হাড়িদাড়া, বিশ্বনাথপুর, হরিপুর-সহ ১৫টি গ্রামের অন্তত ১০ হাজার মানুষ যোগাযোগ হারিয়ে জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের জমি ডুবে গিয়েছে। ত্রাণের দাবিতে এদিন বংশীহারীতে সকাল ১০টা থেকে বানভাসিরা রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। বিডিও এবং মহকুমাশাসক গিয়ে ত্রাণ বিলির আশ্বাস দিলে দুপুর দেড়টা নাগাদ অবরোধ ওঠে।
ত্রাণের দাবিতে রবিবার পথ অবরোধ বংশীহারিতে।—নিজস্ব চিত্র।
শনিবার রাতে কুশমন্ডিতে ত্রাণের দাবিতে পথ অবরোধ হয়। সর্বদল সভার সিদ্ধান্ত মেনে অবরোধ তুলতে গেলে বিক্ষোভকারীদের হাতে নিগৃহীত হন কুশমন্ডির আরএসপি বিধায়ক নর্মদা রায়। জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী বলেন, “বংশীহারী, তপন, গঙ্গারামপুর ও বংশীহারী ব্লকে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ১৮৫টি গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ১লক্ষ ২০হাজার বাসিন্দা। দুর্গতদের উদ্ধারে ১৫টি নৌকার পাশাপাশি ৩টি স্পিডবোট নামানো হয়েছে।” জেলাশাসক জানান, ১৫টি ত্রাণ শিবির খুলে ২৭ হাজার দুর্গতদের উদ্ধার করা হয়েছে। আড়াই হাজার শিশু-কিশোর ও মহিলাদের মধ্যে শুকনো, রান্না করা খাবার বিলি করা হচ্ছে।
কুশমন্ডি ব্লকের উদয়পুর অঞ্চলে টাঙন নদীর বাঁধ ভেঙে ২০টি গ্রামের মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। ঘরবাড়িতে জল। শনিবার ত্রাণের দাবিতে এলাকার প্রায় দু’হাজার বানভাসী কুশমন্ডির বিডিওকে ব্লক অফিসের মধ্যে রাত পর্যন্ত ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়। বিক্ষোভকারীদের বোঝাতে গিয়ে আরএসপি বিধায়ক নর্মদা রায় শারীরিকভাবে নিগৃহীত হন বলে অভিযোগ। বিক্ষোভকারীদের একাংশ তাঁকে ধাক্কাধাক্কি করেন বলে অভিযোগ। ওই বিক্ষোভকারীরা সিপিএম সমর্থক বলে আরএসপি কর্মীদের দাবি।
দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারির দেউরিয়া গ্রামে
টাঙন নদীর জলে ভেঙেছে বাঁধ।
মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের দৌলতনগর এলাকায়
ফুলহারের জল বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি।
বিধায়ক নর্মদা রায় বলেন, ‘‘ত্রাণসামগ্রী অপ্রতুল হওয়ায় মানুষ ক্ষুব্ধ ছিলেন। রাত ১১টা অবধি রাজ্য সড়ক অবরোধের জেরে ব্যাপক যানজট হয়। একাংশ সিপিএম সমর্থকেরা গন্ডগোল করে অবরোধ শুরু করেন। সেসময় তাঁদের বোঝাতে গেলে আমাকে ধাক্কাধাক্কি করা হয়।” স্থানীয় সিপিএম নেতা শ্যামল ঘোষ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
অন্য দিকে, তপন ব্লকের সুতল, বজ্রাপুকুর, শুকদেবপুর-সহ অন্তত ১২টি বানভাসি গ্রামের মানুষ উঁচু রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। তপনের গুড়ইল অঞ্চলের ঘটিকা সাধুরঘাট এলাকায় ২৫টি পরিবার জলবন্দি হয়ে মূল গ্রামের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এ দিন বালুরঘাটে আত্রেয়ী ও গঙ্গারামপুরে পুণর্ভবা নদীর জল কিছুটা কমলেও বংশীহারীতে টাঙন ফুঁসছে।
ত্রাণ সামগ্রী কম বলে অভিযোগ করে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের দৌলতনগর ও ভালুকা গ্রাম পঞ্চায়েতের বন্যাদুর্গতরা এদিন বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। ত্রিপল না পেয়ে মহানন্দা বাঁধের উপরই খোলা আকাশের নিচে গরু ,ছাগল নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে রাত কাটাতে হয়েছে কয়েক হাজার বাসিন্দাকে। ফুলহার নদীর জলে ভেসে যাওয়া শেখপাড়া, মারোয়ারি পাড়া, হাতিচাপা, মণ্ডলপাড়া, বাগানপাড়া, ঘোষপাড়া, সবজিপাড়ার বানভাসিরা এলাকার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।শনিবার সকালে ফুলহার নদীর জলের তোড়ে দৌলতনগর রিং বাঁধ ভাঙার ২৪ ঘন্টা কেটে যাওয়ার পরেও নৌকার অভাবে দৌলতনগর ও ভালুকা গ্রাম পঞ্চায়েতের দুর্গতদের উদ্ধার করতে পারেনি প্রশাসন। এখনও ওই দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের সব্জিপাড়া, বাগানপাড়া, মণ্ডলপাড়ায় হাতিচাপা, শেখপাড়ায় এক হাজারেরও বেশি বাসিন্দা জলবন্দি হয়ে রয়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হলেও শুকনো খাবার নেই বলে অভিযোগ। পর্যাপ্ত ত্রিপল না পৌঁছোনোয় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা রবিবার দুপুরে মালদহ থেকে যাওয়া গাড়ি থেকে নিজেরাই ৫০০ ত্রিপল বিলির আগেই ছিনিয়ে নিয়ে যান বলে অভিযোগ। জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমার বলেন, “২৪০০ পলিথিন বিলি করা হয়েছে। এখনও যে সমস্ত মানুষ জলবন্দি হয়ে আছে তাদের উদ্ধার করার জন্য আরও নৌকা পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
প্রশাসনির সূত্রের খবর, জেলার ফুলহার ও মহানন্দার নদীর বাঁধের ১৮টি স্থানে ক্ষতি হয়েছে। দ্রুত মেরামতির কাজ শুরু করতে রাজ্যে প্রাকৃতিক দূযোর্গ মোকাবিলা দফতরে ৩ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা চেয়ে আর্জি জানানো হয়েছে। সেচ দফতরের নিবার্হী বাস্তুকার সুজিত বসু বলেন, “এলাকাগুলি মেরামত করা প্রয়োজন।” গত ২৪ ঘন্টায় ফুলহার নদীতে ১২ সেন্টিমিটার জল কমলেও এখনও নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে জল বইছে। নদীতে লাল সতর্কতা এখনও জারি রয়েছে।
ডুয়ার্সের ঘিস ও চেল ও নেওড়া নদীতে জল বেড়েছে। নেওড়া নদীর জল মেটেলির বিধাননগর পঞ্চায়েতের ছাওয়াফুলি গ্রামে ঢুকে পড়েছে। ছাওয়াফুলি গ্রামের প্রায় ১০০ বিঘা ধানের জমিতে জল ঢুকেছে।
ছবি: অমিত মোহান্ত মনোজ মুখোপাধ্যায়।

পুরনো খবর:
হিমশিম প্রশাসন
বন্যা-ভোট দুই নিয়ে হিমশিম অবস্থা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসনে। তাঁরা বন্যা মোকাবিলার পাশাপাশি পঞ্চায়েত ভোট প্রস্তুতি নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। নির্বাচনী বিধিতে বিদায়ী পঞ্চায়েত প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের বন্যা মোকাবিলা-সহ ত্রাণ বিলির প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা যাবে না। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করে ত্রাণে ত্রিপল বিলি করতে গিয়ে শনিবার কুশমন্ডিতে বানভাসিদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিডিও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.