বিরোধী নয়, ভাবনা বিক্ষুব্ধ কাঁটা |
দুর্গ অটুট রাখাই চ্যালেঞ্জ তৃণমূলের |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
জমি আন্দোলনের সুবাদে গত পঞ্চায়েত ভোটে নন্দীগ্রাম-সহ পূর্ব মেদিনীপুরে সিপিএমের আলগা মাটিতে ঘাস ফুল ফুটেছিল তৃণমূলের। পাঁচ বছরে সেই ঘাস কতটা বাড়ল তারই পরীক্ষা আজ। পাশাপাশি পরীক্ষা ‘অধিকারী বাড়ির’ওপঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পূর্ব মেদিনীপুরে না-আসায় যা অন্য মাত্রা পেয়েছে।
এ বার পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায় দু’দফায় পাশের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে গিয়েছেন। পূর্ব মেদিনীপুরের উপর দিয়েই যেতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু এক বারও জেলার কোথাও পা রাখেননি তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের মনে এই নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে। মুখ্যমন্ত্রীর না আসা নিয়ে দু’টো মত শোনা যাচ্ছে। প্রথমটা হল, জেলায় সাংগঠনিক ভাবে দলের ভিত শক্ত রয়েছে বলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ভোটের প্রচারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। |
|
ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পথে। হলদিয়ার চকদ্বীপায় আরিফ ইকবাল খানের ছবি। |
আবার একাংশের মতে, নন্দীগ্রাম-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে অস্বস্তি রয়েছে দলে। সেই কোন্দলের পালে হাওয়া লেগে যাতে ভারসাম্য নষ্ট না হয়, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী তো বটেই, রাজ্য তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারাও জেলায় প্রচারে আসেননি। এই অবস্থায় পুরো ভারটাই এসে পড়েছে তৃণমূলের রাজ্য যুব সভাপতি শুভেন্দু অধিকারীর কাঁধে। আরও স্পষ্ট করে বললে অধিকারী বাড়ির উপরে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী অবশ্য বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এই জেলার মানুষ ও দলীয় নেতৃত্বকে বিশ্বাস করেন ও আস্থা রাখেন। তাই ভোটের সময় আসেননি। ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী এই জেলায় একাধিকবার এসেছেন। ভোটের পর ফের জেলায় আসবেন উন্নয়নের বার্তা নিয়ে।”
এ দিকে, ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে এখন জেলায় কার্যত নেতৃত্বহীন সিপিএম। নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ জামিন পেলেও জেলায় ঢোকা বারণ। তাঁর শূন্য স্থান পূরণ করতে জেলায় দলের সাংগঠনিক দ্বায়িত্বে এসেছেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব। প্রকাশ্যে ভোটের প্রচারে অবশ্য তাঁকে দেখা যায়নি। জেলায় ভোটের প্রচারে এসেছিলেন শুধু রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র ও গৌতম দেব। হাতে গোনা দু’তিনটে সভা করেছেন তাঁরা। ওই টুকুই। সিপিএম নেতৃত্বের মতে, পরিস্থিতি এখনও প্রকাশ্য সভা করার অনুকূল হয়নি। বরং দলের প্রার্থীদের হয়ে গোপনে বৈঠকে ও বাড়ি বাড়ি প্রচারে জোর দিচ্ছে সিপিএম। |
|
নন্দীগ্রাম কলেজ থেকে বুথের পথে। |
নন্দীগ্রাম, খেজুরি, মুগবেড়িয়ার মতো এলাকায় সেই প্রচারটুকুও করা যায়নি। সভা করবে কী, নন্দীগ্রাম-১, ২ খেজুরি-১, ২ ও ভগবানপুর -২ ব্লকে অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির আসনে দলীয় প্রতীকে প্রার্থীই দিতে পারেনি সিপিএম।
কাঁথি ১ ও ২ ব্লকেও তৃণমূলেরই পতাকা উড়ছে বেশি। কাঁথি ৩ ও রামনগর ব্লকে সিপিএমের সঙ্গে কিছুটা লড়াই হলেও পাল্লা ভারী তৃণমূলেরই। একই ভাবে এগরা, পটাশপুরের দু’টো ব্লকেও তৃণমূলের লোকেরাই যা প্রচার করার করছে। স্থানীয় এক সিপিএম কর্মী বলেন, “মনোনয়ন পর্বের শুরু থেকেই সন্ত্রাস করছে তৃণমূল। তারপরেও যে জায়গায় ওরা সুবিধা করবে না বুঝতে পারছে, সেখানে বুথ দখলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিরোধের মতো জায়গায় নেই আমরা। শেষ হাসি ওরাই হাসবে। এটা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।” |
|
এগরা ঝাটুলাল হাইস্কুলে ভোটকর্মীরা। ছবি: কৌশিক মিশ্র। |
সুতাহাটায় গত বার ভরাডুবি হয়েছিল বামেদের। এ বার অবশ্য হাওয়া ঘুরবে বলেই আশা করছে তারা। সিপিএমের বক্তব্য, হলদিয়ার শ্রমিকদের একটা বড় অংশ এখানে থাকে, যারা তৃণমূলের দাদাগিরিতে বিরক্ত। এবিজি’র কাজহারা শ্রমিকদের একটা অংশ আবার কংগ্রেসের হয়ে প্রচার করছে। এর উপরে রয়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। প্রার্থী বাছাই নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে দলের মধ্যে। বেশ কয়েকজন টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসাবে দাঁড়িয়েছেন। স্থানীয় বিধায়ক শিউলি সাহার অনুপস্থিতিও চোখে পড়ছে বড্ড বেশি করে। তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক তুষার মণ্ডল অবশ্য দাবি করেন, “জয় নিয়ে আমরা আশাবাদী। কোনও চিন্তা নেই।” হলদিয়া ব্লকে তুলনায় সিপিএমের প্রভাব বেশি। গত বার প্রবল ভরাডুবির সময়েও দেভোগ পঞ্চায়েতে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল সিপিএম। এ ছাড়াও চকদ্বীপা, দেউলপোতা, বাড়উত্তরহিংলিতে এখনও সংগঠন ধরে রেখেছে বামেরা। তবে তৃণমূলও আছে স্বশক্তিতে। আছে কংগ্রেস। এমনকী বিজেপি-রও সংগঠন আছে এখানে।
ভোট কাটাকাটির খেলাতেও পাল্লা ঝুঁকে কিন্তু তৃণমূলেই।
|
নজরে ত্রি-স্তর |
গ্রাম পঞ্চায়েত: ২২৩টি
পঞ্চায়েত সমিতি: ২৫টি
মোট ভোটার: ৩০ লক্ষ ৭৪ হাজার ৫৩৪
মোট বুথ:
৩৯৭৭টি
গ্রাম পঞ্চায়েত আসন: ৩৩৭৮
পঞ্চায়েত সমিতির আসন: ৬৬১
জেলা পরিষদের আসন: ৬০
|
|
মোট প্রার্থী |
গ্রাম পঞ্চায়েতে ৮৪৫৪ |
পঞ্চায়েত সমিতিতে ১৯২৫ |
জেলা পরিষদে ২৯৫ |
তৃণমূল ৩৩৩৩
বিজেপি ৫১৬
ফব ৩৫
সিপিআই ৩১৭
সিপিএম ২০৫০
কংগ্রেস ৮৫৭
আরএসপি ৪২
নির্দল ১৩০৪ |
তৃণমূল ৬৫৯
বিজেপি ১৬৯
ফব ৬
সিপিআই ৫৭
সিপিএম ৪৫৬
আরএসপি ৯
কংগ্রেস ২৬৭
নির্দল ৩০২ |
তৃণমূল ৬০
বিজেপি ৪৭
বামফ্রন্ট ৫৮
কংগ্রেস ৫৪
নির্দল ৭৬
|
|
গ্রাম পঞ্চায়েতে ৩৬১
(সবই তৃণমূল) |
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
জয়ী আসন |
পঞ্চায়েত সমিতিতে ৫৬
(সবই তৃণমূল)
|
২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ৩টি পঞ্চায়েত সমিতি ইতিমধ্যে তৃণমূলের দখলে। |
|
|