ভোটদানের হারে টেক্কা দিলেন মহিলারা
বিকেল চারটে থেকে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। বুথে ঢুকলেন রাত সাড়ে ন’টায়। টানা সাড়ে চার ঘণ্টার দীর্ঘ অপেক্ষা। তবু একবারও লাইন ছেড়ে যাননি সোনালি পাত্র। মেদিনীপুর সদর পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত মণিদহ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এই গৃহবধূর কথায়, “গেল বারও বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়াতে হয়েছিল। তবে এতক্ষণ নয়। অনেক মহিলাই তো দাঁড়িয়ে ছিলেন। এর মধ্যে একটা আনন্দও আছে।”
সোনালির মতো গাঁ-গঞ্জের মেয়ে-বউরা কিন্তু এ বার ভোটদানে পুরুষদের টেক্কা দিয়েছেন। হিসেব বলছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটদানের হারে মহিলারা এগিয়ে। জেলায় এ বার ভোট পড়েছে সব মিলিয়ে ৮৫.৯০%। এর মধ্যে পুরুষদের ভোটদানের হার ৮৪.৮৫%। আর মহিলাদের ভোটদানের হার ৮৭.০১%। ভোটদানে মহিলারা এই উৎসাহে খুশি শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই। তবে তাদের ব্যাখ্যা ভিন্ন রকমের।
পাহারায় স্ট্রং রুম। মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের বক্তব্য, “নানা প্রতিকূলতা তৈরি করা হয়েছিল। কত হুমকি, কত সন্ত্রাস, কত অত্যাচার। মহিলারা কোনও কিছুরই পরোয়া করেননি। বেশ কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা প্রতিরোধেরও চেষ্টা করেন।” জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষের বক্তব্য, “বহু দিন পর মহিলারা নিজের ভোট নিজে দিতে পারলেন। তাই তাঁরা উৎসবের মেজাজে ভোট দিয়েছেন।”
এ বার পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরে ৫০ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। ফলে, মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন, এমন অনেকেও প্রার্থী হয়েছেন এ বার। অনেকে মনে করছেন, ভোটদানে মহিলাদের এই আগ্রহের পিছনে এটাও একটা কারণ। যমুনা মাহাতো, শ্যামলী করের মতো ভোটারদের মতে, “এ বার প্রচুর মহিলা প্রার্থী ছিলেন। এটা ভাল দিক। এর ফলে মহিলাদের কাজ করার সুযোগ বাড়বে।”

এগিয়ে মেয়েরা
মোট ভোটার: ৩৪ লক্ষ ৭৬ হাজার ৮৪১ জন
ভোট দিয়েছেন: ২৯ লক্ষ ৮৬ হাজার ৫৭২ জন।
ভোটদানের হার: ৮৫.৯০%
পুরুষ ভোটার: ১৭ লক্ষ ৯৯ হাজার ২১৩ জন।
ভোট দিয়েছেন: ১৫ লক্ষ ২৬ হাজার ৮০১ জন।
ভোটদানের হার: ৮৪.৮৫%
মহিলা ভোটার: ১৬ লক্ষ ৭৭ হাজার ৬২৮ জন।
ভোট দিয়েছেন: ১৪ লক্ষ ৫৯ হাজার ৭৭১ জন।
ভোটদানের হার: ৮৭.০১%
(বিকেল ৫টার পরেও ভোটের লাইনে ছিলেন
১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৭৪১ জন)
চন্দ্রকোনার ভৈরবপুর, শালবনির কর্ণগড়ে
ভোটের দীর্ঘ লাইন। —নিজস্ব চিত্র।

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এ বার সব থেকে বেশি মহিলা ভোট দিয়েছেন কেশিয়াড়িতে, ৯১.৭৮%। সব থেকে কম মহিলা ভোট দিয়েছেন পিংলায়, ৮১.৩৪%। কেশপুর, গড়বেতা থেকে জঙ্গলমহল, জেলার চিরকালীন সন্ত্রাসের জায়গাগুলিতেও এ বার মেয়েদের ভোটদানের হার চোখে পড়ার মতো। গড়বেতা ১ ব্লকে ৮৫.৪৭%, গড়বেতা ২ ব্লকে ৮৮.৬৪%, কেশপুরে ৮৮.০৯%, নয়াগ্রামে ৮৯.২৪%, ঝাড়গ্রামে ৮৫.৬২% মহিলা ভোট দিয়েছেন।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, জেলার ২৯টি ব্লকের মধ্যে সর্বাধিক ভোট পড়েছে জঙ্গলমহলের সাঁকরাইলে, ৯০.৮৬%। এখানে মহিলাদের ভোটদানের হার ৯১.১১%। সব থেকে কম ভোট পড়েছে দাসপুর-২ ব্লকে, ৭৫.৫৫%। এখানে মহিলাদের ভোটদানের হার ৮৩.১৯%। জেলার নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দীপক ঘোষও মানছেন, “মহিলারা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভোট দিয়েছেন। এটা ভাল দিক।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.