গণতন্ত্রের মহাযজ্ঞে আজ জমি আন্দোলনের জেলা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • চুঁচুড়া |
কেন্দ্রীয় বাহিনী হাজির। তৈরি রাজ্য পুলিশ। প্রশাসনও। গ্রামীণ হুগলিতে আজ, সোমবার পরীক্ষায় বসতে চলেছে শাসক ও বিরোধী শিবির।
আজ পঞ্চায়েত ভোট হুগলিতে। জেলা পরিষদ কি তৃণমূল দখল করতে পারবে? নাকি, তা থেকে যাবে বামেদের হাতেই! গত বার জেলার ১৮টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ১৩টি ছিল সিপিএমের। পাঁচটি তৃণমূলের। ২০৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৪১টি বামেদের। বাকি ছিল বিরোধীদের দখলে। এই সমীকরণ কতটা বদলাবে? এ সব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আজ ভোটের লাইনে দাঁড়াবেন জেলার ২৮ লক্ষ ৫৯ হাজার ৬৫২ জন ভোটদাতা।
গত লোকসভা ভোটে কলকাতার কাছাকাছি যে কেন্দ্রটিতে সিপিএম ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছিল সেটা হুগলির আরামবাগ। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের সময়ে অন্য অনেক জেলার মতো হুগলিতেও সিপিএমের ভোটব্যাঙ্কে ধস নামে। গোঘাট এবং পাণ্ডুয়া ছাড়া আর কোনও বিধানসভা কেন্দ্রই ধরে রাখতে পারেনি বামেরা। তার পর থেকে এই জেলায় তৃণমূলের প্রভাব ক্রমশ বেড়েছে। দু’মাস ধরে বিরোধীরা ক্রমাগত শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের আওয়াজ তুলে আসছে। শাসক দল অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে প্রত্যাশিত ভাবেই। |
ভোটকেন্দ্রের পথে। রবিবার আরামবাগে মোহন দাসের তোলা ছবি। |
শাসক দল গুরুত্ব না দিলেও আরামবাগ মহকুমা-সহ জেলার বিস্তীর্ণ অংশে বিচ্ছিন্ন ভাবে হলেও বিরোধী দলগুলির কর্মী-সমর্থকেরা আক্রমণের লক্ষ্য হয়েছেন। বাম আমলে এক দশকেরও বেশি সময় জুড়ে মূলত আরামবাগ মহকুমায় নির্বাচনে বিরোধীরা সামিল হতে পারত না। তখন বিরোধীদের উপরে হামলা, হুমকি, মারধরের অভিযোগ উঠত বামেদের বিরুদ্ধেই। বহু বিরোধী নেতা-কর্মী গ্রামছাড়া থাকতেন। বামেরা ভোটগুলিতে কার্যত ‘ওয়াকওভার’ পেয়ে যেত। এ বার পঞ্চায়েত ভোটের আগেও পরিস্থিতিটা বদলায়নি। বদলেছে শুধু রাজনৈতিক সমীকারণটাই। এ বার শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রামছাড়া করে রাখার অভিযোগ তুলেছে বামেরা।
পঞ্চায়েত ভোটে খানাকুলের দু’টি ব্লকে কোনও প্রার্থীই দিতে পারেননি বামেরা। গোঘাট ব্লকেও পরিস্থিতি প্রায় একই। নানা মামলায় জড়িয়ে সেখানকার নেতাকর্মীদের অনেকেই নিয়মিত থানায় হাজিরা দিচ্ছেন নিয়ম করে। ভোট প্রক্রিয়ায় তাঁরা অংশ নিতে পারছেন না। আরামবাগ ব্লকে তুলনায় পরিস্থিতি কিছুটা ভাল। মহকুমায় একমাত্র পুড়শুড়া ব্লকে তৃণমূল, কংগ্রেস এবং সিপিএম প্রায় সমানে সমানে টক্কর দিচ্ছে। এই ব্লকে তাই সব দলেরই প্রচার দেখা গিয়েছে।
তারকেশ্বর, জাঙ্গিপাড়া, ধনেখালি এবং হরিপাল ব্লকেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। এইসব জায়গায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সিপিএম। জেলা কংগ্রেস সভাপতি দিলীপ নাথের অভিযোগ, “তৃণমূল বুঝেছে অবাধ নির্বাচন হলে ওদের সমূহ বিপদ। তাই চতুর্দিকে সন্ত্রাস করেছে। মারধর, বোমাবাজি করে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সব জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিতে ভোট হলে তৃণমূলের বেলুন চুপসে যাবে।”
জেলা তৃণমূল কার্যকরী সভাপতি অবশ্য দাবি করেছেন, “সন্ত্রাসের অভিযোগ মিথ্যা।” তাঁর দাবি, “পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাওয়াতেই বিরোধীরা মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে। গ্রামাঞ্চলে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। মানুষ আমাদের পাশেই আছেন।”
তৃণমূলের এই দাবি কতটা ঠিক, আজ তারও পরীক্ষা।
|