ডুয়ার্স ও কোচবিহারে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও মালদহ ও দুই দিনাজপুরে বন্যার আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে।
মালদহের বামনগোলা ব্লকের মদনাবতীর কাছে পুনর্ভবা নদীর বাঁধ ভেঙে পার্বতীডাঙা, কুপাদহ, নন্দিনীটোলা, সোনঘাট গ্রামে জল ঢুকে পড়েছে। ফুলহার নদীর জলস্ফীতির ফলে হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকের ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কাওয়াডোল, মিঁয়াহাট, উত্তর ও দক্ষিণ ভাকুরিয়া, পারভালুকা গ্রামে জল ঢুকেছে। ফুলহারে সংরক্ষিত এলাকায় লাল সঙ্কেত জারি করেছে জেলা প্রশাসন। জল বাড়ছে গঙ্গা ও মহানন্দার নদীতেও। গঙ্গার জলস্তর বিপদ সীমা ২৪.৬৯ মিটার থেকে মাত্র ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছে। জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের পারভালুকা গ্রামের বুথ ও মানিকচকের কিসানটোলা গ্রামে বুথ তলিয়ে গিয়েছে। দুটি বুথ সরানোর আর্জি জানানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে।
|
দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর, তপন, কুশমন্ডি ব্লকে পুনর্ভবা নদীর বাঁধ ভেঙে ১৪৬ টি গ্রাম জলমগ্ন। গঙ্গারামপুরের বহু এলাকা এ দিনও জলমগ্ন ছিল। গঙ্গারামপুরের শয়রাপুর এলাকায় পুনর্ভবার পাড়ের রাস্তা ভেঙে গোটা এলাকা প্লাবিত হয়। জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী জানান, প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত ওই তিনটি ব্লকের ছ’টি জায়গায় বাঁধ ভেঙে নদীর জল ঢুকে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
উত্তর দিনাজপুরের নাগর নদীর জল ঢুকে লাগোয়া পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫০টি মৌজা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। জলবন্দি প্রায় ২০ হাজার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমির ধান ও সব্জি জলের তলে চলে গিয়েছে। প্রশাসনের তরফে জেলা জুড়ে ৪২টি ত্রাণ শিবির করা হয়েছে। নাগর, টাঙন ও কুলিক নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ইসলামপুরের স্টেট ফার্ম কলোনি সহ কয়েকটি এলাকায় জলমগ্ন হয়ে পড়ে। |
(বাঁ দিকে) নাগর নদীর জল ঢুকে প্লাবিত রায়গঞ্জের খারিসারিয়াবাদ প্রাথমিক স্কুল। শুক্রবার রোদের
দেখা পেয়ে ধান শুকোনো ময়নাগুড়ির সার্ক রোডে। ছবি: তরুণ দেবনাথ ও দীপঙ্কর ঘটক। |
বেহাল নিকাশির অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ প্রায় ১ ঘণ্টা ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “দুর্গত পরিবারগুলির মধ্যে পর্যাপ্ত ত্রাণ বিলি করা হয়েছে।” কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টা ডুয়ার্সের মালবাজারে ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অন্য সব এলাকাতে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “মৌসুমী অক্ষরেখার অবস্থানের কারণেই উত্তরবঙ্গে টানা বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সম্প্রতি অক্ষরেখা অবস্থান পরিবর্তন করায় বৃষ্টি কমেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।”
মালদহের জেলাশাসক কিরণ কুমার গোদালাও পরিস্থিতির অবনতি হওয়া উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, “গঙ্গা ও ফুলহার নদীর জলে ঢুলে প্লাবিত হওয়ার ফলে জেলার দুই ব্লকের দুটি বুথ স্থানান্তরিত করতে রাজ্য নিবার্চন কমিশনারের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। গঙ্গা, মহানন্দা, ফুলহারের জল যেভাবে বাড়ছে তাতে জেলার পাঁচ ব্লকে বেশ কিছু বুথ ডুবে য়াওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিডিওদের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।” তবে কোচবিহার ও ডুয়ার্সের ত্রাণ শিবিরগুলি ফাঁকা হতে শুরু শুক্রবার মাত্র ৫টি শিবির চালু রয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলাতেও অন্তত ৩৫টি শিবির খোলা হয়েছিল, যার অধিকাংশই বৃহস্পতিবার দুপুরেই ফাঁকা হয়ে যায়।
পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে মহাকরণও। ইতিমধ্যে ওই তিন জেলার বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপারে বিশদে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গের তিন জেলার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে।” |