ভোটের মুখে মুর্শিদাবাদের ডোমকলের কুশাবাড়িয়ায় খুন হলেন নৌশাদ শেখ (২৯) নামে এক সিপিএম কর্মী। শনিবার রাত দশটা নাগাদ নৌশাদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে খুন করা হয়েছে। আহত হয়েছেন আর এক সিপিএম কর্মী বাবু শেখও। পঞ্চায়েত নির্বাচনের তৃতীয় দফায় মুর্শিদাবাদে ভোট সামনের ২২ জুলাই। মালদহেও ওই একই দিনে ভোট। সেখানে মদের বোতল দিয়ে আঘাত করে এক তৃণমূল কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগে সিপিএমের পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএমের এক প্রার্থী উদয় মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার ডোমকলের কুশাবাড়িয়ায় জনসভা করেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তারপর রাত দশটা নাগাদ কংগ্রেস কর্মীরা গ্রামেরই সিপিএম কর্মী বাবু শেখের বাড়িতে হানা দেয় বলে অভিযোগ। দলীয় কর্মীর বাড়ি আক্রান্ত হতে দেখে পড়শি নৌশাদ সেখানে ছুটে গেলে তাঁকে গুলি করা হয়। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। বাবু শেখকে পাইপগানের বাট দিয়ে মারধর করা হয়। তাঁকে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে সিপিএম সোমবার ১২ ঘণ্টা ডোমকল বন্ধের ডাক দিয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নারায়ণ দাস বলেন, “অধীরবাবুর সভার পরেই আমাদের কর্মীদের বাড়িতে চড়াও হয় কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। তাদের হানায় বাবু শেখ জখম ও নৌশাদ শেখের মৃত্যু হয়েছে।” কংগ্রেস অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ব্লক কংগ্রেসের সভানেত্রী শাঁওনি সিংহরায় বলেন, “সিপিএমই গণ্ডগোল শুরু করেছিল। পরে কংগ্রেস কর্মীরা প্রতিরোধ করতে ওই ঘটনা ঘটেছে।” |
অধীর বলেন, “আমি ভোটের প্রচারে গিয়েছিলাম। তারপরে আমি বেরিয়ে আসি। এরপরে কেন খুন, কীসের জন্য খুন, তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।” জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, পুলিশ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রামে পূলিশি টহলও চলছে। তাঁর দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব অভিযোগ করেন, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ জন এবং ২৯ মে থেকে ১৪ জন বামফ্রন্টের কর্মী খুন হয়েছেন। রবিবার তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, আমরা নাকি বামফ্রন্টের কর্মী খুনের ব্যাপারে অসত্য বলছি। কিন্তু আমরা তো নিহতের তালিকা দিচ্ছি।” রবীনবাবুর আরও অভিযোগ, তৃণমূল সরকারে যাওয়ার পর থেকে বামফ্রন্টের ১০৬ জন কর্মী নিহত হয়েছেন।
রবিবারও ডোমকলের মেহেদিপাড়ায় কংগ্রেস-তৃণমূলের মধ্যে মারামারিতে বোমাবাজি হয়। বোমা পড়ে মুড়ি-মুড়কির মতো। চলে গুলি। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন গোলাম শেখ নামে এক ব্যক্তি। তাঁকে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। কংগ্রেসের দাবি, জখম ব্যক্তি তাদের দলীয় কর্মী। কংগ্রেসের শাঁওনিদেবীর দাবি, “গোলাম আমাদের দলের সদস্য। তৃণমূল প্রশাসনের সহযোগিতায় আমাদের কর্মীদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে।” তবে মারামারিতে তাঁরা জড়িত নন বলে দাবি করেছেন তিনি। তৃণমূলের ডোমকল ব্লক কমলেশ সেনগুপ্ত বলেন, “কংগ্রেস বোমাবাজি করে ভোটে জিততে চায়। বাধা দেওয়াতেই আমাদের কর্মীকে মারধর করা হয়েছে।” ওই ঘটনার পর গ্রামে যায় পুলিশ। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পুলিশ নির্বিচারে তাদের উপর অত্যাচার করেছে। বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে। মারধরও করা হয়েছে। গ্রামের শ’খানেক মহিলা পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে ডোমকলের এসডিপিও অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান।
মালদহের মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম প্রার্থী উদয়বাবু শুক্রবার রাতে মদের বোতল দিয়ে মেরে তৃণমূল সমর্থক বাচ্চু ঘোষের মাথা ফাটিয়ে দেন বলে অভিযোগ। সিপিএমের পাল্টা অভিযোগ, শনিবার রাতে তাঁদের প্রার্থীর বাড়িতে তৃণমূল হামলা চালায়। এই ঘটনায় মানিকচকে উত্তেজনা তৈরি হয়। দলের প্রার্থীকে গ্রেফতারের খবর চাউর হতেই ওই রাতেই সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা মানিকচক থানায় বিক্ষোভ দেখান। পাল্টা অভিযোগের ভিত্তিতে বাবলু সাহা নামে এক তৃণমূল কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করায় বিক্ষোভ তুলে নেয় সিপিএম।
রবিবার ধৃত উদয়বাবু এবং বাবলুবাবুকে মালদহ জেলা আদালতে তোলা হলে তৃণমূল কর্মী জামিন পেলেও সিপিএম প্রার্থীকে ১৪ দিনের জেলা হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট দেবাশিস বিশ্বাস। জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের ভিত্তিতে দু’পক্ষের দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে।”
কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস ও সিপিএম সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠল উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ থানার মহিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষ্মনীয়া শঙ্করপুর এলাকা। রবিবার সকাল ১১টা নাগাদ সংঘর্ষে এক মহিলা-সহ তিন পক্ষের ১০ জন জখম হয়েছেন। তাঁদেরকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ জানাচ্ছে, জখমদের মধ্যে সাইদুর রহমান ও মহম্মদ কালিমুদ্দিন নামে দুই সিপিএম সমর্থকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পঞ্চায়েত ভোটের প্রেক্ষিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে সিপিআই (এমএল) লিবারেশনও। তাদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন এবং ভোটারদের প্রতি তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের হুমকি দুষ্কৃতীদের সন্ত্রাসে উৎসাহ জোগাচ্ছে। |