জোড়া মোমবাতি দিয়ে শুরু। সূর্য, গাজর, মোমবাতি হয়ে এবার ঘাসফুল প্রতীকে দাঁড়িয়েছেন দিনহাটার মাতালহাটের কৃষ্ণকান্ত বর্মন।
প্রথমবার প্রার্থী হয়েছিলেন ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। তার পর লোকসভা, জেলা পরিষদ, বিধানসভা, প্রতি ভোটে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। তবে ২০০৮ সালে ‘অসুস্থতার কারণে’ ইচ্ছে থাকলেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেননি। সেটাই একমাত্র ব্যতিক্রম। এ বছর ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোচবিহার জেলা পরিষদের ২২ নম্বর আসনে ফের প্রার্থী হয়েছেন কৃষ্ণকান্ত বর্মন।
কৃষ্ণকান্তবাবু পেশায় যাত্রা সংগঠক। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে যাত্রার আসর বসাতে ডাক পড়ে তাঁর। যাত্রাপাড়ার একাধিক শিল্পীদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকার কারণে এলাকাতে তিনি জনপ্রিয়ও। সে ‘জনপ্রিয়তা’ যাচাই করতেই ২০০১ সালে প্রথমবার বিধানসভায় প্রার্থী হয়েছিলেন। সে বার পিডিএস প্রার্থী হিসেবে। তবে ভোটবাক্সে জনপ্রিয়তার ‘প্রমাণ’ মেলেনি। দু’বছর বাদে পিডিএসের সমর্থন নিয়েই ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদে প্রার্থী হয়েছিলেন। সে বারও হার। এর পরে ২০০৯ সালে লোকসভা ভোট। কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থন নিয়ে ভোটে লড়বেন না বলে স্থির করলেন কৃষ্ণকান্তবাবু। নির্দল হিসেবে মনোনয়ন জমা দিলেন। প্রতীক পেলেন ‘গাজর’। গ্রামে গ্রামে ‘গাজরের’ মালা পড়ে ঘুরে নিজের সমর্থনে ভোট চেয়েও বিফল হন। তিনি দমবার পাত্র নন। ২০১১ সালে নিজেই দল তৈরি করে ফেললেন কৃষ্ণকান্তবাবু। ‘নিউ বেঙ্গল ফোরাম’ নামে দল তৈরি করে জোড়া মোমবাতি চিহ্নে প্রার্থী হলেন তিনি। প্রতীক চেনাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে মিছিলও করেছিলেন। তবু ভোটবাক্স সে বারও নিরাশ করে তাঁকে।
এবারে পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা। শাসক দলের চিহ্ন নিয়ে ভোটের ময়দানে কৃষ্ণকান্তবাবু। কোচবিহার জেলা পরিষদের ২২ নম্বর আসনের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কৃষ্ণকান্তবাবু অনেকটাই প্রত্যয়ী এবছর। তিনি বললেন, “মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। জনপ্রতিনিধি হলে সেই সুযোগটা গণতান্ত্রিক কাঠামোয় অনেক বেশি। তাই বারবার ভোটে হেরে গেলেও লক্ষ্যে পৌঁছোতে চেষ্টাটা চালিয়ে যাচ্ছি। এবার ঘাসফুল ফুটবেই।”
জয়ের মুখ দেখতে মরিয়া কৃষ্ণকান্তবাবু দিন-রাত গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় পদযাত্রা-সভা করছেন। এমনকি টলিউডের কয়েকজন যাত্রা-তারকাকেও গ্রামে এনে প্রচার চালানোর পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু কৃষ্ণকান্তবাবুর মনে একটা সংশয় বাসা বেঁধেছে। তিনি গত চারবার ভোটে হেরেছেন। আর তাঁর যিনি অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী, ফরওয়ার্ড ব্লকের ভবেন বর্মন এ পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদে তিন স্তরেই যতবার ভোটে দাঁড়িয়েছেন, ততবারই জিতেছেন। ভোটে বারের মুখ না দেখা ভবেনবাবুও টানা প্রচার চালাচ্ছেন। সে কারণে এলাকায় এই দুই প্রার্থীর লড়াই বাড়তি মাত্রা পেয়েছে।
তবে ভোটের ময়দানে ব্যক্তিগত কুৎসা শুরু হওয়ায় কিছুটা ক্ষিপ্ত কৃষ্ণকান্তবাবু। বিভিন্ন সভায় তাঁর বিরুদ্ধে বেআইনি লটারির ব্যবসা চালানোর পুরোনো অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ও আদালতে মামলা চলার বিষয়টি তুলে ধরে প্রচার চালাচ্ছে ফরওয়ার্ড ব্লক। ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী ভবেনবাবু বলেন, “তিনবার ভোটে লড়ে তিনবারই জিতেছি। এবারেও মানুষের ভালবাসা পাব। সুষ্ঠু ভোট হলে জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।” ফরওয়ার্ড ব্লকের দিনহাটা জোনাল সম্পাদক বিশু ধর বলেন, “তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে বেআইনি লটারি চালানোর অভিযোগে মামলা রয়েছে। উনি গ্রেফতারও হয়েছিলেন। মানুষ সব জানেন।” কৃষ্ণকান্তবাবুর হয়ে উত্তর দিতে এগিয়ে এসেছেন কোচবিহারে তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, “ফরওয়ার্ড ব্লকের অনেক প্রার্থী তো খুনের অভিযোগে জেলে আছেন। আলু কেলেঙ্কারিতে, ধর্ষণ, লুঠের মামলায়ও অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে। ওরা বরং সেগুলি নিয়েই চিন্তাভাবনা করুন।” কৃষ্ণকান্তবাবুর কথায়, “অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে নাকি! যত সব বাজে কথা! ওসব কেউ শোনেন না। মানুষ আমার পাশে দাঁড়াবেন।” |