সম্পাদকীয় ২...
বই খাতা কলম
পাকিস্তানের সোয়াট উপত্যকার অন্তত ৮০০টি স্কুলে যখন তালিবানি জঙ্গিরা হামলা চালাইয়া মেয়েদের স্কুলে পড়ার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করিয়াছে, তখন খুন হওয়ার ঝুঁকি লইয়াও মালালা ইউসুফজাই রুখিয়া দাঁড়ায়। এই অসমসাহসী বালিকা কেবল নিজে পড়াশোনা করার প্রতিজ্ঞায় অটল থাকে নাই, সঙ্গীসাথীদেরও সে প্রাণিত করে। তাহার ষোড়শ জন্মদিনটিকে স্মরণীয় রাখিতে রাষ্ট্রপুঞ্জ গত শুক্রবার ‘মালালা দিবস’ হিসাবে উদ্যাপন করে। এই কিশোরী তাহার ভাষণে বিশ্বের সকল বালিকাকেই বই-খাতা-কলম হাতে তুলিয়া লওয়ার আহ্বান জানাইয়াছে। তাহার মতে লেখাপড়ার কোনও বিকল্প নাই, শিক্ষাই কুসংস্কারের অন্ধকার দূর করিতে পারে এবং বই-খাতাই সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী অস্ত্র, জঙ্গি রাইফেলের বুলেট যাহাকে স্তব্ধ করিতে পারে না। নিজের জীবন দিয়া উপলব্ধ এই শিক্ষা বিশ্বময় ছড়াইয়া দিতে মালালা কৃতসঙ্কল্প।
পাকিস্তানের যদি মালালা, ভারতের তবে রাজিয়া সুলতান। কাহিনি এক নহে, কিন্তু লক্ষ্য অভিন্ন। দশ বৎসর বয়সেই উত্তরপ্রদেশের মেরঠ জেলার এই বালিকাটি দারিদ্রের কারণে পশু-চর্ম সেলাই করিয়া ফুটবল তৈয়ারির কারখানায় নিযুক্ত হয়, তাহারই মতো আরও অনেক বালিকার সঙ্গে। সাত মাস ধরিয়া এই মজদুরি করিবার পর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই শিশু-শ্রমিককে উদ্ধার করিয়া লেখাপড়া শেখায়। ষোড়শবর্ষীয়া রাজিয়া এখন নিজেই কেবল দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী নয়, গ্রামের বহু দরিদ্র পরিবারকে বুঝাইয়া-সুঝাইয়া সে মেয়েদের স্কুলে পাঠাইতে পারিয়াছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ তাহাকেও সম্মানিত করিয়াছে।
উপমহাদেশের এই দুই ষোড়শবর্ষীয়া কিশোরী দক্ষিণ এশিয়ার বৈষম্যমূলক পিতৃতন্ত্রকে অনেক কিছু শিখাইতে পারে, শিখাইতেছে। মালালা যদি ইসলামি মৌলবাদ ও তাহাতে দীক্ষিত তালিবান পুরুষতন্ত্রকে নারীশিক্ষার উপযোগিতা শিখাইতে সচেষ্ট হয়, রাজিয়া তবে হরিয়ানার খাপ পঞ্চায়েতের মাতব্বরদের শিখাইতে পারে নারীর সমানাধিকারের তত্ত্ব। তবে কী তালিবান, কী খাপ-মাতব্বরগণ, কেহই শিক্ষাগ্রহণে প্রস্তুত, এমন প্রমাণ নাই। নারীকে শিক্ষা ও জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করিয়া পুরুষের সমান সুযোগসুবিধা নাগালে আনিয়া দিতে রক্ষণশীল পুরুষতন্ত্রের আপত্তি বরাবরের। মালালা ইউসুফজাই এবং রাজিয়া খাতুন সেই প্রতিক্রিয়াশীল, সামন্ততান্ত্রিক নারী-ভাবনার বিরুদ্ধেই মূর্তিমান প্রতিবাদ। রাষ্ট্রপুঞ্জ এই প্রতিবাদকে গুরুত্ব দিয়া ইহাই বুঝাইতে চায় যে, এই দুই সাহসিনীর আপসহীন সংগ্রামের পথই অর্ধেক আকাশকে আলোকিত করার পথ। সেই পথ ও তাহার পথিকদের অভ্যর্থিত না করিলে ভবিষ্যতে নারীর ক্ষমতায়নের সম্ভাবনা বিকশিত হইবে না। বন্দুকের নল নয়, কলমের কালি এবং পুস্তকের মুদ্রিত অক্ষরমালার উপরেই তাহাদের ভরসা। এই দুই অস্ত্রেই তাহারা আগুন ও তরবারির মুখোমুখি দাঁড়াইয়াছে। সমাজ কি তাহাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াইবে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.