ফুলহার নদীর রিং বাঁধ ভেঙে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর দৌলতনগরের ১০ গ্রামের হাজার পঁচিশেক মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। শনিবার সকালে ওই বাঁধ ভেঙে যায়। প্রাথমিক তদন্তে সেচ দফতর জানতে পেরেছে, মাটির বাঁধে ইঁদুর প্রচুর গর্ত করেছিল। সেখানে জলস্ফীতির পরে বাঁধে ফাটল ধরে ধীরে ধীরে তা ভেঙে যায়। বাঁধ ভাঙা জলে শতাধিক গরু ও ছাগল ভেসেছে। ভেসে গিয়েছে সবচেয়ে বড় হাট গোবরা হাটের শতাধিক দোকান ও গুদামের বহু টাকার চিনি, গম, চাল, সিমেন্ট ও আনাজ পাতি।
কয়েক ঘন্টার মধ্যে দৌলতনগর, সবজিপাড়া, ঘোষপাড়া, বাগানপাড়া, মণ্ডলপাড়া, হাতিচাঁপা, মহলদারপাড়া, মারোয়ারিপাড়া, শেখপাড়ার জলে ডুবে যায়। গ্রামগুলিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিরুপায় হয়ে বাধের উপরেই গরুছাগল নিয়ে ত্রিপলের নীচে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকেই। এই দিন দুপুরে এলাকায় গেলে জেলাশাসক এবং হরিশ্চন্দ্রপুর ২-এর বিডিওকে ঘিরে বানভাসিরা বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, বিডিওর গাফিলতির জন্য বাঁধ ভেঙেছে। আধ ঘণ্টা বিক্ষোভের পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। জেলাশাসক কিরণ কুমার গোদালা বলেন, “গ্রামবাসীর অভিযোগ সত্যি হলে অভিযুক্ত বিডিওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুর্গতদের উদ্ধার করতে স্পিড বোট নামানো হয়েছে। পাঁচটি ‘ফ্লাড সেল্টার’ খোলা হচ্ছে।” |
হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকে দৌলতনগরে ফুলহার নদীর রিং বাধ আশির দশকে তৈরি করেছিল এলাকার পঞ্চায়েত। হাটের ব্যবসায়ী নন্দদুলাল মিত্র বলেন, “ইঁদুরের গর্ত দিয়ে ফুলহার নদীর জল ঢুকতে দেখে বিডিওকে ফোন করে বলেছিলাম ৫০০ বস্তা পাঠান। না হলে বাঁধ বাঁচানো যাবে না। কিন্তু বিডিও কথা শোনেননি।” হরিশ্চন্দ্রপুর ২-এর বিডিও কৌশিক পাল বলেন, “বাঁধের অবস্থা এতটা খারাপ আগে বুঝতে পারিনি। বুঝতে পারিনি ইঁদুরের গর্ত করে বাঁধ নষ্ট করে দিয়েছে।” সেচ দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার (মহানন্দা) সুজিত ঘোষ বলেন, “জেলাশাসক আমাদের ভাঙা বাঁধ মেরামত করার জন্য বলেছেন। কিন্তু এখন ফুলহারের জল যেভাবে বাড়ছে তাতে এখন বাঁধ মেরামত সম্ভব নয়।”
এ দিকে, উত্তর দিনাজপুরে কুলিক নদীর জলে উত্তর দিনাজপুরের কুলিক পক্ষীনিবাসের এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরে বংশীহারীতে টাঙ্গন নদীর জলে প্লাবিত জয়দেবপুর, কইলপাড়া, হালদারপাড়া এলাকা। আত্রেয়ী নদীর জল বেড়ে বালুরঘাট শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। বালুরঘাট শহরকে রক্ষা করতে সেচ দফতর ভাটপাড়ার স্লুইস গেট বন্ধ করে দিয়েছে। আত্রেয়ীর জলে ঢুকেছে পতিরাম এলাকার যামিনী মজুমদার মেমোরিয়াল কলেজ এবং লাগোয়া এলাকায়। জলমগ্ন হয়ে পড়ায় কলেজে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ফের কলেজ খোলা হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
শনিবার, দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী
জেলার প্লাবিত এলাকাগুলি পরিদর্শন করেন। জেলাশাসক বলেন, “জেলার চারটি ব্লকের ১৫০টি গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছেন। বহু কাঁচা বাড়ি ভেঙে গিয়েছে।” ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহের পাশাপাশি বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে বলে জেলাশাসক জানান। বাংলাদেশে টানা বৃষ্টির জেরে টাঙ্গনের জলে কুশমন্ডির উদয়পুর অঞ্চলের বাসুদেবপুর, মৌলাই, বলরামপুর, রামপুর সহ ৮টি গ্রামে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উত্তরবঙ্গে বাকি জেলার পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হচ্ছে।
|