ব্র্যাড হাডিন না হয়ে তিনি যদি মহেন্দ্র সিংহ ধোনি হতেন, তা হলে ম্যাচটা ওখানেই শেষ হয়ে যেত না। দলটা অস্ট্রেলিয়া না হয়ে যদি ভারত হত, তা হলে তখনই তারা হেরে না গিয়ে জয়ের দিকে এগিয়ে যেতে পারত। ভারতীয় ক্রিকেটে ডিআরএস নিষিদ্ধ। কিন্তু রবিবার অ্যাসেজের প্রথম টেস্ট যে জিতলেন অ্যালিস্টার কুক, তাতে ডিআরএসের বড় ভূমিকা থেকে গেল।
অ্যান্ডারসনের বল হাডিনের ব্যাট ছুঁয়েছিল কি না, এই প্রশ্নের উত্তরের উপরই যখন নির্ভর করছিল ট্রেন্টব্রিজ টেস্টের ফয়সালা, তখন পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দার আবার ভুল করে বসলেন। স্টুয়ার্ট ব্রডের মতো এ দিন হাডিনের আউটও নাকচ করে দেন তিনি। সে দিন ক্লার্কের হাতে আর রিভিউ বাকি না থাকলেও এ দিন কুকের ছিল। খেলার শেষে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক তো বলেও গেলেন, “এই টেস্টে ওরা ডিআরএস ব্যবহারে আমাদের চেয়ে এগিয়ে ছিল।” |
চিরশত্রু বধ
হাডিনের আউটের পরে ইংরেজদের উল্লাস। ছবি: এপি |
কুক রিভিউ চাইলেন বটে, কিন্তু হটস্পট দেখেও প্রথমে পরিষ্কার ছিল না অ্যান্ডারসনের বল হাডিনের ব্যাট ছুঁয়ে কিপারের হাতে গিয়েছে কি না। শেষ পর্যন্ত টিভির ‘অডিও-এনহ্যান্স’ প্রযুক্তির সাহায্য নিলেন তৃতীয় আম্পায়ার মারায়েস এরাসমাস। সেই মুহূর্তের ছবির আওয়াজ বাড়িয়ে দেখা গেল ব্যাটে-বলে হওয়ার আওয়াজ রয়েছে। তার পরই সিদ্ধান্ত, হাডিন আউট। তৃতীয় আম্পায়ার যা ব্যবহার করতে পারেন না, সেই স্নিকোমিটারও দেখিয়েছে হাডিন আউট।
অস্ট্রেলিয়া তখন জয় থেকে মাত্র ১৫ রান দূরে। এবং অসমসাহসী যুদ্ধের পরে হাডিনের মুহূর্তের ভুলে অজিদের স্বপ্নভঙ্গ।
মাঠ ছেড়ে যখন বেরিয়ে আসছেন ব্র্যাড হাডিন, প্রবল বিষণ্ণ, অবসাদগ্রস্ত দেখাচ্ছিল তাঁকে। অথচ একটা সময় পর্যন্ত বোঝা যায়নি এ ভাবে ট্র্যাজিক নায়ক হয়েই থেকে যেতে হবে অস্ট্রেলীয় উইকেটকিপারকে। বরং হাডিন (৭১) ও জেমস প্যাটিনসনের (২৫ নট আউট) মরণপণ লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে তো ফিরেছিল বটেই, নিশ্চিত হারের টেস্টেও জয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল। ১৯৮২-তে মেলবোর্নে অ্যালান বর্ডার-জেফ টমসনের শেষ উইকেট জুটি যেমন জয় থেকে তিন রান দূরে মুখ থুবড়ে পড়েছিল, ২০০৫-এ এজবাস্টনে যেমন মাইকেল কাসপ্রোভিচের আউট ইংল্যান্ডকে দু’রানে জিতিয়ে দিয়েছিল, রবিবার তেমনই এক নাটকীয় টেস্ট জয় দেখল ইংরেজ ক্রিকেটপ্রেমীরা। যা দেখে রবিচন্দ্রন অশ্বিন টুইট করলেন, “এই টেস্টের চিত্রনাট্য লিখেছেন যিনি, তাঁর অস্কার পাওয়া উচিত।”
জেমস অ্যান্ডারসনের টেস্টে দশ উইকেট। অ্যাশটন আগারের রাজকীয় উত্থান। ম্যাচ থেকে হারিয়ে গিয়েও অস্ট্রেলিয়ার মহানাটকীয় ভাবে ফিরে আসা। সমর্থককুলের রক্তচাপ বাড়িয়ে একেবারে শেষ মুহূর্তে অ্যান্ডারসন-ম্যাজিকে ইংল্যান্ডের জয়। ওয়ান ডে- টি-টোয়েন্টির থরথরে উত্তেজনার যুগে টেস্ট ক্রিকেটের যা বিজ্ঞাপন হওয়া উচিত, ট্রেন্টব্রিজ টেস্টে সবই ছিল। কিন্তু সব কিছু সত্ত্বেও ডিআরএস নামক কাঁটায় অ্যাসেজ-রোমান্সকেও যে এ ভাবে আক্রান্ত হতে হবে, কে জানত! |