কামদুনির পর মুর্শিদাবাদের খোরজুনা ও রানিতলা। কামদুনির দেখানো পথেই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে দিল্লি রওনা হলেন ওই দুই এলাকায় ধর্ষণের পর খুন হওয়া এক মহিলা ও এক ছাত্রীর পরিবারের লোকজন। কামদুনির বাসিন্দাদের মতো তাঁদেরও আস্থা নেই রাজ্য পুলিশের উপর। সিবিআই তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি চাওয়ার পাশাপাশি ওই দুই এলাকার মানুষের দাবি, ব্যবস্থা নিতে হবে জেলা পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে।
দুই পরিবারের ন’জন ও এক প্রতিবেশী মোট ১০ জনের এক প্রতিনিধি রবিবার বিকেলে শিয়ালদহ থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসে দিল্লি রওনা হলেন। খোরজুনা ও রানিতলার বাসিন্দাদের এই দিল্লি সফরও জেলার সাংসদ তথা রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর সহায়তায়। |
রাজধানী এক্সপ্রেস বিকেলে ছাড়লেও শনিবার বেশ ভোরেই রওনা দিতে হয়েছেখোরজুনা ও রানিতলা থেকে। খোরজুনার ধর্ষিতা ও খুন হওয়া মহিলার ছেলে এখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। আর মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে। মা মারা যাওয়ার পর বাবা-ই ভরসা। বাবা দিল্লি যাবে শুনে ক’দিন ধরেই মুখ ভার মেয়ের। শনিবার ভোররাতে মেয়ের কান্না দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি ধর্ষিতার স্বামী। কিন্তু দিল্লি তাঁকে যেতেই হবে। তাই মেয়ের চোখের জল মুছিয়ে পরিবারের অন্যদের নিয়ে ভোর চারটে নাগাদ বেরিয়ে পড়েন বাস ধরতে। বাসে সাঁইথিয়ায় এসে সেখান থেকে বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জারে হাওড়া। সেখান থেকে শিয়ালদহ। দিল্লির ট্রেন ছাড়ার মুখেও ছোট্ট মেয়েটির চিন্তা মাথা থেকে তাড়াতে পারেননি তিনি। “মেয়েটা খুব ছোট। কিছু বোঝার আগেই মাকে হারিয়েছে। আমাকে ছেড়ে কোনও দিন থাকেনি। তাই খুব কাঁদছিল। পরে মেয়েই বলল, মাকে যারা মেরেছে, তাদের সাজা দিতেই হবে। তুমি যাও।” বলতে বলতে ছলছল করে দু’চোখ। মুখ নামিয়ে নেন ভদ্রলোক। ধর্ষিতার দাদা অভিযোগ করেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাদের ডাকে সাড়া দেননি। তাই রাষ্ট্রপতির কাছে যাচ্ছি। তিনি আগে আমাদের এলাকার সাংসদও ছিলেন।”
খোরজুনার ঘটনার পরে জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির দাবি করেছিলেন, ওই মহিলার সঙ্গে অভিযুক্তের সম্পর্ক ছিল। তাঁর এই মন্তব্যের পরেই এলাকার ক্ষুব্ধ মানুষজন আন্দোলন শুরু করেন। পুলিশকে এলাকায় ঢুকতেও বাধা দেন তাঁরা। |
দিল্লির পথে খোরজুনার পাঁচজনের এক প্রতিনিধি দল। সাঁইথিয়ায় অনির্বাণ সেনের তোলা ছবি। |
রানিতলায় নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর ক্ষতবিক্ষত দেহ পাওয়া গিয়েছিল পাট খেতে। পরিবারের অভিযোগ, ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে তাকে। ঘটনার ঠিক এক মাস পরে সুবিচারের আশায় এ দিন দিল্লি রওনা হলেন ওই ছাত্রীর মা, দাদা-সহ পরিবারের পাঁচ জন। বড় যন্ত্রণায় এই প্রথম বার ট্রেনে চাপলেন নিহত ছাত্রীর মা। তিনি বললেন, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রী এক জন মহিলা। ক্ষমতায় আসার আগে তিনি সব সময় ধর্ষিতার পাশে এসে দাঁড়াতেন। কিন্তু ঘটনার এক মাস পরেও তিনি আমাদের বাড়িতে আসেননি। খোঁজও নেননি। উল্টে পুলিশ আমাদেরই হুমকি দিচ্ছে।”
|