জ্যোতিপ্রিয় ও হামিদের কাছে সম্মানের লড়াই কুমড়া পঞ্চায়েত
হাবরা-১ পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা ফিরে পেতে কোমর বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সিপিএম তথা বামেরা। অন্য দিকে পিছিয়ে নেই শাসক তৃণমূলও। এখানে ভাল ফল করাটা কার্যত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কাছে। কারণ তিনি এখানকারই বিধায়ক।
গত বিধানসভায় হাবরা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে জ্যোতিপ্রিয়বাবু রাজ্যের মন্ত্রী হয়ে এখানকার মানুষের প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পেরেছেন তারও পরীক্ষা এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে হয়ে যাবে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত। আর সম্ভবত সেই বিষয়টি মাখায় রেখেই দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে হাবরার গ্রামীণ এলাকা চষে ফেলছেন তিনি।
কিন্তু প্রার্থী তালিকা তৈরি নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় দলের মধ্যেই ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বলে তৃণমূলের অন্দরমহলের খবর। বিশেষ করে কুমড়া ও বেড়গুম-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কয়েক জন প্রার্থীকে নিয়ে দলের একাংশ সন্তুষ্ট নন। প্রচারেও তাঁদের সে ভাবে দেখা যাচ্ছে না। অন্য দিকে বাম বিশেষ করে সিপিএম-এর মধ্যে দ্বন্দ্ব সে ভাবে প্রকাশ্যে আসেনি। ফলে লড়াই জমে উঠেছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে দু’পক্ষের প্রচার পাল্টা প্রচারে হাবরার রাজনীতি এখন সরগরম।
মেলেনি পাকা রাস্তা।
২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পঞ্চায়েত সমিতির ২১টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ১১টি আসন। বামেরা ৮টি। কংগ্রেস পেয়েছিল ২টি আসন। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন (১৯৭৮) চালু হওয়ার পর সে বারই প্রথম বামেরা সমিতিতে পরাজিত হয়। কারণ হিসেবে উঠে এসেছিল বিরোধীদের (কংগ্রেস-তৃণমূল) মহাজাট। সে বার কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে সরাসরি জোট বা আসন সমঝোতা না হলেও দু’দলের নিচু তলার নেতা-কর্মীরা জোট তৈরি করে নিয়েছিলেন। ওই জোট যে মানুষ মেনে নেবেন বাম নেতৃত্ব তা বুঝতে পারেননি। তা ছাড়া দলীয় অন্তর্ঘাতও সিপিএমের খারাপ ফল হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল বলে নেতৃত্ব জানিয়েছিল। হাবড়া-১ ব্লকের অধীন সাতটি গ্রামপঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূল ৫টি (পৃথিবা, রাউতারা, মছলন্দপুর-১ ও মছলন্দপুর-২ এবং বেড়গুম-২), সিপিএম একটি (বেড়গুম-১) ও কুমড়া গ্রাম পঞ্চায়েত পেয়েছিল কংগ্রেস। জেলা পরিষদের ২টি আসনের মধ্যে ২টিতেই অবশ্য জয়ী হয়েছিলেন সিপিএম প্রার্থীরা।
এ বার জেলাপরিষদের আসন বেড়ে হয়েছে ৩টি। প্রচারে কী বলছেন সিপিএম নেতৃত্ব? গত পাঁচ বছরে পঞ্চায়েত সমিতির ব্যর্থতাই বা কী? সিপিএম-এর দাবি, সংখ্যালঘু মানুষদের জন্য সরকারি প্রকল্পে বাড়িঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে খুবই কম। তপশিলি মানুষদের ক্ষুদ্র ব্যবসায় যে ঋণ দেওয়া হয় তা গত বছরে প্রায় মুছে গিয়েছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা ব্যাঙ্ক থেকে যাতে ঋণ পান সে বিষয়ে পঞ্চায়েত সমিতি উদ্যোগী হয়নি। সংস্কার করা হয়নি যমুনা নদী। হাবরা-১ পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএম-এর হাবরা জোনাল কমিটির সদস্য অসীম ঘোষ বলেন, ‘হর্টিকালচার দফতর থেকে চাষিদের ফুল ও ফল চাষের জন্য বহু টাকা সমিতিকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সমিতি ওই টাকা খরচ করতে পারেনি।
মিলেছে আর্সেনিকমুক্ত কল।
তৃণমূলের তরফে অবশ্য নির্বাচনী প্রচারে পাঁচ বছরের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরা হচ্ছে। মন্ত্রী হওয়ার পর হাবরা-১ ব্লকের জন্য বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয়বাবু কী কী উন্নয়ন করছেন বা ভবিষ্যত পরিকল্পনাই বা কী তা প্রচারে তুলে ধরছেন তৃণমূল নেতারা। সিপিএম-এর দাবি উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের পাল্টা দাবি, নিজ গৃহ নিজ ভূমি প্রকল্পে ব্লকের ২৮৮ জনকে ৪-৫ শতক করে জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছে। ৫ বছরে ৫৩ হাজার রেশন কার্ড বিলি করা হয়েছে। বিধায়ক তহবিল ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পক্ষ থেকে ২৭১টি আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের কল বসানো হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পিচের রাস্তা তৈরি হয়েছে। বিধায়ক তহবিলের টাকায় বেশ কিছু ক্লাবকে আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। তবে হর্টিকালচার বিভাগ থেকে দেওয়া অর্থ যে পড়ে রয়েছে তা স্বীকার করেছেন সমিতির বিদায়ী সভাপতি জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘১৭ লক্ষ টাকা সমিতিতে আছে এটা ঠিক। কী ভাবে ওই টাকা বণ্টন করা হবে তা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। জমির পরিমাপ চাষিরা যা বলেন, পরীক্ষা করে দেখা যায় তার চেয়ে কম জমিতে চাষ করেছেন। ফলে অর্থ দেওয়া যায়নি। ওই দফতরকে অর্থ ফিরিয়ে নিতেও বলেছিলাম।’’
পঞ্চায়েতে এখানে মোট আসন ১৬৩টি। তৃণমূলই একমাত্র গল যে সব এলাকায় প্রার্থী দিতে পেরেছে। এলাকার মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু আজও এখানে তৈরি হয়নি সরকারি হিমঘর। বহু রাস্তা আজও বেহাল। বৃষ্টিতে চলাচল করা যায় না। সমিতির সভাপতির পদ এ বার মহিলাদের (সাধারণ) জন্য সংরক্ষিত। জাকির এ বার নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। জিতলেও সভাপতি হতে পারবেন না। তা নিয়ে অবশ্য তাঁর হতাশা নেই। দল জিতলেই হল। তৃণমূলের অভিযোগ, পৃথিবা গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএম-কংগ্রেস নিজেদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি করেছে। স্থানীয় মারাকপুরে দুটি আসন রয়েছে। কংগ্রেস ও সিপিএম একটি করে আসনে প্রার্থী দিয়েছে। পৃথিবা পঞ্চায়েতে ২৮টি আসনের মধ্যে বামেরা দিয়েছে ২১টি আসনে প্রার্থী। বাকিগুলিতে নির্দল প্রার্থীদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ তারা সমর্থন করছে। যদিও অসীমবাবু জানিয়েছেন কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের কোথাও জোট হয়নি। এটা তৃণমূলের অপপ্রচার।
বেড়গুম-২ পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান তৃপ্তি সিংহ কুমড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী সদস্য রেখা মল্লিক, বেড়গুম-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী সদস্য রীতিকা তালুকদার এ বার তৃণমূলের টিকিট পাননি। রেখাদেবী পঞ্চায়েত সমিতির আসনে এবং রীতিকাদেবী পঞ্চায়েতের আসনে কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়িয়েছেন। যা তৃণমূলকে যথেষ্ট চিন্তায় রেখেছে। প্রার্থী বাছাই নিয়ে কুমড়া ও বেড়াগুম-২- তে সর্বসম্মত ভাবে বৈঠক হয়নি বলে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশের দাবি। যা কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে দলের কাছে। দলীয় সূত্রের খবর, কুমড়া গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়ানো রত্না বিশ্বাসকে হারানোর জন্য দলের কিছু নেতা সক্রিয়।
এই অবস্থায় কুমড়া গ্রাম পঞ্চায়েত জেতাকেই জ্যোতিপ্রিয়বাবু পাখির চোখ করেছেন। কারণ তৃণমূল এখানে কোনও দিন পঞ্চায়েত পায়নি। তা ছাড়া এক নম্বর ব্লকের মধ্যে এখানেই কংগ্রেস সবচেয়ে শক্তিশালী। এখানকার প্রবীণ কংগ্রেস নেতা আব্দুল হামিদ মণ্ডলকে কেন্দ্র করেই কংগ্রেসের যাবতীয় শক্তি। কংগ্রেস এ বার ২৯টি আসনের মধ্যে ২৬টিতে প্রার্থী দিয়েছে। প্রায় নব্বই ছুঁইছুঁই হামিদ অসুস্থ শরীরেই প্রচারে বের হচ্ছেন।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে হাবরার প্রার্থী হয়ে জ্যোতিপ্রিয়বাবু প্রথমেই হামিদের বাড়িতে গিয়ে আশীর্বাদ নিয়ে প্রচারে নেমেছিলেন। তাঁকে অসম্ভব শ্রদ্ধাও করেন খাদ্যমন্ত্রী। এমনকী হামিদকে দেওয়া সব প্রতিশ্রুতিও রেখেছেন তিনি। আর হামিদের কথায়, “জ্যোতিপ্রিয় নিয়মিত যোগাযোগ রাখে। আমাকে যথেষ্ট সম্মানও করে। যা বলেছিল তা করেছে। কিন্তু কংগ্রেস এবং হাত চিহ্ন ছাড়া আমি কিছু চিনি না। তাই প্রচারেও যাচ্ছি।’’ অন্যদিকে খাদ্যমন্ত্রীর কথায়, “উনি শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। নির্বাচনের আগে ওঁকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রেখেছি। ওঁর প্রতি শ্রদ্ধা থাকবে।’’
পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান বজায় রেখে এখানে শেষ হাসি কে হাসেন এখন সেটাই দেখার।

ছবি: শান্তনু হালদার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.