ট্রেন্টব্রিজের মহানাটকীয় পাঁচ দিনের পর ক্রিকেট মহলে এখন একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ডিআরএস পদ্ধতি কি সত্যিই ক্রিকেটকে ত্রুটিমুক্ত করছে না আরও বড় বিতর্কের দিকে নিয়ে যাচ্ছে?
পাশাপাশি উঠে পড়েছে আরও একটা প্রশ্ন ট্রেন্টব্রিজের পর কি ডিআরএস নিয়ে ভারতীয় বোর্ডের হাত আরও মজবুত হল?
ট্রেন্টব্রিজ টেস্টে পাঁচ দিনে গোটা চোদ্দো সিদ্ধান্ত ডিআরএস নিয়মে তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়ার পরও দেখা যাচ্ছে, তার মধ্যে বেশ কয়েকটা আউট নিয়ে বিতর্ক থাকছে। কোথাও আবার নিয়মের জেরে রিভিউ চাইতে পারেননি ক্যাপ্টেনরা। এবং পরে দেখা গিয়েছে, মাঠের আম্পায়াররা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে অ্যাসেজের প্রথম টেস্টে বাইশ গজে যতটা না নাটক হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হয়েছে তৃতীয় আম্পায়ারের বক্সে। যার জেরে ডিন জোন্স থেকে গ্লেন ম্যাকগ্রা সবাই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন ডিআরএসের যৌক্তিকতা নিয়ে। |
আমাদের হাত শক্ত হল কি না, এই নিয়ে মন্তব্য করে অযথা জলঘোলা করতে চাই না। তবে এটা বলব, ডিআরএস নিয়ে আমাদের মনোভাব একই থাকছে, ভবিষ্যতেও হয়তো থাকবে। যদি আইসিসি ডিআরএসকে আরও উন্নত করে, তাহলে ভেবে দেখা যাবে।
—জগমোহন ডালমিয়া |
|
গত কয়েক বছর ধরে আইসিসি এবং বেশ কিছু প্রাক্তন ক্রিকেটার ডিআরএস নিয়ে ভারতীয় বোর্ডের মনোভাবকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। রবিবারের পর ছবিটা বদলালে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। শুরু থেকেই ডিআরএস নিয়ে অনমনীয় মনোভাব নিয়ে এসেছে ভারতীয় বোর্ড। আইসিসি বৈঠকে পরিষ্কার বলে এসেছে, যতক্ষণ না প্রযুক্তি একশো ভাগ নিখুঁত হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত ডিআরএসে কোনও ভাবেই হ্যাঁ বলা হবে না। রবিবার ভারতীয় বোর্ড মহলের মনোভাব হল, এত দিনে বোঝা গেল তো আমরাই ঠিক বলছিলাম?
এ দিন ভারতীয় বোর্ডের অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়াকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমাদের হাত শক্ত হল কি না, এই নিয়ে মন্তব্য করে অযথা জলঘোলা করতে চাই না। তবে এটা বলব, ডিআরএস নিয়ে আমাদের মনোভাব একই থাকছে, ভবিষ্যতেও হয়তো থাকবে। যদি আইসিসি ডিআরএসকে আরও উন্নত করে, তাহলে ভেবে দেখা যাবে।”
ম্যাকগ্রা তো এ দিন সরাসরি বলে দিয়েছেন, ডিআরএস পদ্ধতিতে পুরোপুরি বদল আনতে হবে। না হলে কখনওই ন্যায্য বিচার পাওয়া যাবে না। বিষেণ সিংহ বেদীর মতে, ডিআরএস পদ্ধতি যাঁরা চালনা করছেন, তাঁদের নিয়েই সংশয়ের মেঘ জমছে।
ডিআরএস নিয়মে এ দিন হাডিন আউট হওয়ার পরই সোশ্যাল সাইটে ক্রিকেটপ্রেমীদের একের পর এক বক্তব্য ভেসে ওঠে। কারও মন্তব্য, “এ বার তো বোঝা গেল, ভারতীয়দের ক্রিকেট বুদ্ধি বাকিদের থেকে কতটা বেশি।” কারও মজা, “ধোনি আর শ্রীনিবাসন নিশ্চয়ই এখন হাসাহাসি করছে।”
স্কোরবোর্ড বলছে, বাইশ গজের যুদ্ধে কুকের কাছে হার মানতে হল ক্লার্ককে। কিন্তু মাঠের বাইরের যুদ্ধে আইসিসি-ও হেরে গেল কি না, তা সময়ই বলবে।
|
প্রযুক্তির কাঁটায় আক্রান্ত অ্যাসেজ-রোমান্সও |
• ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, যখন খেলতাম ডিআরএস তখন ছিল না...আমি তো কোনও রানই করতে পারতাম না!
—ডিন জোন্স
• টেস্ট জীবিত! অজিরা হারার মতো খেলেনি। ইংল্যান্ড জেতার মতো। ডি আর এসের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের নিয়ে প্রশ্ন থাকছে।
—বিষেণ সিংহ বেদী
• ডিআরএস নিয়ে ক্লিয়ার কাট সিদ্ধান্ত চাই। এ রকম যেন না হয়, একবার আউট বলা হচ্ছে। এক বার নট আউট বলা হচ্ছে। অথচ দু’বারই বল লেগেছে। আর এলবিডব্লিউ নিয়ে ডিআরএসের নিয়ম বদলাতেই হবে...
—গ্লেন ম্যাকগ্রা
• ইংল্যান্ড খুব ভাল ডিআরএস-কে কাজে লাগিয়েছে। আমরা পারিনি।
—মাইকেল ক্লার্ক |
|
|
• জোনাথন ট্রট স্টার্কের বল পায়ে লাগে। আলিম দার এলবিডব্লিউ দেননি বল ব্যাটে লাগায়। রিভিউয়ে তৃতীয় আম্পায়ার আউট দেন। পরে জানা যায় ওই সময় হটস্পট ক্যামেরা কাজ করছিল না।
• ক্রিস ব্রড আগারের বলে স্লিপে ব্রডের ক্যাচ নেন ক্লার্ক। আলিম দার আউট দেননি। সেই সময় অস্ট্রেলিয়ার হাতে রিভিউ ছিল না। টিভি রিপ্লে দেখায় ব্রড পরিষ্কার আউট।
• জো রুট স্টার্কের বল প্যাডে লাগে। আম্পায়ার আউট দেননি। অস্ট্রেলিয়া ডিআরএস চায়। দেখা যায় বল মিডল-লেগে পড়লেও সুইং করেছিল, তাই নট আউট। কিন্তু একই ধরনের বলে রিভিউ চেয়ে আউট হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার রজার্স।
• অ্যাশটন আগার সোয়ানের বলে স্টাম্পিংয়ের আবেদন। ইংল্যান্ড ডিআরএস চায়। হটস্পটের ছবি অস্পষ্ট। বেনিফিট অব ডাউট পান আগার।
• ফিল হিউজ রিপ্লে দেখায়, সোয়ানের বল লেগস্টাম্প সামান্য ছুঁয়েছে। ফিল্ড আম্পায়ার ধর্মসেনা আউট না দিলেও তৃতীয় আম্পায়ার এলবিডব্লিউ সিদ্ধান্ত দেন।
• ব্র্যাড হাডিন অ্যান্ডারসনের বল কট বিহাইন্ডের আবেদন। আম্পায়ার আউট দেননি। কিন্তু ডিআরএসে আউট হন হাডিন। |
|